ভেটোরির আরেকটু কাছে সাকিব এবং পেসারদের এক যুগের খরা

এক প্রান্তে অপেক্ষায় সাকিব আল হাসান, আরেক প্রান্তে ইবাদত হোসেন চৌধুরি। শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করার তাড়না ছিল, আর ছিল ব্যক্তিগত প্রাপ্তির হাতছানি। কার আগে হবে ৫ উইকেট! ইবাদতের ৫ উইকেটের অপেক্ষাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও। দেশের মাঠে কোনো পেসারের ৫ উইকেট নেই যে এক যুগ ধরে! শেষ পর্যন্ত সাকিব ঠিকই পারলেন, কিন্তু হলো না ইবাদতের ৫।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2022, 11:48 AM
Updated : 26 May 2022, 06:25 PM

রমেশ মেন্ডিসকে যখন এলবিডব্লিউ করলেন ইবাদত, শ্রীলঙ্কার উইকেট তখন পড়ে গেছে ৮টি। শিকারি স্রেফ দুই জনই, সাকিব ৪, ইবাদত ৪। পরের ওভারেই প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে ফিরিয়ে সাকিব ধরলেন পঞ্চম শিকার। ইবাদতেরও সুযোগ এলো পরের ওভারে। কিন্তু তিনি পারলেন না। এরপর আর সুযোগও এলো না। সাকিবের সরাসরি থ্রোয়েই আসিথা ফার্নান্দোর রান আউটে শেষ হয়ে গেল লঙ্কান ইনিংস।

ইবাদত আটকে গেলেন চারে। সাকিব মাঠ ছাড়লেন ৫ উইকেটের তৃপ্তি নিয়ে। ৪০.১ ওভার বোলিং করে ৯৬ রানে ৫ উইকেট। এই স্বাদ পেলেন প্রায় চার বছর পর!

সেই ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জ্যামাইকায় ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এরপর টেস্টে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই প্রথম। তবে ম্যাচের হিসেবে অপেক্ষাটা দীর্ঘ নয় খুব একটা। এক বছর কেটে গেছে নিষেধাজ্ঞায়, চোট-বিশ্রাম-ছুটি মিলিয়ে আরও কিছু টেস্টে তিনি ছিলেন মাঠের বাইরে। মাঝের এই সময়টায় খেলেছেন ৭ টেস্ট।

এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়েই তিনি টেস্টে ফিরেছেন ৬ মাস পর। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও দারুণ বোলিং করেন। তবে সেবার উইকেট পান ৩টি। অফ স্পিনার নাঈম হাসান সেখানে নেন ৬ উইকেট। অবশেষে মিরপুরে বৃহস্পতিবার শেষ হলো সাকিবের অপেক্ষার।

এই নিয়ে টেস্টে ১৯ বার ৫ উইকেট নিলেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে ৫ উইকেট শিকারে টেস্ট ইতিহাসে আগে থেকেই ছিলেন তিনি তিনে। এবার দুইয়ে থাকা ড্যানিয়েল ভেটোরির সঙ্গে ব্যবধান কমালেন আরেকটু।

১১৩ টেস্টে ২০ বার ৫ উইকেট ভেটোরির। সাকিবের ১৯ বার হয়ে গেল ৬১ টেস্টে।

৯৩ টেস্টে ৩৪ বার ৫ উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনারদের শীর্ষে বাংলাদেশের বর্তমান স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।

মিরপুরে সাকিবের উইকেট শিকার অভিযান শুরু হয় ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে। সেদিন শেষ বিকেলে দারুণ এক ডেলিভারিতে তিনি আউট করেন কুসল মেন্ডিসকে। এরপর বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনে তার শিকার আরও দুটি। লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে ৮০ রানে বোল্ড করেন অসাধারণ ডেলিভারিতে। পরে তার শিকার ৫৮ রান করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের বোলিংয়ে মুগ্ধতার কথা জানিয়ে বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, ‘আশা করছি, কালকে (বৃহস্পতিবার) ৫ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়বে সাকিব।”

বোলিং কোচের চাওয়া সাকিব এ দিন পূরণ করেন দারুণভাবে। নিরোশান ডিকভেলাকে বিদায় করে দেখা পান চতুর্থ উইকেটের। এরপর জয়াবিক্রমাকে ফিরিয়ে পাঁচ।

ইবাদত শেষ উইকেটটি নিতে পারলে দারুণ এক যুগলবন্দির স্বাক্ষী দ্বিতীয়বার হতে পারত বাংলাদেশ। এক ইনিংসে দুই বোলারের ৫ ও ৫ উইকেট একবারই দেখেছে বাংলাদেশ। সেটিতেও ছিলেন সাকিব। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে পেসার শাহাদত হোসেন ও সাকিব নিয়েছিলেন ৫টি করে উইকেট।

শাহাদতের সেই ৫ উইকেট এখনও পর্যন্ত দেশের মাঠে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সবশেষ ৫ উইকেটও। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে দেশে ৫ উইকেট নেওয়ার স্বাদ পেয়েছেন কেবল তিনিই। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ৭১ রানে ৫ উইকেটের আগে ২০০৮ সালে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেন ২৭ রানে ৬ উইকেট। এর আগে ২০০৬ সালে বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার শিকার ছিল ৮৬ রানে ৫টি।

ইবাদত এবার আশা জাগান এই তালিকায় নাম লেখানোর। শেষ পর্যন্ত তাকে থমকে যেতে হয় ১৪৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে।