ফারজানার আরেকটি ম্যাচজয়ী ইনিংস, ফের দ্যুতিময় নাহিদা

ব্যাট হাতে রানের স্রোত বইয়ে দেওয়া ফারজানা হক পিংকি আলো ছড়ালেন আরও একবার। টানা তিন ফিফটি ও এক সেঞ্চুরির পর এবার খেললেন পঞ্চাশ ছাড়ানো অপরাজিত ইনিংস। বল হাতে আবারও আলো ছড়ালেন নাহিদা আক্তার। জাতীয় দলের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সৌজন্যে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উড়িয়ে দিল রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2022, 02:16 PM
Updated : 3 June 2022, 02:16 PM

মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শুক্রবার ৮ উইকেটে জিতেছে রূপালি ব্যাংক। প্রতিপক্ষকে ১৫৭ রানে থামিয়ে ৭৫ বল আগে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে তারা।

রান তাড়ায় তিনে নেমে ৫ চারে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন ফারজানা। আগের চার ইনিংসে করেন ৭৫, অপরাজিত ৫৩, অপরাজিত ৫৫ ও অপরাজিত ১২৪। এখন পর্যন্ত ৩৬৪ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই। পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই অপরাজিত থাকায় গড় ৩৬৪!

প্রথম দুই ম্যাচে উইকেট না পাওয়া নাহিদা এখন যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। এদিন ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আসরে এই বাঁহাতি স্পিনারের মোট উইকেট হলো ১৩টি। আগের দুই ম্যাচে পেয়েছিলেন পাঁচটি ও চারটি উইকেট।

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই হয় বিকেএসপির। উন্নতি আক্তার ও ইভার উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৭ রান। যদিও এই রান তুলতে তারা কাটিয়ে দেন ৩১ ওভারের বেশি।

৫ চারে ৯৬ বলে ৪৬ রান করা ইভাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাহিদা। পরে লাখি খাতুন ফেরান ১১০ বলে ৬ চারে ৪৯ রান করা উন্নতিকে।

শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরে দ্রুত রান তোলার দাবি মেটাতে পারেননি বিকেএসপির ব্যাটাররা। পরের ৯ জনের মধ্যে কেবল তিনে নামা সুমাইয়া যেতে পারেন দুই অঙ্কে, করেন ৩ চারে ২৭ রান। তিন ব্যাটার পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।

নাহিদার সঙ্গে দুর্দান্ত বোলিং উপহার দেন লাখি। ৩৩ রান দিয়ে তার প্রাপ্তি ৩ উইকেট।

ব্যাটিংয়ে রূপালি ব্যাংক ১৪ রানে হারায় প্রথম উইকেট। এরপর দলকে টানেন সানজিদা ও ফারজানা। তাদের জুটিতে আসে ১২৭ বলে ৮৯ রান।

৭ চারে ৪৫ রান করা সানজিদা বোল্ড হলে ভাঙে জুটি। নিগার সুলতানাকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন ফারজানা।

৮৩ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন ফারজানা। নিগার অপরাজিত থাকেন ৩ চারে ২৫ রান করে। তাদের ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় রূপালি ব্যাংক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ৪৮.৫ ওভারে ১৫৭ (উন্নতি ৪৯, ইভা ৪৬, সুমাইয়া ২৭, মারুফা ০, রাবেয়া ৭, দিশা ০, অর্থি ৩, ইয়াসমিন ০, দিপা ১, ফাহমিদা ৬, অপর্ণা ১*; পুজা ৮-১-২৭-১, মুক্তা ১০-১-২৪-০, নাহিদা ৮.৫-২-১৮-৪, রুপা ২-০-১৩-০, মুমতা ৫-০-১১-০, শরিফা ১-০-৫-০, শুকতারা ৪-০-১৯-০, লাখি ১০-০-৩৩-৩)

রূপালি ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ: ৩৭.৩ ওভারে ১৫৮/২ (সানজিদা ৪৫, শুকতারা ৭, ফারজানা ৫৭*, নিগার ২৫*; মারুফা ৮-০-৪৩-১, ফাহমিদা ৮-৩-১৮-০, ইয়াসমিন ৫-০-২৬-১, রাবেয়া ৯.৩-২-২৫-০, অপর্ণা ২-০-১৫-০, অর্থি ২-০-৮-০, দিপা ৩-০-২০-০)

ফল: রূপালি ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ ৮ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নাহিদা আক্তার

শেখ রাসেল-আবাহনী লিমিটেড

ব্যাটারদের মিলিত চেষ্টায় লড়ার মতো সংগ্রহ গড়ে শেখ রাসেল স্পোর্টিং ডেভেলপমেন্ট একাডেমি। কিন্তু জান্নাত অর্থির দারুণ ব্যাটিংয়ে পেরে উঠল না তারা। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল আবাহনী লিমিটেড।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ৫ উইকেটে জিতেছে আবাহনী। শেখ রাসেলের ১৭৫ রান তারা পেরিয়ে যায় ৮৯ বল আগেই।

