মুশফিকের সঙ্গে জুটির রসায়ন নিয়ে লিটন

একজন মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা। ইনিংস মেরামতের নিপুণ কারিগর। আরেক জনের জন‍্য ক্রিকেট মাঠের বাইশ গজ যেন ক‍্যানভাস। কব্জির মোচড়ে আঁকছেন শৈল্পিক সব ছবি।  ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠছেন ধারাবাহিকতার প্রতিশব্দ। দুই জনের জুটিতে নান্দনিকতা ও দায়িত্বশীলতা মিলে যায় এক বিন্দুতে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে এই জুটির রসায়ন নিয়ে অনেক কথাই বললেন লিটন দাস। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2022, 03:40 PM
Updated : 24 May 2022, 04:11 PM

দুই জনই কিপার-ব‍্যাটসম‍্যান। বাংলাদেশের সফলতম টেস্ট ব‍্যাটসম‍্যান মুশফিক। আর ক‍্যারিয়ারে বাংলাদেশের ব‍্যাটিংয়ের অনেক রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে লিটনের। তাদের জুটি চোখের জন‍্য প্রশান্তি, মনের জন‍্য নির্ভরতা। স্রেফ ১৬ ইনিংসে বাংলাদেশের সফল টেস্ট জুটির তালিকায় ছয় নম্বরে উঠে এসেছেন তারা।

সবশেষ জুটিতেই যেমন তারা উপহার দিয়েছেন একটি বিশ্ব রেকর্ড- ২৫ বা এর কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর সবচেয়ে বড় জুটি। ৬৩ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ দুই জনে যোগ করেছেন ২৭২ রান।

ষষ্ঠ উইকেটে এটি আবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। এই উইকেটে এর আগে কোনো দুইশ রানের জুটি ছিল না। রান ও বলের দিক থেকে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা জুটি এটি।

রেকর্ড জুটির পথে ব‍্যক্তিগত অর্জনও কম নয়। লিটন খেলেছেন ক‍্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংস। নবম সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১৭৫ রানে।

জুটিতে অগ্রণী ছিলেন লিটন। তবে শুরুতে চিত্রটা এমন ছিল না। ক্রিজে যাওয়ার পর কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোর পেস সামলাতে একটু ভুগছিলেন এই কিপার-ব‍্যাটসম‍্যান। সে সময় বারবার এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন মুশফিক। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জানেন, ২৪ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে আসা একজন ব‍্যাটসম‍্যানের জন‍্য কাজটা সহজ নয়।

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে লিটন জানালেন, তিনি ক্রিজে যাওয়ার পর কী কথা হচ্ছিল তাদের মধ‍্যে।

“আমি যখন ব্যাটিংয়ে যাই, দলের রান তিনশ থাকলেও তো আমি চাপে থাকি। ৫ উইকেট গেলেও চাপে থাকি। কারণ, আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। আমি যখন যাই, তখন আমি সত্যিই চাপে থাকি। মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে একটাই কথা হচ্ছিল, যেহেতু আমরা ব্যাকফুটে, এখান থেকে যতটা সম্ভব টানা যায়। গিয়েই তো আমরা একশ করতে পারব না! তাই যতক্ষণ লম্বা টানা যায়। প্রথম লক্ষ্য ছিল লাঞ্চ পর্যন্ত খেলা, তারপর এগোনো…।”

লঙ্কান পেসারদের অমন বোলিংয়ের সামনেও সাবলীল ছিলেন মুশফিক। অফ স্টাম্পের বাইরে চ‍্যানেল ধরে করা বল ছেড়ে গেছেন সতর্কতায়। খেলেছেন কেবল স্টাম্পে থাকলেই। শর্ট বলের ফাঁদে পা দেননি একবারের জন‍্যও। স্পিনার আসার পর রান করেছেন অনায়াসে।

মুশফিক যখন এমন ছন্দে থাকেন তখন অন‍্য ব‍্যাটসম‍্যানের জন‍্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। লিটনের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তাই হয়েছিল?

“নাহ, কোনো ব্যাটসম্যান ফ্লোতে বা ফ্লো ছাড়া নয়, একজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তো মানসিকভাবে অনেক সম্পৃক্ত থাকতে হয়, আপনি জুটি গড়বেন, তখন সে ফ্লোতে থাক বা না থাক, তার সঙ্গে কথোপকথনটাই অন্যরকম থাকে। কোনো ব্যাটসম্যান ফ্লোতে বা ফ্লো ছাড়া, আমি এটা অতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। আমি জানি, উনি কেমন খেলোয়াড়, উনার সঙ্গে আমার জুটি আগেও হয়েছে অনেক। আমি জানি, উনার সঙ্গে আমার কীভাবে খেলতে হবে।”

টেস্টে তাদের ১৬ জুটির আটটিই পঞ্চাশ ছোঁয়া। তাদের চার সেঞ্চুরির বেশি জুটি বাংলাদেশের হয়ে আছে কেবল একটি জুটির। 

১৬ ইনিংসে মুশফিক ও লিটন জুটি বেঁধে ৭২.১২ গড়ে করেছেন ১ হাজার ১৫৪ রান। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ৩২৫ এর বেশি রান করেছেন এমন জুটির মধ‍্যে এটাই সেরা গড়।

তাদের সবশেষ পাঁচটি জুটি এমন- ২০৬, ৭৩, ২২, ১৬৫ ও ২৭২।  লিটন বললেন, লম্বা সময় ক্রিজে থাকার চেষ্টাতেই আসছে এমন সব জুটি। 

“মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে অনেকগুলো ম্যাচে মোটামুটি দেড়শ রানের জুটি হলো। এটা তো ভালো দিক। একটা কথা চিন্তা করছিলাম যে, মিরপুরে খেলায় থাকতে হলে তিনশ রান করতেই হবে। আমরা যখন ব্যাটিং করি, এটাই মাথায় ছিল যত লম্বা ব্যাট করা যায়। আমাদের টপ অর্ডার যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে, আমার আর মুশি ভাইয়ের চাওয়া ছিল যত লম্বা যাওয়া যায় এবং যত রান দেওয়া যায় বোর্ডে, আমাদের জন্য তত ভালো। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।”