দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৯ ওভারে ৭৬/০ |
বাংলাদেশের ভালো দিন
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে নিজেকে মেলে ধরলেন নাঈম হাসান। তার জ্বলে ওঠার দিনে ওপেনাররাও ভালো করলেন। অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করলেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন ভালোই কাটল বাংলাদেশের।
সোমবার শেষ সেশনে শ্রীলঙ্কাকে ৩৯৭ রানে থামিয়ে দিয়ে ১৯ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। তামিম-জয়ের দৃঢ়তায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৬ রান তুলেছে স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের চেয়ে এখনও ৩২১ রানে পিছিয়ে মুমিনুল হকের দল।
আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ৫ চারে ৫২ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত আছেন অভিজ্ঞ তামিম। সবশেষ টেস্টে দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফেরা জয় এগোচ্ছেন সাবধানে। তিনিও অবশ্য চার মেরেছেন পাঁচটি। ৬৬ বলে খেলছেন ৩১ রানে।
দিনের শেষটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির হলেও শুরুটা ছিল অস্বস্তির। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাট যে ভোগাচ্ছিল তাদের। শেষ পর্যন্ত ম্যাথিউসকে ১৯৯ রানে ফিরিয়েই লঙ্কানদের ৪০০ রানের আগে থামিয়ে দেন নাঈম।
১০৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন এই অফ স্পিনার। দারুণ বোলিং উপহার দেন সাকিব আল হাসানও। দুই দিন মিলিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। একটি প্রাপ্তি তাইজুল ইসলামের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৯৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৯ ওভারে ৭৬/০ (জয় ৩১*, তামিম ৩৫*; বিশ্ব ৪-০-১৭-০, আসিথা ৪-১-১৯-০, রমেশ ৭-১-১৯-০, এম্বুলদেনিয়া ৪-০-১৯-০)
শুরুর জুটিতে পঞ্চাশ
প্রতিপক্ষকে চারশ রানের নিচে আটকে রাখার লক্ষ্য পূরণের পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হলো ভালো। উদ্বোধনী জুটিতেই পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে দলটির রান।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮। সবশেষ ১৩ ইনিংসে এটি দলটির প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া উদ্বোধনী জুটি।
দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। অভিজ্ঞ তামিম ব্যাটিং করছেন অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে। ৪ চারে ৩২ রান করে ফেলেছেন তিনি ৪৪ বলে।
সতর্ক ব্যাটিং করছেন জয়। আগের টেস্টে দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফেরা এই তরুণ ৩ চারে ৪৯ বলে করেছেন ২১ রান।
ম্যাথিউসের ১ রানের আক্ষেপ, ৩৯৭ রানে শেষ শ্রীলঙ্কা
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে লড়ে গেলেন একাই। সম্ভাবনা জাগালেন ডাবল সেঞ্চুরির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্রেফ এক রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হলো অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। শ্রীলঙ্কার মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানের হতাশার দিনে বল হাতে আলো ছড়ালেন নাঈম হাসান। তাতে প্রতিপক্ষকে চারশর আগে থামানোর লক্ষ্য পূরণ হলো বাংলাদেশের।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে ৩৯৭ রানে।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া ম্যাথিউস করেন ১৯৯ রান। তার ৩৯৭ বলের ইনিংসটি গড়া ১৯ চার ও এক ছক্কায়। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই রানে আউট হলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে সানাৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গী হয় এই হতাশা।
২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন ম্যাথিউস। ৯৯ ও ১৯৯ রানে আউট হওয়া একমাত্র টেস্ট ব্যাটসম্যান তিনি।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় পাঁচ উইকেট নেওয়া নাঈমই ফেরান ম্যাথিউসকে। ১৫৩তম ওভারের শেষ বলটি উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে স্লগ করেন ম্যাথিউস। ব্যাটসম্যানের মুভমেন্ট বুঝতে পেরে বল কিছুটা টেনে দেন নাঈম।
