আল আমিনের ৬ উইকেট, চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে রানার্স আপ মাশরাফিরা

এক ম্যাচ শেষে দুই দলেরই উদযাপন করার ঘটনা বিরল। সেই দৃশ্যই দেখা গেল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শেষ হতেই স্টাম্প নিতে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল শেখ জামালের ক্রিকেটারদের। কে বলবে, তারা ম্যাচ হেরেছে বাজেভাবে! আসলে এই ম্যাচে তাদের লেনাদেনা কিছু ছিল না। চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে তারা তো আগেই! আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ শেষে তাই স্মারক স্টাম্প নিতেই আগ্রহ বেশি তাদের। রূপগঞ্জের ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাসটা বোধগম্যই। ম্যাচ জিতে রানার্স আপ হওয়ার লক্ষ্য তারা পূরণ করেছে। উদযাপন তো কিছু হবেই!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 09:56 AM
Updated : 28 April 2022, 09:56 AM

ম্যাচ শেষে একসঙ্গে মাঠে ঢুকলেন রূপগঞ্জ দলের প্রায় সবাই। সেখানে দেখা গেল আল আমিন হোসেনকে। অন্যদের চেয়ে তার হাসিটা যেন একটু বেশিই চওড়া। একাই ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন যে তিনিই।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের এই লড়াই হতে পারত শিরোপা জয়ের মঞ্চ। তবে শেষ ম্যাচের জন্য কিছু ফেলে রাখেনি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আগের ম্যাচ জিতেই তারা নিশ্চিত করেছে ঢাকার শীর্ষ ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম শিরোপা। বুধবারের এই ম্যাচে প্রাপ্তির সমীকরণ তাই ছিল কেবল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। চ্যাম্পিয়নদের ৮ উইকেটে উড়িয়ে সেই চাওয়া পূরণ করেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

শেখ জামালকে মাত্র ১১৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে রূপগঞ্জ ম্যাচ জিতে গেছে ২৫.১ ওভারেই।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শেখ জামালের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেন আল আমিন। অভিজ্ঞ পেসার এবার নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। লিগে আগের ৭ ম্যাচে নিতে পেরেছিলেন স্রেফ ৮ উইকেট। এবার এক ম্যাচেই নিলেন ৩১ রানে ৬ উইকেট।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৩২ বছর বয়সী পেসারের এটি পঞ্চম ৫ উইকেট। এর মধ্যে ৬ উইকেটও ছিল একবার। ২০১৩ সালে আবাহনীর হয়ে সিসিএসের বিপক্ষে ১৬ রানে ৬ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

আল আমিনের উইকেট শিকারের অভিযান শুরু হয় এই ম্যাচে প্রথম ওভার থেকেই। ম্যাচের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সৈকত আলি। পরের বলটি বাতাসে সুইং করে পিচ করে আরও অনেকটা ভেতরে ঢুকে লাগে জহুরুল ইসলামের প্যাডে। তিনে নামা ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ প্রথম বলেই।

শূন্য রানে দুই উইকেট হারানো দলকে টেনে নেন ইমরুল কায়েস। পঞ্চম ওভারে আল আমিনকেই দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। আল আমিনের পরের ওভারেও তিনি আদায় করেন বাউন্ডারি, চার মারেন রূপগঞ্জের নতুন বলের আরেক বোলার চিরাগ জানিকেও।

ইমরুলকে ওই সময়টায় সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিম। সেটি আক্ষরিক অর্থেই ‘সঙ্গ’ দেওয়া, কারণ রান করতেই যে ভুলে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ২৮ বল খেলেও তার রান ছিল শূন্য।

২৯তম বলে অবশেষে চিরাগের বল ফ্লিক করে স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে দুটি রান নেন তিনি। পরের বলে আবার ফ্লিক করে বাউন্ডারি পান ফিল্ডারের ভুলে।

এরপর অবশ্য পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক। সাকিব আল হাসানকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারার পরের বলেই আরেকটি ছক্কা মারেন প্রিয় স্লগ সুইপে। তবে তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হতে দেননি মাশরাফি। রূপগঞ্জ অধিনায়কের অফ কাটারে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মুশফিক ৪৮ বলে ২৫ রান করে।

এই উইকেট নিয়ে লিগে মাশরাফির উইকেট হলো ২০টি। এই ৩৮ বছর বয়সেও লিগে ২০ উইকেট হয়ে গেল তার।

