সাকিবকে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর অভিযানে বাংলাদেশ

টেস্টের আগের দিন অনেক সময় ছড়ায় কথার উত্তাপ। কখনও স্পর্শ করে নানা উত্তেজনার আঁচ। চলতে থাকে নানা সমীকরণ। এবার সেসব কিছুই নেই। আগ্রহের কেন্দ্রে যেন কেবল একজনই। অনুশীলনে সবার নজর সাকিব আল হাসানের দিকে। তিনি খেলবেন, নিশ্চিত হতেই যেন যাবতীয় কৌতূহলের সমাপ্তি। এমনকি দুই দলের অনুশীলনেও দেখা গেল না খুব জোর। বাংলাদেশের ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন, শ্রীলঙ্কার অনুশীলনেও দেখা গেল ঢিলেঢালা ভাব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 03:01 PM
Updated : 14 May 2022, 03:40 PM

এই নিরুত্তাপ আবহেই অবশ্য বাংলাদেশ পেয়ে গেছে জ্বলে ওঠার রসদ। সাকিবকে পেয়ে একাদশ নিয়ে দুর্ভাবনাও যেমন অনেকটা দূর হয়েছে, তেমনি ড্রেসিং রুমে মিলেছে উজ্জীবনী পরশ। অপেক্ষা এখন লড়াই শুরু হওয়ার।

দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে খেলা শুরু সকাল ১০টায়।

মূল লড়াইয়ের আগেই কয়েক দফা খেলা হয়ে গেছে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। শুরুতে কোভিড পজিটিভ হয়ে ছিটকে যাওয়া, পরে দ্রুতই আবার নেগেটিভ হয়ে চট্টগ্রামে এসে দলে যোগদান এবং শেষ পর্যন্ত একাদশে জায়গা করে নেওয়া, গত কয়েক দিনে খবরের শিরোনামে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়।’

শারীরিকভাবে তিনি কতটা প্রস্তুত, সেই প্রশ্ন অবশ্য থাকছে। শনিবার অনুশীলনে ৩০ মিনিট ব্যাটিং করা ছাড়া আর কোনো অনুশীলন তিনি করেননি। তবে ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে খুব বেশি অনুশীলন প্রয়োজন নেই, এমনটি তিনি দেখিয়েছেন অনেকবারই। তার মতো অলরাউন্ডার দলে থাকা মানেই নিজেদের শক্তি বেড়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষের জন্য বাড়তি ভাবনা।

সাকিব থাকায় দলের একাদশ বাছাইও কিছুটা সহজ হয়ে গেছে। পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে দলের জন্য। তিনি না থাকলে সেটা নিশ্চিতভাবেই হতো না। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য মুমিনুল নিশ্চিত করে বললেন না, কয় বোলার নিয়ে একাদশ সাজাবেন তারা।

অনুশীলনের ফাঁকে হাস্যেজ্জ্বল মুশফিকুর রহিম ও বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।

“কালকে উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেব, চারটা বোলার নাকি পাঁচটা বোলার। আজকে বলাটা কঠিন। সাকিব ভাই থাকলে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়তে সুবিধা হয়। কালকে উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেব, দুই পেসার নাকি তিন পেসার, নাকি বাড়তি ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রামে যেহেতু রান বেশি হয়, বেশি বোলার দরকার হতে পারে।”

তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংসের সূচনায় মাহমুদুল হাসান জয়, এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও সাকিবের নামগুলি একাদশে নিশ্চিতই। স্পিনে সাকিবের সঙ্গী তাইজুল ইসলাম। আর থাকছেন দুই পেসার। বাকি একটি জায়গায় আরেকজন স্পিনার নেওয়া হলে খেলবেন নাঈম হাসান, বাড়তি ব্যাটসম্যান নিলে ইয়াসির আলি চৌধুরি, অলরাউন্ডার নিলে খেলবেন মোসাদ্দেক হোসেন। আর পেসার তিনজন খেলানো হলে তো বিকল্প আছেই।

বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজটি সুযোগ টেস্টে আবার উন্নতির পথে ফেরার। বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ড সফরে ঐতিহাসিক সেই জয়ের পর নতুন যুগের সূচনা বলে ধরে নেওয়া হলেও আদৌতে সেই আশা পূরণ হয়নি। নিউ জিল্যান্ডে দ্বিতীয় টেস্টে, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টেই মুখ থুবড়ে পড়েছে দল। এবার দেশের মাঠে সুযোগ ঘুরে দাঁড়ানোর।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। ২২ টেস্ট খেলে জয় স্রেফ একটি, ২০১৭ সালে কলম্বোয়। দেশের মাঠে ৮ টেস্ট খেলে জয় নেই একটিও। তবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত চক্রে কেবল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই পয়েন্ট আদায় করতে পেরেছিল বাংলাদেশ, একটি ম্যাচ ড্র করে। এবার মুমিনুলের চাওয়া, আরেক ধাপ এগিয়ে জয়ের আনন্দে অবগাহন করা।

“অবশ্যই (জয় সম্ভব), আমি যখনই খেলি, ম্যাচ জয়ের জন্যই খেলি। এবারও ওই পরিকল্পনা নিয়েই খেলব, জেতার জন্যই নামব। প্রতিটি সেশন যদি জিততে পারি, ১২-১৩ সেশন যদি জিততে পারি, তাহলে ম্যাচ জিতব। ওখানে কোনো জায়গায় ছাড় দেওয়া যাবে না।”

উইকেট পরখ করে দেখছেন শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড, অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ও সহকারী কোচ নাভিদ নওয়াজ।

বাংলাদেশের এই জয়ের আশায় অবশ্য সংশয় জাগতে পারে উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কান অধিনায়কের মূল্যায়নে। ২০১৮ সালে এই মাঠে দুই দলের লড়াই নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছিল রান বন্যায়। স্রেফ আড়াই ইনিংসেই রান উঠেছিল প্রায় সাড়ে পনেরশ। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দিমুথ করুনারত্নে বললেন, এবারও রানের জোয়ারই দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

“উইকেট এখানে খুব নিষ্প্রাণ। প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে ওদেরকে চাপে ফেলতে হবে। এই মাঠে আমাদের সবশেষ ম্যাচেও হাজারের বেশি রান হয়েছিল। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অবশ্য দারুণ দল। তবে আমরাও আগের চেয়ে ভালো করতে পারি। দেখা যাক, কেমন হয়…।”

এই নিষ্প্রাণ উইকেটে সৃষ্টিশীলতা দিয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে হবে, বলছেন করুনারত্নে।

“উইকেট যদিও নিষ্প্রাণ, বোলারদের জন্য কিছুই নেই হয়তো। তবে আমাদেরকে স্মার্ট হতে হবে ২০ উইকেট নিতে। উইকেট থেকে কোনো সহায়তা না পেলে ‘আউট অব দা বক্স’ কিছু ভাবতে ও করতে হবে আমাদের। এই ধরনের উইকেটে আমাদের পরিকল্পনা এরকমই।”

পরিকল্পনা কিছু থাকবে বাংলাদেশেরও। দুই দলই পরিকল্পনায় পরস্পরকে চমকে দিতে পারলে হয়তো জমে উঠবে ম্যাচ। নইলে টেস্টের আগের দিনের আবহের মতো ম্যাচও হয়তো হবে প্রাণহীন!