তাতে ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারেননি লঙ্কান মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ নিয়ে তার দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভেঙে দেন সাকিব আল হাসান।
প্রথম দিন দুই উইকেট নেওয়া নাঈম এদিন নেন আরও চারটি। ১০৫ রানে এই অফ স্পিনারের শিকার মোট ৬ উইকেট। যা তরুণ এই স্পিনারের ক্যারিয়ার সেরা।
শ্রীলঙ্কার সবগুলো উইকেটই নেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। কোনো বোলিং অনুশীলন করা ছাড়াই খেলতে নেমে সাকিব ছিলেন দারুণ ছন্দে। ৩৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে স্রেফ ৬০ রান দিয়ে বাঁহাতি এই স্পিনারের শিকার ৩ উইকেট। একটি উইকেট পেয়েছেন অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম।
৫০০ রানের লক্ষ্য নিয়ে সোমবার দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরুই এনে দেন দিনেশ চান্দিমাল ও ম্যাথিউস। এই দুইজনের ১৩৬ রানের জুটির পথে ৬৬ রান করেন চান্দিমাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (আগের দিন ২৫৮/৪) (ম্যাথিউস ১৯৯, চান্দিমাল ৬৬, ডিকভেলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিথা ১; শরিফুল ২০-৩-৫৫-০, খালেদ ১৬-১-৬৬-০, নাঈম ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ৪৮-১২-১০৭-১, সাকিব ৩৯-১২-৬০-৩)
শুরুতে ছিলেন না দলেই। মেহেদী হাসান মিরাজ চোটে পড়ায় সুযোগ মেলে দলে। এরপর সুযোগ মিলে যায় একাদশেও। দুই উইকেট পেলেও প্রথম দিন ছিলেন কিছুটা অধারাবাহিক। দ্বিতীয় দিন দারুণ বোলিংয়ে নিলেন আরও তিন উইকেট নিলেন নাঈম হাসান।
১৪৮তম ওভারে আসিথা ফার্নান্দোকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেন তরুণ এই অফ স্পিনার।
ওভারের পঞ্চম বলটি একটু টার্ন করে ভেতরে ঢোকে। কিন্তু বলের লাইন পড়তে ভুল করেন আসিথা। তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প। ১ রানে ফিরলেন একাদশ ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা আসিথা।
হেলমেটে বলের আঘাতে চা-বিরতির পর আর ব্যাটিংয়ে না নামা বিশ্ব ফার্নান্দো আবারও নেমেছেন ব্যাট হাতে। তিনি খেলছেন ১৭ রানে,তার সঙ্গী ম্যাথিউসের রান ১৯২।
রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া
চা-বিরতির পর প্রথম ওভারেই উইকেট নেওয়ার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান আসিথা ফার্নান্দোকে রান আউট করতে পারল না দলটি।
সাকিব আল হাসানের করা ওভারের পঞ্চম বলটি লেগ সাইডে খেলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা আসিথা ছুটেন রান নিতে।
অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসেন আসিথা। মাহমুদুল হাসান জয়ের করা থ্রো ধরতে পারেননি সাকিব। বেঁচে যান আসিথা।
হেলমেটে বলের আঘাতে মাঠের বাইরে বিশ্ব
থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দিচ্ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। কিন্তু বিশ্ব ফার্নান্দোর এই পথচলা শেষ হলো হেলমেটে বলের আঘাতে। চা-বিরতির পর আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি।
৭৭ বলে খেলে ১৭ রান করেন বিশ্ব। ম্যাথিউসের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটি ১৪১ বলে ৪৭ রানের।
দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে ঘটে এই কাণ্ড। শর্ট বলে বেশ আগেভাগেই চোখ সরিয়ে নিচু হয়ে যান বিশ্ব। তার প্রত্যাশা মতো ওঠেনি বল। বরং বেশ নিচুতে থেকে ছোবল দেয় পেছন দিকে।
তখন অবশ্য তেমন কিছু হয়েছে বলে মনে হয়নি। বরং হাসছিলেন বিশ্ব। ফিজিও মাঠে আসার পর তার সঙ্গে কথা বলে চালিয়ে যান ব্যাটিং। তবে বিরতিতে গিয়ে আর ব্যাটিংয়ে নামেননি।
ম্যাথিউসের সঙ্গে এখন ক্রিজে আছেন একাদশ ব্যাটসম্যান আসিথা ফার্নান্দো। প্রয়োজনে পরে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেন বিশ্ব। এখনও ‘কনকাশন’ বদলি নেওয়ার কথা বলেনি শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের হাত ধরে এসেছিল জোড়া সাফল্য। সম্ভাবনা জেগেছিল শ্রীলঙ্কারকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্বাগতিকদের হতাশ করলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও বিশ্ব ফার্নান্দো।
চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার রান ৮ উইকেটে ৩৭৫। ম্যাথিউস খেলছেন ১৭৮ রান, বিশ্বের রান ১৭। নবম উইকেটে এই দুইজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪৭ রানের।
সাকিবের টানা দুই বলে রমেশ মেন্ডিস ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ফিরলে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের পথ হয়ে ওঠে সহজ। কিন্তু সেখানে বাধা হয়ে আসেন সাকিকের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া বিশ্ব। সতর্ক ব্যাটিংয়ে তিনি ম্যাথিউসকে দিয়ে যান দারুণ সঙ্গ।
স্পিনারদের সঙ্গে দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ খালেদ আহমেদকেও এই সেশনে আবার আক্রমণে আনেন মুমিনুল হক। কিন্তু এই দুইজনের জুটি যেন ভাঙার পথই পাচ্ছিলেন না কেউ।
সেশনের শেষ দিকে সাকিবের বলে যাও একটি সুযোগ এলো, বিশ্বের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দলকে হতাশ করেন মুশফিকুর রহিম।
শেষ ওভারে শরিফুলের একটি বল মাথা নিচু করে ফেলার পরও হেলমেটে লাগে বিশ্বের। তবে গুরুতর কিছু ছিল না। পরে ব্যাটিং চালিয়ে যান বিশ্ব।
দ্বিতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ২৪ ওভার। এই সময় শ্রীলঙ্কা রান তুলতে পেরেছে ৪৮।
সহজ ক্যাচ ছাড়লেন মুশফিক
মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম। বিশ্ব ফার্নান্দোর সহজ ক্যাচ ছাড়লেন তিনি।
১৩৯তম ওভারের তৃতীয় বলটি ঝুলিয়ে দেন সাকিব, উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন বিশ্ব। ব্যাটে-বলে ঠিকমতো করতে পারেননি তিনি। সহজ ক্যাচ যায় মিড-অনে মুশফিকের কাছে। কিন্তু দুই হাতে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি।
১৬ রানে জীবন পান বিশ্ব। সে সময় জুটির রান ছিল ৪৭।
বিশ্ব খেলছেন ৭৫ বলে ১৭ রান করে। ৩৫৩ বল খেলা ম্যাথিউসের রান ১৭৮।
বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছেন ম্যাথিউস-বিশ্ব
লাঞ্চের আগে-পরে চার ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে হুট করেই চাপে পড়া শ্রীলঙ্কাকে টানছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ১০ নম্বরে নামা বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে গড়েছেন প্রতিরোধ।
নবম উইকেটে এই দুইজনের জুটি এগোচ্ছে মন্থর পায়ে। ৯৯ বলে তাদের জুটির রান ২৪। দ্রুত রান তুলতে না পারলেও দুপুরের কড়া রোদে বাংলাদেশের বোলারদের তারা ভোগাচ্ছেন বেশ।
প্রথম দিন ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশের দুটি রিভিউ। দ্বিতীয় দিন সাকিব আল হাসানের করা ১২১তম ওভারে বাকিটাও হারাল তারা।
বাঁহাতি স্পিনারের ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। সাকিব ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসী। সঙ্গে সঙ্গেই অধিনায়ককে রিভিউ নিতে বলেন। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের চাওয়া পূরণ করেন মুমিনুল হক।
কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডেই লেগেছিল আগে, তবে ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। তাই বেঁচে যান বিশ্ব ফার্নান্দো।
দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টানছেন ম্যাথিউস, খেলছেন ১৫৮ রানে। ফার্নান্দোর রান ৩।
লাঞ্চের পর সাকিবের জোড়া আঘাত
লাঞ্চ বিরতির পরও চাপ ধরে রাখল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই দলকে দুটি উইকেট এনে দিলেন সাকিব আল হাসান। রমেশ মেন্ডিসের স্টাম্প এলোমেলো করার পরের বলেই লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ওভারের দ্বিতীয় বলটি জোরের উপর করেন সাকিব। নিচু হয়ে যাওয়া সোজা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি রমেশ। বোল্ড হয়ে যান ১ রান করে।
পরের বলটি হালকা ভেতরে ঢোকে বাঁহাতি এম্বুলদেনিয়ার জন্য। কিন্তু ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি তিনি। জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন ব্যাটসম্যান। ইমপ্যাক্ট ছিল আম্পায়ার্স কল, তাতে টিকে থাকে রিভিউ, তবে ফিরে যেতে হয় ব্যাটসম্যানকে।
