মিলার-ফন ডাসেনের ঝড়ে ভারতের জয়রথ থামাল দ. আফ্রিকা

দুজনে চতুর্থ উইকেটে যখন জুটি বাঁধলেন, তখনও ৬৮ বলে দলের প্রয়োজন ১৩১ রান। ভীষণ কঠিন সমীকরণ। খুনে ব্যাটিংয়ে সেটিকেই ডেভিড মিলার ও রাসি ফন ডার ডাসেন বানিয়ে ফেললেন কত সহজ! তাদের বিস্ফোরক এক জুটিতে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 05:07 PM
Updated : 9 June 2022, 06:36 PM

দিল্লিতে বৃহস্পতিবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৭ উইকেটে। ২১২ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ৫ বল বাকি থাকতে।

এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নতুন রেকর্ড এটি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল আগের রেকর্ড।

মাত্র ৬৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৩১ রানের জুটিতে দলের জয় নিয়ে ফেরেন মিলার ও ফন ডাসেন। মিলার আইপিএলের দারুণ ফর্ম জাতীয় দলেও টেনে এনে ৩১ বলে ৫ ছক্কা ও ৪টি চারে করেন ৬৪ রান। ম্যাচ সেরাও তিনিই। ৪৬ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৭৫ রান করেন ফন ডাসেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউ জিল‍্যান্ডের বিপক্ষে হারার পর থেকে এই সংস্করণে ছুটছিল ভারতের জয়রথ। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করে টানা সবচেয়ে বেশি ১২ জয়ের রেকর্ডে আফগানিস্তান ও রোমানিয়ার পাশে বসে তারা। নতুন উচ্চতায় ওঠার হাতছানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেমে উল্টো থেমে গেল তাদের জয়রথ।

এই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে ভারতের তিন সংস্করণের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও জাসপ্রিত বুমরাহকে। যার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেই লোকেশ রাহুল চোটে ছিটকে যান সিরিজ শুরুর আগের দিন। নেতৃত্বভার পড়ে রিশাভ পান্তের কাঁধে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের নেতৃত্বের অভিষেকটা ভালো হলো না।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন ইশান কিষান। ছবি: বিসিসিআই

একটা সময় যদিও সবকিছু ভারতের অনুকূলেই ছিল। ইশান কিষানের ফিফটি এবং পান্ত ও হার্দিক পান্ডিয়ার ক্যামিওতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে তারা। বোলিংয়েও শুরুটা হয় ভালো। কিন্তু সেটি ধরে রাখতে পারেনি। ফন ডাসেনের ক্যাচ ফেলার মাশুলও দিতে হয়।

অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কিষান ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। পাওয়ার প্লেতে তারা তুলে ফেলে বিনা উইকেটে ৫১ রান।

রুতুরাজ অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিন ছক্কায় ১৫ বলে ২৩ রান করে তিনি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সপ্তম ওভারে, ভাঙে ৫৭ রানের জুটি।

তিনে নেমে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে তাবরাইজ শামসিকে ছক্কায় ওড়ান শ্রেয়াস আইয়ার। বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনারের পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে আরও দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি।

বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে ছক্কায় উড়িয়ে কিষান ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৭ বলে। মহারাজের পরের ওভারে বয়ে যায় ঝড়। প্রথম চার বলে দুটি করে ছক্কা ও চার হাঁকান কিষান।

ওই ওভারের পঞ্চম বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। পরের বলেই অবশ্য আউট হয়ে যান লং অনে ক্যাচ দিয়ে। ৪৮ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৬ রান। শ্রেয়াসের ২৭ বলে ৩ ছক্কা ও একটি চারে গড়া ৩৬ রানের ইনিংস শেষ হয় ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে বোল্ড হয়ে।

এরপর পান্তের সঙ্গে পান্ডিয়ার ১৮ বলে ৪৬ রানের জুটিতে দুইশ ছাড়ায় দলের সংগ্রহ। পান্ত শেষ ওভারে আউট হন ১৬ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ২৯ রান করে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথমবার ভারতের হয়ে খেলতে নামা পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩১ রানে। তিন বছর পর জাতীয় হয়ে খেলতে নেমে দিনেশ কার্তিক ২ বল খেলে ১ রানে অপরাজিত থাকেন।

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।

তিনে নেমে পান্ডিয়ার একই ওভারে তিনটিসহ চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড় তোলার ইঙ্গিত দেন প্রিটোরিয়াস। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। হার্শাল পাটেলের স্লোয়ারে বোল্ড হন ১৩ বলে ২৯ রান করে।

স্রেফ ২২ বলে ফিফটি করেন ডেভিড মিলার। ছবি: বিসিসিআই

নবম ওভার পর্যন্ত উইকেটে থেকেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি কুইন্টন ডি কক। আকসার প্যাটেলকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি ১৮ বলে ২২ রান করে।

এরপরই মিলার ও ফন ডাসেনের ওই জুটি। পাঁচ নম্বরে নেমে মিলার তোলেন ঝড়। হার্শালকে পরপর চার-ছক্কার পর আকসারের টানা তিন বলে মারেন দুটি ছক্কা ও একটি চার। ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ২২ বলে।

২৯ বলে যখন তাদের দরকার ৬৩ রান, ফন ডাসেনের ক্যাচ ফেলে দেন শ্রেয়াস। তখন ৩১ বলে ২৯ রানে ব্যাট করছিলেন ফন ডাসেন। 

শেষ ২৪ বলে দরকার ছিল ৫৬ রান। জীবন পাওয়া ফন ডাসেন সপ্তদশ ওভারে হার্শালকে তিন ছক্কা ও একটি চারে ২২ রান তুলে ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৭ বলে।

অষ্টাদশ ওভারের প্রথম বলে ভুবনেশ্বরকে মিলারের ছক্কায় জুটির রান শতরান স্পর্শ করে স্রেফ ৫২ বলে। ওভারের শেষ তিন বলে একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন ফন ডাসেন।

তাতে সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ১২। শেষ ওভারের প্রথম বলে যুজবেন্দ্র চেহেলকে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন ফন ডাসেন। তার ক্যাচটা শ্রেয়াস নিতে পারলে হয়তো ফল অন্যরকমও হতে পারত!  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ২১১/৪ (কিষান ৭৬, রুতুরাজ ২৩, শ্রেয়াস ৩৬, পান্ত ২৯, পান্ডিয়া ৩১*, কার্তিক ১*; মহারাজ ৩-০-৪৩-১, রাবাদা ৪-০-৩৫-০, নরকিয়া ৪-০-৩৬-১, পারনেল ৪-০-৩২-১, শামসি ২-০-২৭-০, প্রিটোরিয়াস ৩-০-৩৫-১) 

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.১ ওভারে ২১২/৩ (ডি কক ২২, বাভুমা ১০, প্রিটোরিয়াস ২৯, ফন ডাসেন ৭৫*, মিলার ৬৪*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৪৩-১, আভেশ ৪-০-৩৫-০, চেহেল ২.১-০-২৬-০, পান্ডিয়া ১-০-১৮-০, হার্শাল ৪-০-৪৩-১, আকসার ৪-০-৪০-১

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড মিলার