ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে পাকিস্তানের টানা ‘১০’

আগের ম্যাচে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল এবার। ইমাম উল হক ও বাবর আজমের ফিফটির পর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। অনায়াস জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতে ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2022, 06:36 PM
Updated : 10 June 2022, 07:19 PM

মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের জয় ১২০ রানে। ২৭৫ রানের পুঁজি গড়ে ক্যারিবিয়ানদের তারা গুটিয়ে দেন স্রেফ ১৫৫ রানে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা ১০টি ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। ক্যারিবিয়ানরা সবশেষ সিরিজ জিতেছিল ১৯৯১ সালে, যখন ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।

পাকিস্তানের হয়ে ৯৩ বলে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন অধিনায়ক বাবর। ৭২ বলে ৭২ রান আসে ইমামের ব্যাট থেকে।

পরে হাত ঘুরিয়ে ১০ ওভারে স্রেফ ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার নওয়াজ। ২০১১ সালে মোহাম্মদ হাফিজের পর এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো বোলার ওয়ানডেতে ১০ ওভারের কোটা শেষ করে ২০ এর কম রান দিলেন।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো ছিল না। ১৭ রান করে সপ্তম ওভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ফখর জামান।

অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় যথারীতি আবারও বড় জুটি গড়ে তোলেন ইমাম ও বাবর। ইমাম ৫২ বলে পূরণ করেন ফিফটি। এই সংস্করণে টানা ছয় ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

১২০ রানের জুটি ভাঙে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে ইমামের রান আউটে। ৬টি চারে গড়া তার ৭২ রানের ইনিংসটি।

ওয়ানডেতে টানা চার ও সব মিলিয়ে আটটি শতরানের জুটি হলো ইমাম ও বাবরের। এই সংস্করণে পাকিস্তানের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি শতরানের জুটি আছে কেবল মোহাম্মদ ইউসুফ ও ইউনিস খানের, ৯টি।

৬৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বাবর ছুটছিলেন ওয়ানডেতে কুমার সাঙ্গাকারার টানা চার সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডের দিকে। কিন্তু ২৩ রানের জন্য পারেননি তিনি। ৫ চার ও একটি ছক্কায় সাজানো ৭৭ রানের ইনিংস থামে স্পিনার আকিল হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।

ওয়ানডেতে ইমাম উল হক ও বাবর আজমের শতরানের জুটি হলো আটটি। ছবি: পিসিবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি টানা ৯ ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার রেকর্ড অবশ্য ঠিকই গড়েন তিনি। পেছনে ফেলেন স্বদেশী জাভেদ মিয়াঁদাদকে, ৮টি।

বাবরের বিদায়ে এলোমেলো হয়ে যায় পাকিস্তান। ২ উইকেটে ১৮৭ থেকে দ্রুতই তাদের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ২০৭। মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও নওয়াজ টিকতে পারেননি।

শাদাব খান ও প্রথম ম্যাচে ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জেতানো খুশদিল শাহ দুই জনই ফেরেন ২২ রান করে। এরপর মোহাম্মদ ওয়াসিমের ১৩ বলে ১৭ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ৬ বলে ১৫ রানের অপরাজিত দুটি ইনিংসে পৌনে তিনশ করতে পারে স্বাগতিকরা।

৫২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার আকিল। আলজারি জোসেফ ও অ্যান্ডারসন ফিলিপ নেন ২টি করে উইকেট।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শেই হোপকে বিদায় করে দেন আফ্রিদি।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে কাইল মেয়ার্স ও শামার ব্রুকসের দারুণ জুটি লড়াইয়ে রাখে সফরকারীদের। দুই জনই খেলেন দারুণ সব শট।

কিন্তু ৫৪ বলে ৬৭ রানের জুটি ভাঙতেই পথ হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়ানরা। ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৩ রান করা মেয়ার্সকে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।

এরপর বাঁহাতি স্পিনার নওয়াজ একে একে বিদায় করেন ব্রান্ডন কিং (০), ব্রুকস (৪২), রভম্যান পাওয়েল (১০) ও নিকোলাস পুরানকে (২৫)। রোমারিও শেফার্ডকে টিকতে দেননি লেগ স্পিনার শাদাব।  

এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ৭১ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১২০! এরপর পরাজয়ের ব্যবধানই কেবল কমাতে পারে তারা। শেষ ৩ উইকেট হারায় ১০ রানের মধ্যে।

ওয়াসিম ৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ৪০ রানে শাদাবের প্রাপ্তি ২টি।

এই জয়ে রান রেটে ক‍্যারিবিয়ানদের পেছনে ফেলে ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে চার নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান (৮০)। তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে কেবল বাংলাদেশ (১২০), আফগানিস্তান (১০০) ও ইংল‍্যান্ড (৯৫)।

আগামী রোববার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৭৫/৮ (ফখর ১৭, ইমাম ৭২, বাবর ৭৭, রিজওয়ান ১৫, হারিস ৬, নওয়াজ ৩, শাদাব ২২, খুশদিল ২২, ওয়াসিম ১৭*, আফ্রিদি ১৫*; জোসেফ ১০-১-৩৩-২, মেয়ার্স ৩-০-২৪-০, ফিলিপ ৮-০-৫০-২, শেফার্ড ৫-১-২৭-০, পাওয়েল ৪-০-২৪-০, ওয়ালশ ১০-০-৬২-০, আকিল ১০-০-৫২-৩)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩২.২ ওভারে ১৫৫ (হোপ ৪, মেয়ার্স ৩৩, ব্রুকস ৪২, কিং ০, পুরান ২৫, পাওয়েল ১০, আকিল ১৪*, শেফার্ড ১, জোসেফ ৬, ওয়ালশ ১, ফিলিপ ১; আফ্রিদি ৪-১-১৭-১, রউফ ৫-১-৩০-০, ওয়াসিম ৪.২-০-৩৪-৩, নওয়াজ ১০-০-১৯-৪, শাদাব ৯-১-৪০-২)

ফল: পাকিস্তান ১২০ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে  এগিয়ে পাকিস্তান

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নওয়াজ।