এরপর নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ইমরুল। সাকিবকে ছক্কায় ওড়ান তিনিও। শেখ জামাল অধিনায়ক ফিফটি করেন ৭০ বলে।

ফিফটির পর অবশ্য আর এগোতে পারেননি তিনি। রান আউট হয়ে যান ৫০ রানেই।

আল আমিন বোলিংয়ে ফিরেই পান আরেকটি উইকেটের দেখা। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে বিদায় করেন ভারতীয় পারভেজ রাসুলকে। একটু পর আরেকটি বড় ধাক্কা দেন তিনি শেখ জামালকে। দারুণ এক বাউন্সারে ফিরিয়ে দেন নুরুল হাসান সোহানকে। আগের ম্যাচগুলোয় অসাধারণ খেলে দলের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখা কিপার-ব্যাটসম্যান এবার আউট হন ১৫ রানে।

এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি শেখ জামালের কোনো ব্যাটসম্যান। ভারতীয় অলরাউন্ডার চিরাগ জানি নেন দুটি উইকেট। আল আমিন শেষ দুটি উইকেট এক ওভারেই নিয়ে দেখা পান তার পঞ্চম ও ষষ্ঠ শিকারের।

৩২ রানের মধ্যে শেখ জামাল হারায় শেষ ৭ উইকেট। শেষ ৬ ব্যাটসম্যানের কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।

সহজ রান তাড়ায় রূপগঞ্জ এগিয়ে যায় অনায়াসেই। ওপেনিংয়ে ইরফান শুক্কুর (১৪) যদিও ব্যর্থ হন আবারও। তবে রকিবুল হাসান এক প্রান্তে থেকে এগিয়ে নেন দলকে। তিনে নেমে ৩৩ বলে ৩৬ রানে ক্যামিও খেলেন সাব্বির রহমান। নাঈম ইসলাম ও রকিবুল শেষ করেন কাজ।

৭৯ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন রকিবুল, ১৪ বলে ২৩ রানে নাঈম।

শেষ ৫ ম্যাচে ফিফটি করতে না পারলেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৫৯ রান নিয়ে লিগ শেষ করলেন অভিজ্ঞ নাঈম, ঢাকা লিগে তার সেরা মৌসুম।

শেখ জামালের পরাজয়ের দিনেও দুই উইকেট নিয়ে পারভেজ রাসুল শেষ করলেন লিগের সর্বোচ্চ ২৮ উইকেট নিয়ে। সঙ্গে ব্যাট হাতে ২৯০ রান করে শেখ জামালের শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান এই ভারতীয় ক্রিকেটার।

আরেক ভারতীয় অলরাউন্ডার রূপগঞ্জের চিরাগ জানি টুর্নামেন্ট শেষ করলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ উইকেট নিয়ে। ব্যাট হাতে প্রায় ৫০ গড়ে রান করেন তিনি ৫৯৭।

ম্যাচ শেষে একসঙ্গেই উদযাপন, খুনসুটিতে মেতে উঠলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। ফেভারিটদের তালিকায় না থেকেও শিরোপা জয় করা শেখ জামালের জন্য দারুণ অর্জন নিঃসন্দেহে। গতবার কোনোরকমে রেলিগেশন এড়ানো রূপগঞ্জের জন্য এবার রানার্স আপ হওয়াটাও কম প্রাপ্তি নয় কোনোমতেই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল: ৩৪.৪ ওভারে ১১৬ (সৈকত ০, ইমরুল ৫০, জহুরুল ০, মুশফিক ২৫, সোহান ১৫, রাসুল ৬, তাইবুর ৪, জোসি ১*, আরিফ ০, সুমন ৮, আফ্রিদি ০; আল আমিন ৮.৪-১-৩১-৬, চিরাগ ১০-৩-২৬-২, মাশরাফি ৮-২-২১-১, সাকিব ৫-০-২৮-০, নাবিল ৩-০-১০-০)

রূপগঞ্জ:  ২৫.১ ওভারে ১২০/২ (ইরফান ১৪, রকিবুল ৪০*, সাব্বির ৩৬, নাঈম ২৩*; সুমন ৪-০-২৪-০, রাসুল ১০-২-২০-২, জোসি ৩-০-২৩-০, আরিফ ৫-০-২৫-০, আফ্রিদি ৩-০-২২-০, ইমরুল ০.১-০-৪-০)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আল আমিন হোসেন