আবাহনীর জয়ের কারিগর ওপেনার অর্থি ৬ চারে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে হন ম্যাচের সেরা। এক ছক্কা ও ৫ চারে ৩৭ বলে ৩৯ রান করেন সুশমা দেবি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি পায় শেখ রাসেল। পরপর দুই ওভারে বিদায় নেন ৪ চারে ২৭ রান করা ফারজানা আক্তার এবং এক ছক্কা ও ২ চারে ৩২ রান করা মুরশিদা খাতুন।

এরপর দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় তারা। সোবহানা মোস্তারি ও প্রিয়াঙ্কা মালিক হাল ধরে গড়েন ৪৫ রানের জুটি।

৬ চারে ৩৫ রান করে জাহানারা আলমের বলে বোল্ড হন সোবহানা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন প্রিয়াঙ্কা। তার ৬০ বলের ইনিংসে চার পাঁচটি।

জবাব দিতে নেমে ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় আবাহনী। সেখান থেকে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেন সুশমা ও অর্থি। ৮৪ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন দুইজন।

সুশমার বিদায়ের পর তাজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অর্থি। এই জুটিতে আসে ৪৯ রান। তাতে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় আবাহনী।

এই দুই ব্যাটার অবশ্য কাজ শেষ করে আসতে পারেননি। তবে ফাহিমা খাতুন ও জাহানারার ব্যাটে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আবাহনী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ রাসেল: ৫০ ওভারে ১৭৫/৭ (মুরশিদা ৩২, ফারজানা ২৭, একা ১, সোবহানা ৩৫, পিংকি ৮, প্রিয়াঙ্কা ৪৫*, ইসমত ২, নিপা ৯, সানজিদা ৭*; জাহানারা ১০-২-৩৯-১, হ্যাপি ৯-১-৪০-০, লাবনি ১০-২-৩১-১, সাবেকুন ১০-২-২১-২, ফাহিমা ১০-২-৩০-২, ইশমা ১-০-১০-০)

আবাহনী: ৩৫.১ ওভারে ১৭৭/৫ (শারমিন ৩, অর্থি ৬৩, মন্টি ১৬, সুশমা ৩৯, তাজ ২৬, ফাহিমা ৯*, জাহানারা ১০*; সানজিদা ৮-২-২৪-১, ইয়ামিম ৮.১-১-৩৯-২, প্রিয়াঙ্কা ৯-০-৫১-১, ইসমত ১-০-১২-০, সোবহানা ১-০-৯-০, সুমা ৮-০-৪২-১)

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: জিন্নাত অর্থি

খেলাঘর-বাংলাদেশ আনসার অ্যান্ড ভিডিপি

দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিলেন রিতু মনি। তাতে বাংলাদেশ আনসার অ্যান্ড ভিডিপির বিপক্ষে অল্প পুঁজি নিয়েও দারুণ এক জয় পেল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি।

আনসার অ্যান্ড ভিডিপির বিপক্ষে খেলাঘরের জয় ২২ রানে। ১৩০ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা থামিয়ে দিয়েছে ১০৮ রানে।

১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩ মেডেন ও ১৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন রিতু। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে এই অফ স্পিনারের হাতে।

বিকেএসপির এক নম্বর মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলাঘরের পাঁচজন ব্যাটার যেতে পারেন দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান করে অপরাজিত ছিলেন সুলতানা। এরপর ২৬ রান আসে সাবেকুন নাহারের ব্যাট থেকে। ২০ রান পার করতে পারেননি আর কেউ।

অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু থেকেই আনসার অ্যান্ড ভিডিপিকে চেপে ধরেন খেলাঘরের বোলাররা। ১৮ রানেই প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে নেয় দলটি।

পরের তিন ব্যাটার দলের হাল ধরার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হতে পারেননি। আনসার অ্যান্ড ভিডিপির হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন উর্মি আক্তার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খেলাঘর: ৫০ ওভারে ১৩০/৯ (মিষ্টি ২, দোলা ১৩, সাবেকুন ২৬, লতা ০, রিতু ২, সুলতানা ৩১*, স্বর্ণা ১৪, নাসিমা ০, ফাতেমা ১৪, জেরিন ৬, ফোয়ারা ৪*; পান্না ৬-০-১৯-০, লিলি ৮-০-২৫-১, রূপা ১০-১-২৩-২, তিথি ১০-৩-১৫-৩, আফিয়া ইরা ৬-০-২৮-০, আয়েশা জুনি. ৯-২-১৪-১, ইসমত ১-০-২-০)

বাংলাদেশ আনসার অ্যান্ড ভিডিপি: ৫০ ওভারে ১০৮ (আফিয়া ২, আফিয়া ইরা ৩, ইসমত ৬, রেশমা ২, মাহমুদা ১৮, উর্মি ২২, পান্না ১৩, আয়েশা ১৭, লিলি ৪, তিথি ৮*, রূপা ১; রিতু ১০-৩-১৮-৪, ফাতেমা ১০-১-২২-২, স্বর্ণা ৫-০-১৩-১, ফোয়ারা ১০-১-১৭-২, সুলতানা ৮-১-১৭-০, জেরিন ৩-০-৬-০, লতা ৪-১-১০-০)

ফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ২২ রানে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রিতু মনি