২৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় হার

ব্যাটিংয়ের শুরুটা আশা জাগানিয়া। ১ উইকেট হারিয়ে দ্বাদশ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান স্পর্শ করল একশ। এরপরই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল চিত্র। জশ হেইজেলউড, মিচেল স্টার্কদের দারুণ বোলিংয়ে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল লঙ্কান ব্যাটিং। দুই ওপেনারের অপরাজিত ফিফটিতে অস্ট্রেলিয়া জিতে গেল অনায়াসে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2022, 05:47 PM
Updated : 7 June 2022, 06:20 PM

কলম্বোর আর প্রেমাদাসায় মঙ্গলবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১০ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল অ্যারন ফিঞ্চের দল।

কিছুটা মন্থর উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮ রানের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ১২৮ রানে। অস্ট্রেলিয়া সেটি পেরিয়ে যায় ৩৬ বল হাতে রেখে।

এই সংস্করণে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটে জিতল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমটি ছিল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, কেপ টাউনে লঙ্কানদের ১০১ রানে গুটিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল ৫৮ বল বাকি থাকতে।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে ৪ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার হেইজেলউড।

৩১ বছর বয়সী পেসার টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেট নিলেন এই নিয়ে চারবার, আর কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারের যা দুই বারের বেশি নেই। এই বছরে এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ম্যাচে তার উইকেট হলো ১২টি। 

আরেক পেসার স্টার্ক ২৬ রানে নেন ৩ উইকেট।

পরে ব্যাটিংয়ে ৪৪ বলে ৯ চারে ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ৪০ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক ফিঞ্চ।

গত এপ্রিলে লাহোরে পাকিস্তানকে হারানো সবশেষ টি-টোয়েন্টির দলে ৯টি পরিবর্তন আনে অস্ট্রেলিয়া। যদিও বিশ্বকাপ জয়ী একাদশের কেবল দুজন ছিলেন না এদিন। টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে পেসার প্যাট কামিন্সকে। পিতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় পুরো সফরে নেই লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। 

ম্যাচে জশ হেইজেলউড তার ৪ উইকেটের ৩টিই নেন একই ওভারে। ছবি: আইসিসি

ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে খেলা সবশেষ টি-টোয়েন্টির দলে পাঁচটি পরিবর্তন আনা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয় ধীরলয়ে। ইনিংসের প্রথম ১৪ বলে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। পরের ৬ বলে অবশ্য বাউন্ডারি চারটি; দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান দানুসকা গুনাথিলাকা, পাথুম নিসানকা মারেন একটি চার।

আগ্রাসী হয়ে ওঠা গুনাথিলাকাকে ফিরিয়ে পঞ্চম ওভারে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন হেইজেলউড। এই পেসারের আগের বল স্কুপ করে চার মারার পর শর্ট বলে ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৫ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় তিনি করেন ২৬ রান।

দ্বিতীয় উইকেটে নিসানকা ও চারিথ আসালাঙ্কার পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। দ্বাদশ ওভারে দলের স্কোর স্পর্শ করে একশ। এরপরই ৩ রানের মধ্যে দ্রুত ৪ উইকেট হারায় তারা।।

দারুণ স্লোয়ার ইয়র্কারে নিসানকাকে (৩১ বলে ৩৬) বোল্ড করে ৬১ রানের জুটি ভাঙেন স্টার্ক। হেইজেলউড একই ওভারে ৩ উইকেট নেন স্রেফ ১ রান দিয়ে। বাজে শটে ক্যাচ দেন কুসল মেন্ডিস। কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ভানুকা রাজপাকসা। অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলের লাইন মিস করে হন এলবিডব্লিউ।

একটু পর বিদায় নেন আসালাঙ্কাও। ৩৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৮ রান করে তিনি হন রান আউট। বৃষ্টিতে ৯ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর প্রথম বলে স্টিভেন স্মিথের দারুণ থ্রোয়ে রান আউটে কাটা পড়েন চামিকা করুনারত্নে।

এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ১০০ থেকে শ্রীলঙ্কার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১১৮। পরে ১ রানের মধ্যে হারায় শেষ ৩ উইকেট।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারে ফিঞ্চ বেঁচে যান আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে। প্রথম তিন ওভার দেখেশুনে খেলার পর হাত খোলেন দুই ওপেনার।

এক পর্যায়ে ফিঞ্চের রান ছিল ৯ বলে ৪। পরের ৫ বলে তিনি করে ফেলেন ২০ রান; দুশমন্থ চামিরাকে ছক্কায় ওড়ানোর পর ভানিন্দু হাসারাঙ্গার চার বলের মধ্যে মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা। 

ওয়ার্নারও খেলেন দারুণ সব শট। র‍্যাম্প শটে চার, স্লগ সুইপে মারেন ছক্কা। বাউন্ডারিতে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৩২ বলে।

অপরাজিত ফিফটিতে দলের জয় নিয়ে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। ছবি: আইসিসি

বাঁহাতি ওপেনার নিজের সবশেষ ২০ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে ১০ বার পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা তিনি করে দেখালেন সবশেষ পাঁচ ইনিংসেই। এর মধ্যে আছে একটি সেঞ্চুরিও।

৯৫ রানে জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেন নিসানকা। তখন তার রান ছিল ৫৫।

১১.৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান যখন বিনা উইকেটে ১০১, বৃষ্টিতে তখন খেলা বন্ধ থাকে ৫০ মিনিট। ওভার যদিও কাটা যায়নি। নুয়ান থুসারাকে বাউন্ডারিতে ফিঞ্চ ফিফটি করেন ৩৭ বলে।  

জয়সূচক রানও আসে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের ব্যাট থেকে। চামিরাকে পরপর চার-ছক্কায় ম্যাচের ইতি টেনে দেন তিনি।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট হয়তো এনে দিয়েছে কিছুটা আনন্দের উপলক্ষ। কিন্তু দর্শকদের মন ভরাতে পারেনি শানাকার দল। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সবচেয়ে বড় হার এটিই।

একই মাঠে বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের সামনে সিরিজ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ১৯.৩ ওভারে ১২৮ (নিসানকা ৩৬, গুনাথিলাকা ২৬, আসালাঙ্কা ৩৮, মেন্ডিস ১, রাজাপাকসা ০, শানাকা ০, হাসারাঙ্গা ১৭, করুনারত্নে ১, চামিরা ১, থিকশানা ১, থুসারা ০*; স্টার্ক ৪-০-২৬-৩, হেইজেলউড ৪-০-১৬-৪, মার্শ ২-০-২১-০, ম্যাক্সওয়েল ২-০-১৮-০, রিচার্ডসন ৩.৩-০-২২-১, অ্যাগার ৪ -০-২৫-০

অস্ট্রেলিয়া: ১৪ ওভারে ১৩৪/০ (ফিঞ্চ ৬১*, ওয়ার্নার ৭০*; থিকশানা ৪-০-২৫-০, থুসারা ২-০-২১-০, চামিরা ৪-০-৪৮-০, হাসারাঙ্গা ২-০-২৭-০, আসালাঙ্কা ২-০-১৩-০) 

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা ম্যাচ: জশ হেইজেলউড