পরের ওভারে দেড়শতে পার রাখেন ম্যাথিউস, ২৯৩ বলে। ক্যারিয়ারে লঙ্কান এই মিডল-অর্ডারের ব্যাটসম্যানের এটি চতুর্থ দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস।
১৫৩ রানে খেলছেন ম্যাথিউস। উইকেটে তার সঙ্গী সাকিবের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া বিশ্ব ফার্নান্দো।
নাঈমের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল যেন দাঁড়িয়ে গেলেন দেয়াল হয়ে। শতরান পেরিয়ে তাদের জুটি এগিয়ে যাচ্ছিল আরও সামনের দিকে। একটা সময় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে প্রথম সেশনে হয়তো নিজেদের করে নেবেন তারা। কিন্তু নাঈম হাসানের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াল স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩২৭। ২৮৮ বলে ১৪৭ রানে খেলছেন ম্যাথিউস। ৭ বলে ১ রান করে তার সঙ্গী রমেশ মেন্ডিস।
প্রতিপক্ষকে চারশর আগে গুটিয়ে দেওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ, তা মিইয়ে যেতে বসেছিল ম্যাথিউস ও চান্দিমালের জুটিতে। প্রথম সেশনের শেষ দিকে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ করে দেন নাঈম।
দেরিতে বল হাতে পাওয়া এই অফ স্পিনার দিনে নিজের তৃতীয় ওভারেই ধরেন জোড়া শিকার। ফিফটি করা চান্দিমালকে এলবিডব্লিউ করার পরে বোল্ড করে দেন নিরোশান ডিকভেলাকে।
প্রথম সেশনে ২৬ ওভার খেলা হয়েছে। বাংলাদেশের বোলাররা খুব একটা রান না দিলেও তেমন ভালোও করেননি। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে প্রাপ্তি হয়ে এসেছে নাঈমের ওই দুই উইকেট।
দিনের শুরুতে অবশ্য ১১৯ রানে থাকা ম্যাথিউসকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু তার ব্যাটে বলের স্পর্শ কেউ বুঝতেই পারেননি। তিনি বেঁচে যান কট বিহাইন্ডের হাত থেকে।
নাঈমের জোড়া শিকার
প্রথম দিন শুরুতেই আক্রমণে এলেও দ্বিতীয় দিন নাঈম হাসানকে অপেক্ষায় রাখলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে বল হাতে পাওয়ার পর দলকে হতাশ করেননি তিনি। দিনে নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া শিকার ধরেন তরুণ এই অফ স্পিনার।
বাংলাদেশকে পেলেই ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা দিনেশ চান্দিমাল এবারও জমে গিয়েছিলেন উইকেটে। খেলছিলেন পঞ্চাশ ছুঁয়ে। কিন্তু তাকে ইনিংস বড় করতে দিলেন না নাঈম।
অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় ব্যাটে খেলতে পারেননি চান্দিমাল। এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ভাঙে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সঙ্গে তার ২৮৭ বল স্থায়ী ১৩৬ রানের জুটি।
রিভিউ নিতে দেরি করেননি চান্দিমাল। কিন্তু বাঁচতে পারেননি তিনি। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ১৪৮ বলে ৬৬ রান করেন লঙ্কান এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে নাঈমকে সুইপ করে তিন রান নেন নিরোশান ডিকভেলা। কিন্তু এক বল পর ফিরে যান ওই রানেই। শরীরের খুব কাছের বল কাট করার চেষ্টায় সফল হননি। বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস খেলছেন ১৪৪ রানে। উইকেটে তার সঙ্গী রমেশ মেন্ডিস।
বাংলাদেশকে পেলেই যেন জ্বলে ওঠে দিনেশ চান্দিমালের ব্যাট। শ্রীলঙ্কার মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান এবার করলেন ফিফটি, ১২৮ বলে।
১০৭তম ওভারে তাইজুল ইসলামের ফুল লেংথ বল লং-অফে পাঠিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে পঞ্চাশে পৌঁছান তিনি। এটি তার ২১তম ফিফটি। ইনিংসে দুটি ছক্কার সঙ্গে মারেন একটি চার।
বাংলাদেশের বিপক্ষে চান্দিমালের এটি তৃতীয় ফিফটি। ক্যারিয়ারে ১১ সেঞ্চুরির চারটিই করেছেন তিনি দলটির বিপক্ষে।
৫১ রানে খেলছেন তিনি। তার সঙ্গে শতরানের জুটি গড়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের রান ১৩৭।
শ্রীলঙ্কার ভালো শুরু
শ্রীলঙ্কাকে চারশ রানের নিচে থামাতে দিনের শুরুতে দুটি উইকেট চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের হতাশায় ডুবিয়ে প্রথম ঘণ্টায় অবিচ্ছিন্ন থেকে ৩৪ রান যোগ করেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল।
