লর্ডসে ১৭ উইকেটের দিনে ইংল্যান্ডের নাটকীয় ব্যাটিং ধস

বলা হচ্ছে, ইংল্যান্ড টেস্ট দলের ‘নতুন যুগের সূচনা।’ মাঠের লড়াইয়ে সেই যাত্রা শুরুর প্রথম দিনটা তাদের কাটল অম্লমধুর। দলে ফিরে অসাধারণ বোলিং প্রদর্শনী মেলে ধরলেন জেমস অ্যান্ডারসন। অভিষিক্ত পেসার ম্যাথু পটস দেখালেন চমক। তাদের নৈপুণ্যে নিউ জিল্যান্ডকে দেড়শর আগে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়েও ইংলিশদের শুরুটা হয় দারুণ। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে তারাই এখন ঘোর বিপদে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2022, 06:04 PM
Updated : 2 June 2022, 07:40 PM

লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনে দুই দল মিলিয়ে পতন হয়েছে ১৭ উইকেটের! নিউ জিল্যান্ডকে ১৩২ রানে থামানোর পর ইংল্যান্ড দিন শেষে করেছে ৭ উইকেটে ১১৬ রান তুলে।

৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর এক পর্যায়ে ৮ রানে ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা! এখনও তারা পিছিয়ে ১৬ রানে।

ইংল্যান্ডের নতুন টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস ও নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পথচলা শুরু হলো এই ম্যাচ দিয়ে।

দিনের প্রথম ভাগে তাদের মুখে ছিল চওড়া হাসি। আগের সিরিজে বাদ পড়া অভিজ্ঞ দুই সেনানী অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড নতুন বলে কাঁপিয়ে দেন নিউ জিল্যান্ডকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার দিনে পটস ছড়ান আলো।

উইকেট থেকে পেসাররা পেয়েছেন মুভমেন্ট। সেটি কাজে লাগিয়ে কিউইদের অল্পতে থামিয়ে দিতে ৬৬ রানে ৪ উইকেট নেন ৩৯ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন। ৯.২ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে পটসেরও প্রাপ্তি ৪টি।

তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের আনন্দ দিন শেষে অনেকটাই মিলিয়ে গেল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের হাত ধরে নিউ জিল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে।

নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। কিন্তু এক ঘণ্টা না যেতেই তারা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে, ১২ রানের মধ্যেই হারায় ৪ উইকেট।

অ্যান্ডারসন নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফিরিয়ে দেন উইল ইয়াংকে। তৃতীয় স্লিপে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন জনি বেয়ারস্টো।

নিজের পরের ওভারে অ্যান্ডারসন আরেকটি শিকার ধরেন টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তিনিও ক্যাচ দেন তৃতীয় স্লিপে, এবার দুইবারের চেষ্টায় বল মুঠোয় জমান বেয়ারস্টো।

এই নিয়ে ২৭ বার টেস্ট ইনিংসে প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে আউট করলেন অ্যান্ডারসন, যা কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। তিনি ছাড়িয়ে গেলেন ২৬ বার কাজটি করে দেখানো গ্লেন ম্যাকগ্রাকে।

প্রথম চার ওভার শেষে অ্যান্ডারসনের বোলিং ফিগার ৪-৪-০-২!

ব্রড টিকতে দেননি ডেভন কনওয়েকে। স্লিপে ক্যাচ নেওয়ার হ্যাটট্রিক করে ফেলেন বেয়ারস্টো। গত নভেম্বরে ভারত সফরের পর টেস্টে ফেরা কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে পটস প্রথম উইকেটের স্বাদ পান পঞ্চম বলে। তার দারুণ ডেলিভারি কিউই অধিনায়কের ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে।

প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল ও টম ব্লান্ডেল। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাদের লড়াই। দুজনই বোল্ড হন পটসের বলে।

