বাংলাদেশকে হতাশ করে ম্যাথিউসের সেঞ্চুরি

দিনের শেষ বলটি ব্লক করতেই তৃপ্তির ঝলক খেলে গেল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের চোখেমুখে। উইকেটের পেছন থেকে লিটন দাস ‘ফিস্ট বাম্প’ করলেন তার সঙ্গে। ছুটে এসে পিঠ চাপড়ে দিলেন মুশফিকুর রহিমও। ম্যাথিউস ব্যাট হাতে যা করেছেন, তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খুশি হওয়ার কারণ নেই। তবে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি, প্রথম সেশনে ক্রিজে যাওয়ার পর প্রচণ্ড গরমে দিনজুড়ে ব্যাটিংয়ের পর প্রতিপক্ষের এমন অভিনন্দনও তো প্রাপ্য!

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2022, 01:04 PM
Updated : 15 May 2022, 01:15 PM

অভিজ্ঞতা আর নির্ভরতার ভেলায় ম্যাথিউস টেনে নিলেন শ্রীলঙ্কাকে। তার চওড়া ব্যাটের দেয়ালে থমকে গেল বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টা। দিনটি হলো লঙ্কানদের। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে তাদের রান ৪ উইকেটে ২৫৮।

দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ম্যাথিউস অপরাজিত ২১৩ বলে ১১৪ রান করে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত টেস্টে তার প্রথম সেঞ্চুরি এটিই।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পারিশ্রমিক কমিয়ে দেওয়ার পর গত বছর অবসর নিতে চেয়েছিলেন ম্যাথিউস। পরে মত বদলে আবার নিজেকে দলে বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি। ফেরার পর চার টেস্ট খেলে ফিফটি ছিল স্রেফ একটি। এই সেঞ্চুরিতে জানান দিলেন, এখনও দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তিনি।

একটি সুযোগ অবশ্য এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ৬৯ রানে তাইজুলের বলে স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়।

নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের বোলিং ছিল ভালো-মন্দের মিশেল। ইবাদত হোসেনকে বাইরে রেখে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। কিন্তু দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম প্রভাব ফেলতে পারেননি একটুও। মেহেদী হাসান মিরাজ চোটের কারণে না থাকায় টেস্ট দলে ফেরা নাঈম হাসান প্রথম সেশনে দারুণ বোলিংয়ে দুটি উইকেট নিলেও পরে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। তাইজুল ইসলামও ছিলেন না যথেষ্ট ধারাবাহিক।

ব্যতিক্রম কেবল সাকিব আল হাসান। কোভিডমুক্ত হয়ে টেস্টের আগে একদিনের অনুশীলনে একটি বলও তিনি করেননি। অথচ টেস্টের প্রথম দিনে হাত ঘোরালেন ১৯ ওভার। এমন উইকেটে কেমন বল করা উচিত, সেটির প্রামাণ্যচিত্রও মেলে ধরলেন।

খুব দ্রুতই উইকেট পড়ে নিয়ে তিনি নিজের সহজাত গতির চেয়ে একটু ধীরে বোলিং করলেন। ফ্লাইট দিলেন বেশি। উইকেট থেকে কিছুটা সহায়তা আদায় করতে পারলেন কেবল তিনিই। লাইন-লেংথ তো তার বরাবরই আঁটসাঁট। কেবল তাকে সামলাতেই একটু ভোগান্তি হলো লঙ্কানদের।

দিনের শুরুতে যদিও আশার ঝিলিক দেখা গিয়েছিল নাঈমের বোলিংয়ে। টস হেরে বোলিংয়ে নামার পর ম্যাচের প্রথম বলটিই শরিফুল করেন লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। সেই শুরু, পেসাররা কোনো চাপই তৈরি করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অষ্টম ওভারেই আনতে হয় স্পিন, মেলে সাফল্য। লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নেকে ফেরান নাঈম।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে করুনারত্নের রান ছিল ২৪৪, ১১৮ ও ৬৬। এবার তাকে ৯ রানে ফেরাতে পারা বড় স্বস্তির অবশ্যই। প্রথম সেশনে নাঈম আরেকটি উইকেট এনে দেন থিতু হয়ে যাওয়া ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে।

প্রথম সেশনে দুই দল সমানে সমান থাকলেও পরের সেশনেই লাগাম নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। কুসল মেন্ডিস ও ম্যাথিউস গড়ে তোলেন দিনের সেরা জুটি। গত মাসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এসে মোহামেডানের হয়ে দারুণ সেঞ্চুরি করা মেন্ডিস ফিফটি স্পর্শ করেন ৯৩ বলে। ম্যাথিউসের পঞ্চাশ আসে ১১১ বলে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেটই নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

শেষ সেশনে শুরুতেই যেন উপহারস্বরূপ মেলে একটি উইকেট। তাইজুলের একটি শর্ট বল, যেটিতে মারার কথা বাউন্ডারি, সেটিতেই আলতো করে মিড উইকেটে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে মেন্ডিস ফেরেন ৫৪ রানে। জুটি থামে ৯২ রানে।

একটু পরই ম্যাথিউসকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন জয়। পরের ওভারেই সাকিবের দারুণ ডেলিভারিতে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ডাইভিং ক্যাচ নেন জয়। তবে ম্যাথিউসকে আউট করতে না পারার খেসারত দিতেই হয় বাংলাদেশকে।

ধনাঞ্জয়া আউট হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৪ উইকেটে ১৮৩, তখনও বলা যায় দুই দল কাছাকাছি। ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেন পরের জুটিতে। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৭৫ রানের।

দ্বিতীয় নতুন বলের প্রথম বলে চার মেরে ম্যাথিউস সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১৮৩ বলে। সাকিব ও তাইজুলকে দুটি ছক্কার পর চান্দিমাল মন দেন উইকেট আগলে রেখে দিন পার করে দেওয়ায়। তাতে সফলও হন দুজন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৮ টেস্টে চান্দিমালের সেঞ্চুরি ৪টি, ফিফটি দুটি। এবারও তিনি শুরু করেছেন ভালো। ম্যাথিউস তো আছেনই। দ্বিতীয় দিনে এই দুজনকে দ্রুত ফেরাতে না পারলে নিশ্চিতভাবেই বড় রানের বোঝা চাপবে বাংলাদেশের ঘাড়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৮/৪ (ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, কুসল ৫৪, ম্যাথিউস ১১৪*, ধনাঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৩৪*; শরিফুল ১৩-১-৩৮-০, খালেদ ১১-১-৪৫-০, নাঈম ১৬-২-৭১-২, তাইজুল ৩১-৮-৭৩-১, সাকিব ১৯-৭-২৭-১)।