আগের দিনের এই দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন বড় সংগ্রহের দিকে। প্রথম ঘণ্টায় একটাই সুযোগ এসেছিল তাদের বিচ্ছিন্ন করার। কিন্তু ম্যাথিউসের ব্যাটে বলের স্পর্শ কেউ বুঝতেই পারেননি। তিনি বেঁচে যান কট বিহাইন্ডের হাত থেকে, হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের সুযোগ।
প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে খুব বেশি রান দেননি বোলাররা তবে ব্যাটসম্যানদের খুব একটা ভাবাতেও পারেননি তারা।
ম্যাথিউস ও চান্দিমালের জুটি শতরান ছাড়িয়ে গেছে। ইনিংসে এখন পর্যন্ত লঙ্কানদের প্রথম শতরানের জুটি এটি।
১০৪ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ২৯২ রান শ্রীলঙ্কার। ম্যাথিউস খেলছেন ১৩৫ রানে, চান্দিমালের রান ৪৭।
ম্যাথিউস-চান্দিমালের জুটিতে একশ
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন দিনেশ চান্দিমাল। তাদের জুটি পৌঁছে গেছে শতরানে।
৯৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিল জুটি, একশ এলো ২০৮ বলে। প্রথম দিন তারা শেষ করছিলেন ৭৫ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থেকে।
ম্যাথিউস ও চান্দিমালের হাত ধরে ইনিংসে প্রথম শতরানের জুটি পেল শ্রীলঙ্কা।
১৩০ রানে খেলছেন ম্যাথিউস। ফিফটিতে চোখ রেখে এগিয়ে যাওয়া চান্দিমালের রান ৪৩।
শুরুতেই আক্রমণে সাকিব
প্রথম দিন বল হাতে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেকটা সময়। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দিনের ষষ্ঠ ওভারে সাকিবের হাতে বল তুলে দেন মুমিনুল হক। আঁটসাঁট বোলিংয়ে দেন দুই রান।
আগের দিন ৩৫ ওভারের পরে সাকিবকে আক্রমণে আনা হয়। কোভিড থেকে সেরে উঠে কোনো বোলিং অনুশীলন না করেই মাঠে নামা সাকিব ছন্দে ছিলেন শুরু থেকেই। দিনের সেরা বোলার ছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনারই।
৯৭ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ২৭৮। ম্যাথিউস খেলছেন ১২৯ রানে, তার সঙ্গী চান্দিমালের রান ৩৯ রান।
ম্যাথিউসকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া
দিনের চতুর্থ ওভারেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা।
সৈয়দ খালেদ আহমেদের লেংথ বলে খোঁচা মারেন ম্যাথিউস। তবে কেউই বুঝতে পারেননি তার ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়ে কিপার লিটন দাসের হাতে। একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি ভেবে হতাশ দেখায় খালেদ, লিটনদের।
পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে ম্যাথিউসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে লিটনের গ্লাভসে গিয়েছিল বল। সে সময় ১১৯ রানে ছিলেন লঙ্কান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পরের বলেই তিনি মারেন বাউন্ডারি।
আগের দিন ৬৯ রানে স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয়কে ক্যাচ দিয়েই বেঁচে গিয়েছিলেন ম্যাথিউস। এবার বাঁচলেন ক্যাচ হয়েছে কেউ না বোঝায়।
দৃঢ় ভিত পাওয়া শ্রীলঙ্কাকে দ্রুত থামাতে চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ছয় টেস্টে ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবার ঘোচালেন সেই অপূর্ণতা। তার দুর্দান্ত শতকই চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে এগিয়ে রেখেছে শ্রীলঙ্কাকে। তবে শক্ত ভিতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিপক্ষের হাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ দিতে নারাজ বাংলাদেশ। দ্রুতই সফরকারীদের থামিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য মুমিনুল হকের দলের।
ম্যাথিউসের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান করে প্রথম দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা। এখান থেকে ৫০০ রানের সংগ্রহ চায় সফরকারীরা। ৪০০ রানের নিচে থামাতে চায় বাংলাদেশ।
প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৮/৪ (ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, কুসল ৫৪, ম্যাথিউস ১১৪*, ধনাঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৩৪*; শরিফুল ১৩-১-৩৮-০, খালেদ ১১-১-৪৫-০, নাঈম ১৬-২-৭১-২, তাইজুল ৩১-৮-৭৩-১, সাকিব ১৯-৭-২৭-১)।