এর মাঝেই বাউন্ডারিতে রান বাঁচাতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান ইংলিশ স্পিনার জ্যাক লিচ। ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে একাদশে যোগ করা হয়েছে টেস্টে অভিষেকে অপেক্ষায় থাকা স্পিনার ম্যাট পার্কিনসনকে।

নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসের ২৩ ওভার শেষে সব খেলোয়াড়, আম্পায়ার, দর্শকরা ২৩ সেকেন্ড করতালি দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেন ওয়ার্নকে। গত মার্চে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো স্পিন জাদুকরের জার্সি নম্বর ছিল ২৩। 

এর একটু পরই অ্যান্ডারসনকে পুল করে কাইল জেমিসন ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে, ৪৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় নিউ জিল্যান্ড। সেটি হয়নি মূলত কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের নৈপুণ্যে।

অষ্টম উইকেটে তিনি ইনিংস সর্বোচ্চ ৪১ রানের জুটি গড়েন সাউদির সঙ্গে। ২৬ রান করে সাউদিও অ্যান্ডারসনের শর্ট বলে ক্যাচ দেন বাউন্ডারিতে।

এজাজ প্যাটেলকে এলবিডব্লিউ করে চতুর্থ শিকার ধরেন পটস। তখন তার বোলিং ফিগার ৮.১-৪-৮-৪!

অ্যান্ডারসন-পটস দুজনের সামনেই তখন পাঁচ উইকেটের হাতছানি। পটস পরের ওভারে দুই বল করার পরই অবশ্য মাঠ ছাড়েন পায়ে টান লাগায়।

সফরকারীদের শেষ উইকেটটি নেন স্টোকস। ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত থাকেন ৫০ বলে ৪২ রান করে।

ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার আলেক্স লিস ও জ্যাক ক্রলি শুরুটা করেন আশা জাগানিয়া। দুই জনে কাটিয়ে দেন ঘণ্টা খানেক। চতুর্দশ ওভারে ৫৯ রানের জুটি ভাঙে ক্রোলির বিদায়ে (৫৬ বলে ৪৩)। জেমিসনের বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি।

প্রথমবার তিনে নেমে অলি পোপ ৭ রান করে বিদায় নেন জেমিসনের বলেই। নাটকীয় ধসের শুরুটা হয় জো রুটকে দিয়ে। সাবেক অধিনায়ক ১১ রান করে ডি গ্র্যান্ডহোমের বাড়তি বাউন্সে ক্যাচ দেন গালিতে।

লিসের ৭৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস শেষ হয় সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। এই পেসারের পরের ওভারে স্টোকস ১ রান করে ক্যাচ দেন উইকেটকিপারকে। আর বোল্ট একই ওভারে বিদায় করেন বেয়ারস্টো ও পটসকে।

২ উইকেটে ৯২ থেকে ইংলিশদের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১০০!

দিনের বাকিটা নিরাপদে কাটিয়ে দেন ফোকস (৬*) ও ব্রড (৪*)।  দ্বিতীয় দিনে তারা লিড নিতে পারে কি-না, সেটিই দেখার বিষয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪০ ওভারে ১৩২ (ল্যাথাম ১, ইয়াং ১, উইলিয়ামসন ২, কনওয়ে ২, মিচেল ১৩, ব্লান্ডেল ১৪, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪২*, জেমিসন ৬, সাউদি ২৬, এজাজ ৭, বোল্ট ১৪; অ্যান্ডারসন ১৬-৬-৬৬-৪, ব্রড ১৩-০-৪৫-১, পটস ৯.২-৪-১৩-৪, স্টোকস ১.৪-০-৫-১)    

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৬ ওভারে ১১৬/৭ (লিস ২৫, ক্রলি ৪৩, পোপ ৭, রুট ১১, বেয়ারস্টো ১, স্টোকস ১, ফোকস ৬*, পটস ০, ব্রড ৪*; সাউদি ১১-৩-৪০-২, বোল্ট ১০-৪-১৫-২, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮-২-২৪-১, জেমিসন ৭-৩-২০-২)