‘চান্স নিয়ে’ সফল সাকিব

সিরিজ শেষের এক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম পাওয়া গেল সাকিব আল হাসানকে। সিরিজজুড়ে ছিল তার বোলিংয়ের সাফল্যগাঁথা, তার বোলিং নিয়ে কত স্তুতি কত কথা। অথচ সিরিজ শুরুর আগের দিন বোলিং নিয়েই ছিল সবচেয়ে সংশয়। ফিটনেস নিয়ে ছিল প্রশ্ন। সাকিব খেললেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বল হাতেই। সিরিজের শেষ দিকে এসে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার বললেন, নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল বলেই ‘চান্স’ নিতে ভড়কে যাননি তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2022, 04:12 PM
Updated : 26 May 2022, 06:24 PM

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজের প্রস্তুতি পর্বের শুরুতে সাকিব ছিলেন ছুটিতে। দলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার পরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যখন ছুটি কাটিয়ে ফিরলেন, শরীরে বয়ে আনলেন কোভিড। পজিটিভ হয়ে ঘরবন্দি। এরপর নাটকীয়ভাবে নেগেটিভ হয়ে যোগ দিলেন দলের সঙ্গে চট্টগ্রামে। টেস্টের আগের দিন অনুশীলনও করলেন। তবে সেই অনুশীলন ছিল শুধু ব্যাট হাতে ৩০ মিনিট সময় নেটে কাটানো।

কোনো ফিটনেস ট্রেনিং তিনি করেননি, অনুশীলন করেননি একটি বলও। অথচ ম্যাচে দেখা গেল, বোলিংয়েই তিনি বেশি সফল! প্রথম দিন যদিও ৩৫ ওভারের আগে তাকে বোলিংয়ে আনেননি অধিনায়ক। তবে বল হাতে নেওয়ার পর প্রথম ডেলিভারি থেকেই তিনি বল রাখতে শুরু করলেন ঠিক জায়গায়। চট্টগ্রাম টেস্টে নিষ্প্রাণ উইকেটেও দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিয়ে উইকেট নিলেন। এরপর মিরপুরেও দারুণ বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে নিলেন ৫ উইকেট।

মে মাসের এই প্রচণ্ড গরমেও চট্টগ্রামে দুই ইনিংসে ৬৪ ওভার বোলিং করেছিলেন তিনি। মিরপুরে এক ইনিংসেই ৪০.১ ওভার বোলিং করা হয়ে গেছে।

চতুর্থ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বললেন, ফিটনেস ট্রেনিং না করলেও বোলিং ফিটনেস তার ছিলই। গত মাসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। এটাও তার কাজে দিয়েছে বলে জানালেন।

“খেলোয়াড়দের সবার নিজের ওপর নির্ভর করে, সে আসলে কোন জিনিসটাতে ফিট মনে করে। ম‌্যাচ ফিট আর ফিজিক‌্যালি ফিট, দুটি দুই ধরনের ব্যাপার। অনেকেই আছে ম‌্যাচে অনেক ওভার টানা বোলিং করতে পারে, ৬-৭-৮ ওভার ফাস্ট বোলার। কিন্তু বিপ টেস্টে (ফিটনেস টেস্টের একটা পদ্ধতি) দেখা যাচ্ছে ১০ পর্যন্ত ক্রস করছে না। আবার অনেকে আছে, ১২-১৩ দেয় (বিপ টেস্টে), কিন্তু ৫ ওভারও করতে পারে না। আসলে ফিটনেসের সংজ্ঞা একেক জায়গায় একেক রকম।”

“যেহেতু প্রচণ্ড গরমের মধ‌্যেও আমি প্রিমিয়ার লিগে চারটা ম‌্যাচ খেলে গিয়েছিলাম, ওই জিনিসটা আমাকে সহায়তা করেছে। আমি জানতাম প্রথম দুই দিন আমার জন‌্য খুব কষ্টকর হবে চট্টগ্রাম টেস্টে। তারপর আস্তে আস্তে সহজ হয়ে যাবে। একটু চান্স নেওয়া বলতে পারেন। ক্যালকুলেটিভ চান্সই নেওয়া।”

তার বোলিং ফিটনেস, তার অভিজ্ঞতা, দারুণ স্কিল ও চাতুর্য, সব কিছু মাথায় রেখেও এবারের পারফরম্যান্স বিস্ময়কর একটা কারণে। টেস্টের আগের ৬ মাসে যে লাল বল তিনি হাতেই নেননি! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, গত ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর লাল বলের কোনো অনুশীলনই তিনি করেননি। সরাসরি টেস্টে বোলিং করলেন ৬ মাস পর। তারপরও এমন ক্ষুরধার বোলিং কিভাবে সম্ভব?

সাকিব বললেন, নিজেকে ভালোভাবে জানার কথা, নিজের বোলিং আর প্রস্তুতি নিয়ে স্বচ্ছ্ব ধারণার কথা।

“বোলিং একটা জিনিস যেটাতে, আমার আত্মবিশ্বাসের লেভেল অনেক ভালো থাকে সব সময়। জীবনে দু-একবার হয়ত হয়েছে আমি বোলিং নিয়ে অত বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। এরকম খুব কমই হয়েছে যে বোলিং নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে। চারটা ম্যাচ যখন খেলেছি (প্রিমিয়ার লিগে), ওটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল।”

“এতদিন খেলার পর ১৫ দিনের ক্যাম্প কিংবা ১০ দিনের কন্ডিশনিং করে আসলে খেলার সময় আসে না। এরকম একজন ক্রিকেটারের জন্য তিন থেকে পাঁচ সেশনই পর্যাপ্ত। এই টেস্টের আগে যদিও সময় খুবই কম ছিল, এমনিতে আমি খেলার ভেতর থাকলে আমার জন্য তিন সেশন যথেষ্ট। খেলার ভেতর না থাকলে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় সেশন। এর থেকে বেশি লাগে না, যদি ফিটনেস থাকে আসলে। এতদিন খেলার পর খুব বেশি ট্রেনিং করা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কতটা কার্যকরভাবে করছি, সেটাই আসল।”