আর্থিক সংকটের দেশে ক্রিকেটের স্বস্তির ছোঁয়া দিতে চায় শ্রীলঙ্কা দল

দেশ থেকে ভেসে আসছে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের খবর। চলমান সংকট তাতে সমাধানের পথে এগোবে নাকি আরও ঘনীভূত হবে, তা বলবে সময়। তবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা নিজেদের করণীয় ঠিক করে ফেলেছেন। বাংলাদেশ সফরে ক্রিকেট মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই তারা খানিকটা হাসি ফোটাতে চান চরম দুঃসময়ে থাকা দেশবাসীর মুখে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2022, 12:18 PM
Updated : 9 May 2022, 12:18 PM

গত কয়েক মাস ধরেই ভয়াবহ আর্থিক দুযোর্গের সঙ্গে লড়াই করছে শ্রীলঙ্কা। স্বাধীনতার পর এত তীব্র আর্থিক সংকটের মুখোমুখি আগে হয়নি অপরূপ সৌন্দর্যের দ্বীপ দেশটি। দেশের এই অবস্থার মধ্যেই তাদের ক্রিকেট দল বাংলাদেশে এসেছে সফরে।

রোববার ঢাকায় আসার পর সোমবার প্রথম অনুশীলন করে লঙ্কানরা মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ লম্বা সময় চলে তাদের অনুশীলন। প্রথম দিনের অনুশীলনে বেশ গোপনীয়তাও দেখা গেল তাদের। সংবাদকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত রাখেনি তারা অনুশীলন পর্ব।

পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন দলের সহকারী কোচ নাভিদ নওয়াজ। সাবেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বললেন, দেশের আর্থিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ক্রিকেট দলের প্রস্তুতিতে পড়েনি।

“আমাদের ওপর এখনও পর্যন্ত এটার প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। ক্রিকেটারদের বেশির ভাগ ব্যস্ত ছিল ক্রিকেটীয় কার্যক্রম নিয়েই। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেছে তারা। মাস দুয়েক ধরেই তাদের অনুশীলন চলছে। ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব রাখার কোনো নজির আমার চোখে পড়েনি এখনও পর্যন্ত।”

সংকটের প্রভাব ক্রিকেটে না পড়লেও ক্রিকেটের প্রভাব মানুষের মনে ছাপ রাখতে পারে এই সংকট সময়েও। নাভিদ নওয়াজ বললেন, দল হিসেবে তারা এই বাস্তবতা জানেন।

“দেশে খুব বেশি ইতিবাচক কিছু নেই এই মুহূর্তে। তাই দল হিসেবে দেশে কিছু ইতিবাচকতা নিয়ে ফিরতে পারলে দারুণ হবে, যেন দেশের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করা যায়। এটাই মূল ব্যাপার।”

এবার শ্রীলঙ্কার কোচিং স্টাফের অংশ হয়ে বাংলাদেশে এলেও এই নাভিদ নওয়াজ দারুণ পরিচিত মুখ এদেশের ক্রিকেটে। বলা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও তার নাম খোদাই হয়ে গেছে। দেশের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা এসেছে যে তার হাত ধরেই! তার কোচিংয়ে ও নিবিড় তত্ত্বাবধানেই ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

ওই সাফল্যের পর ২০২২ যুব বিশ্বকাপের জন্যও বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। এবার অবশ্য আগেরবারের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি হয়নি। এরপর তিনি ডাক পান দিন দেশ থেকে। বাংলাদেশে লম্বা সময় কোচিং করার পর আরও বড় দায়িত্ব নিয়ে জন্মভূমিতে ফিরতে পারায় দারুণ খুশি ৪৮ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার।

“নিজের দেশে (শ্রীলঙ্কায়) ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। বাংলাদেশে চার বছর উপভোগ করেছি। দারুণ সময় কেটেছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কিছু দিতে পেরেছি এবং চার বছর সময়টার সুবিচার করতে পেরেছি। এখন দেশে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে।”

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যতে থাকা শ্রীলঙ্কা দল বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে এই সফরের দলেও। তাদের নতুন এক পথচলার শুরু হচ্ছে ক্রিস সিলভারউডের কোচিংয়েও। দলে নবীন ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ভালো সমন্বয় আছে বলেই মনে করেন নওয়াজ। তার ধারণা, এই সিরিজে মূল লড়াই হবে দুই দলের ব্যাটিং দিয়ে।

“আমাদের দলটা ভালো। বেশ কয়েকজন তরুণের সঙ্গে অভিজ্ঞ কয়েকজন আছে। আমি বলব, অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয় আছে দলে। জয়-হার নির্ভর করে নির্দিষ্ট দিনের পারফরম্যান্সের ওপর। আমরা খুবই ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী যে, এই ছেলেরা মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে পারবে।”

“আমার মনে হয়, নিশ্চিতভাবেই এটা কঠিন একটি সিরিজ হতে যাচ্ছে। এই সিরিজে মূলত দুই দলের ব্যাটিং গ্রুপের পরীক্ষা হবে। বোলিং গ্রুপ এখনও কিছুটা অনভিজ্ঞ, তবে দুই দলের ব্যাটিং বেশ এগিয়ে।”

শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের কন্ডিশন এমনিতেই কাছাকাছি। এদেশে নিয়মিত সফরেও আসেন লঙ্কানরা। এছাড়াও এখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটে লঙ্কানরা নিয়মিত মুখ। কদিন আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলে গেছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, কুসল মেন্ডিসরা। এই সবকিছুই শ্রীলঙ্কার জন্য ইতিবাচক হয়ে কাজ করবে, আশা নওয়াজের।

“সফরকারী দল হিসেবে আমরা সবসময়ই আগের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করব। আমাদের কয়েকজন ক্রিকেটার আছে, যারা এই কন্ডিশনে অভ্যস্ত, কয়েকজন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলসহ নানা ধরনের টুর্নামেন্টে খেলে গেছে এখানে। কয়েকজন ক্রিকেটে বাংলাদেশে আমাদের সবশেষ টেস্ট সিরিজেও খেলে গেছে। সবাই আশাবাদী এবং খোলা মন নিয়ে অপেক্ষা করছি, সামনে যা-ই আসুক না কেন।”

একদিনের অনুশীলন শেষে মঙ্গল ও বুধবার বিকেএসপিতে বিসিবি একাদশের সঙ্গে দুই দিনের গা গরমের ম্যাচ খেলবে লঙ্কানরা। টেস্ট সিরিজ শুরু আগামী রোববার চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে।