বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতিয়ে রশিদ বললেন ‘অসম্ভব নয় কিছুই’

বল হাতে ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে অনেক ম্যাচ জয়ের নায়ক রশিদ খান। ব্যাটিং ঝলকও কম দেখাননি গত কয়েক বছরে। তবে এবার যেন সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেলেন এই আফগান লেগ স্পিনার। আইপিএলে বিস্ময়কর এক ক্যামিও ইনিংসে তিনিই গুজরাট টাইটান্সের অভাবনীয় জয়ের নায়ক। ৪ বলের মধ্যে ৩ ছক্কায় দলকে জিতিয়ে তার উচ্ছ্বসিত উচ্চারণ, ‘বিশ্বাস ছিল নিজের ওপর।’

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 05:25 AM
Updated : 28 April 2022, 07:10 PM

ব্যাটিং নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই কাজ করছেন রশিদ। অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার তাড়নার কথাও বলেছেন বারবার। চাওয়া পূরণের পথে থাকার প্রমাণই যেন দিচ্ছেন তিনি এবারের আইপিএলে।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বুধবার যখন তিনি উইকেটে যান, গুজরাটের প্রয়োজন তখন ৪ ওভারে ৫৬ রান। সেই সমীকরণ ৩ ওভারে দাঁড়ায় ৪৭ রানে। অষ্টাদশ ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে চোখধাঁধানো এক হেলিকপ্টার ফ্লিকে ছক্কা মারেন রশিদ। ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ৩৫ রান, থাঙ্গারাসু নাটরাজনকে চার ও ছক্কা মারেন রাহুল তেওয়াটিয়া।

তারপরও শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২২ রানের। বোলিংয়ে আসেন এবারের আসরে বেশ ভালো বোলিং করা মার্কো ইয়ানসেন। দক্ষিণ আফ্রিকান বাঁহাতি পেসারের করা ওভারের প্রথম বলেই স্লগ করে ছক্কা মারেন তেওয়াটিয়া, পরের বলে আসে সিঙ্গেল। তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার, রশিদ সোজা ব্যাটে ছক্কা মারেন লং অন দিয়ে।

চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে অন সাইডে টানতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে ব্যর্থ রশিদ। পঞ্চম বলে ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে পিচ করাতে পারেননি ইয়ানসেন, লো ফুলটস বলটিতে দারুণ শটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কা মারেন রশিদ। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রানের। বাউন্সারে পুল করে ছক্কা মেরে দেন তিনি।

নিজের পুরনো দলকে হতাশায় ডুবিয়ে যেন বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন রশিদ খান। অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ৩১ রান করে। তেওয়াটিয়া অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৪০ রান করে।

এবারের আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষেও দলের জয়ে ব্যাট হাতে দারুণ অবদান ছিল রশিদের। শেষ ৩ ওভারে সেদিন প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। রশিদের ২১ বলে ৪০ রানের ইনিংস দলকে এগিয়ে নেয় জয়ের দিকে।

সেদিন রশিদ কাজ শেষ করে ফিরতে পারেননি। আউট হয়ে যান কাছে গিয়ে। দলকে জিতিয়ে ফেরেন ডেভিড মিলার। হায়দরাবাদের বিপক্ষে বুধবার ব্যাট হাতে আর কোনো ভুল করেননি রশিদ।

ম্যাচ শেষে রশিদ বললেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যে প্রবল আস্থা ছিল তার।

“খুব ভালো লাগছে। ব্যাপারটি ছিল সঠিক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামা, আত্মবিশ্বাস রাখা, শেপ ঠিক রেখে শট খেলা। ওদের বিপক্ষে (নিজের পুরনো দল) এমন কিছু করতে পেরে আমি খুশি, তবে আমি নিজের খেলাটাই খেলার চেষ্টা করছিলাম এবং নিজের ব্যাটিংয়ে ভরসা করছিলাম, যেটি নিয়ে আমি বছর দুয়েক ধরে কাজ করছি।”

গুজরাটের বোলিং ইনিংসের শেষ ওভারে লকি ফার্গুসনের শেষ ওভারে চার ছক্কায় ২৫ রান নেয় হায়দরাবাদ। ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন ইয়ানসেন, শেষ তিন বল টানা ছক্কায় ওড়ান শশাঙ্ক সিং। রশিদের তাই বিশ্বাস ছিল, তারাও শেষ ওভারে অমন কিছু করতে পারবেন।

“২২ রান যখন প্রয়োজন ছিল, আমি তেওয়াটিয়াকে বলেছিলাম, ‘দেখো, আমাদের সেরা বোলার ফার্গুসনের বোলিংয়েই আমরা ২৫ রান দিয়েছিলাম। আমাদেরও বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের ওপর। একটি বল যদি মিস হয়েও যায়, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। শক্ত থেকে শেষ করতে হবে এবং যতটা সম্ভব কাছাকাছি যেতে হবে। শেপ ঠিক রেখে জোরে মারতে হবে। বিশ্বাস রাখলে সবকিছুই সম্ভব।’ এটাই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। সৌভাগ্যবশত চারটি ছক্কা পেয়ে গেছি।”

ব্যাট হাতে জয়ের নায়ক হলেও এ দিন বোলিংয়ে রশিদের ছিল বিরল বাজে দেন। ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। দায়টা নিজের ওপরই নিয়ে রশিদ বললেন, ভুল থেকে তিনি শিখবেন।

“যতটা ভালো বোলিং করা উচিত ছিল, ততটা পারিনি। চার-পাঁচটি বাজে ডেলিভারি করেছি, যেটির খেসারত দিতে হয়েছে। এই ধরনের (ব্যাটিং সহায়ক) উইকেটে লাইন-লেংথ ভুল করা যাবে না। কিন্তু আমি এটিই করেছি।”

“ভালো বোলিং করিনি, তবে আমার শেখার জন্য এটি ছিল ভালো অভিজ্ঞতা। অবশ্যই চেষ্টা করব পরের ম্যাচে ভুলগুলির পুনরাবৃত্তি না করতে।“