বাংলাদেশ অধিনায়কের ফর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এসেছে ব্যাট হাতে তার আরেকটি ব্যর্থতা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হয়েছেন ৯ রানে। সাম্প্রতিক সময়ে তার আউট হওয়ার ধরনে আত্মবিশ্বাসের যে ঘাটতি ফুটে উঠছে, তা স্পষ্ট এই ইনিংসেও। আসিথা ফার্নান্দোর বলটি খেলবে নাকি ছাড়বেন, এটা বুঝতেই সময় লেগে যায় তার। তবে ব্যাট পেতে দেন আলগাভাবে, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল যায় কিপারের গ্লাভসে।
এই নিয়ে টানা ৬ ইনিংসে মুমিনুল আউট হলেন দশের নিচে। ফিফটি নেই সবশেষ ৯ ইনিংসে।
মুমিনুল নিজে সিরিজের শুরু থেকেই ফর্মের প্রশ্নে বারবার বলে আসছেন, নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা বা দুর্ভাবনা তার নেই। এবার মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে পরিসংখ্যানের ঢাল দিয়ে অধিনায়ককে আড়াল করতে চাইলেন কোচ ডমিঙ্গো।
“তার রেকর্ড দুর্দান্ত, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তার। ১১টি টেস্ট সেঞ্চুরি তার, সম্ভবত ৫১ টেস্টে (৫৩)। আমাদের দলে আরও দুর্দান্ত ক্রিকেটার যারা আছে, মুশি যেমন ৯টি সেঞ্চুরি করল ৭৫ ম্যাচে (৮২)। মুমিনুল ৫৩-৫৪ টেস্টেই ১১টি করেছে। কাজেই সে জানে কীভাবে রান করতে হয়।”
“সব ক্রিকেটারের ফর্ম কোনো একটা পর্যায়ে পড়তির দিকে থাকে, সব ক্রিকেটার আত্মবিশ্বাস হারায়। কোচের দায়িত্ব ওই সময়গুলোতে ক্রিকেটারদের পাশে থাকা এবং এটা নিশ্চিত করা যেন ওই ক্রিকেটার বাজে সময় কাটিয়ে উঠতে পারে। কারণ, সবাইকেই এটার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।”
মুমিনুলের সেঞ্চুরির হার বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ভালো, এটা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি তার বর্তমান পারফরম্যান্সের দীনতাও। তার ১১ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল ৪৩ টেস্টেই, এখন খেলছেন ৫৩তম টেস্ট। ১৮ ইনিংসে তার নেই শতরান।
১৩ টেস্ট শেষে তার গড় ছিল ৬১.৮৫, ২৬ টেস্ট শেষে তা কমে হয় ৪৮.২০। এখন তা নেমে হয়েছে ৩৮.৭৩। তার ক্যারিয়ারে ব্যাটিং গড় এতটা নিচে নামেনি আগে।
ডমিঙ্গোর কাছে তাই সরাসরি প্রশ্ন, মুমিনুল কি অফ ফর্মে? বাংলাদেশ কোচের উত্তরটি হলো কৌতূহল জাগানিয়া।
“আমার মনে হয় না তার ‘অফ ফর্ম’, সে স্রেফ ‘আউট অব রান’, রান পাচ্ছে না। আজকে সকালে নেটে তাকে দেখেছি আমি, খুব ভালো মনে হয়েছে সেখানে। ব্যাটিংয়ের সময় পজিশনে খুব ভালোভাবে গিয়েছে। তো, সে আসলে ‘আউট অফ রানস, নট আউট অফ ফর্ম।”
মুমিনুলের ফর্ম লম্বা সময় ধরে পড়তির দিকে, এটা মানতেও নারাজ ডমিঙ্গো।
“আপনি বললেন লম্বা সময়, অথচ চার টেস্ট আগেই সে ৮৮ রানের একটি অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে। মাত্র চারটি টেস্ট আগেই, নিউ জিল্যান্ডে। এরপর ক্রাইস্টচার্চে একটি টেস্টে সে ৩০ করেছ (৩৭)। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টেস্ট, এখানে প্রথম টেস্ট আর এটি। এটা তাই লম্বা সময় নয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দারুণ ইনিংস খেলে সে আমাদের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল।”
“সে কোয়ালিটি ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্ট প্রতি সেঞ্চুরি তারই সবচেয়ে বেশি। তার বড় রান দুয়ারে কড়া নাড়ছে, আমার কোনো সন্দেহই নেই।”
চার টেস্ট আগে মুমিনুল ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছেন বটে। তবে সেই ইনিংসের আগে চার ইনিংস আবার আউট হন দশের নিচেই। সব মিলিয়ে টানা ১৮ ইনিংস তার সেঞ্চুরি নেই, এই সময়ে ফিফটি করেছেন কেবল দুটি। শেষ ১৪ ইনিংসের মধ্যে ১১টিতেই আউট হয়েছেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে।
গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকে এই টেস্টের প্রথম ইনিংস পর্যন্ত ৮ টেস্ট খেলে তার গড় ১৩.৫৩।