সাব্বির-সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিং, তবে বড় জয়ের পরও হতাশ মাশরাফিরা

একটুর জন্য দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়তে পারলেন না সাকিব আল হাসান। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না সাব্বির রহমান। কাছাকাছি গিয়েও ফিফটি হলো না রকিবুল হাসান ও নাঈম ইসলামের। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অবশ্য লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে এগিয়ে দিল জয়ের পথে। তবে বড় জয়ের পরও তারা বড় হতাশার খবর পেল অন্য মাঠ থেকে। ভেসে এলো তাদের শিরোপা স্বপ্নের মৃত্যুর খবর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2022, 02:41 PM
Updated : 26 April 2022, 03:14 PM

বিকেএসপিতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ১৯৬ রানে বিধ্বস্ত করে রূপগঞ্জ তাকিয়ে ছিল মিরপুরে, শেখ জামালের হারের আশায়। সেই চাওয়া পূরণ হয়নি তাদের। আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এবারের লিগের সবচেয়ে বড় জয়ের দিনেও তাই শেষ পর্যন্ত হতাশাই সঙ্গী মাশরাফি বিন মুর্তজার রূপগঞ্জের।

নিজেদের কাজটা এ দিন ঠিকঠাকই করে রূপগঞ্জ। বিকেএসপিতে তারা ৫০ ওভারে তোলে ২৯৩ রান।

আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে সাব্বির ফেরেন ৯০ রান করে। পাঁচে নামা সাকিব তাণ্ডব চালিয়ে খেলেন ২৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। ওপেনার রকিবুল হাসান করেন ৪৭, চারে নামা নাঈম ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৪২।

পরে সব আলো যেন কেড়ে নেন চিরাগ জানি। রান তাড়ায় গাজী গ্রুপের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ে ভারতীয় পেস বোলিং অলরাউন্ডারের সামনে। গুটিয়ে যায় তারা স্রেফ ৯৭ রানে।

১৫ রানে ৫ উইকেট নেন চিরাগ, লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে যা তার সেরা বোলিং।

রূপগঞ্জের শুরুটাও এ দিন ছিল ভালো। মৌসুমজুড়ে উদ্বোধনী জুটিতে ধুঁকতে থাকা দল এদিন শুরুর জুটিতে পায় ৭১ রান।

মাহমুদুল হাসানকে স্কুপ খেলার চেষ্টায় রকিবুল (৫৬ বলে ৪৭) বোল্ড হলে ভাঙে জুটি। কয়েক ওভার পর ফিরে যান আরেক ওপেনার ইরফান শুক্কুরও (৪৭ বলে ২৯)।

তিনে নেমে সাব্বির দলকে এগিয়ে নেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। তৃতীয় উইকেটে নাঈম ইসলামের সঙ্গে গড়েন ১০৩ রানের জুটি।

ভালো জুটি গড়ে উঠলেও রানের গতিতে দম দেওয়ার তাড়া ছিল এক পর্যায়ে। বিশেষ করে নাঈম একটু বেশি বল খেলে ফেলেন। সেটি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আউট হন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল আতিককে স্লগ সুইপ খেলে (৬৮ বলে ৪২)।

রূপগঞ্জের রোমাঞ্চকর সময়টা আসে এরপর। সাব্বির ততক্ষণে উইকেটে জমে গেছেন। সাকিব উইকেটে গিয়ে তোলেন ঝড়। ৫৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে সাব্বিরও আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন।

সাকিবের ব্যাটে প্রতিপক্ষের ধ্বংসের শুরু ৪০তম ওভারে। বাঁহাতি স্পিনার আতিকের বলে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় শুরু। পরের বলে কাট করে মারেন চার। পরেরটি বিশাল ছক্কায় ওড়ান স্লগ সুইপে। পরের বলে আবার স্লগ করেন, এবার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে কিপারের পাশ দিয়ে বল যায় থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে।

তার উত্তাল যাত্রা চলতেই থাকে পরের ওভারগুলোতে। তার রান এক পর্যায়ে দাঁড়ায় ১৪ বলে ৩৯। পরের বলে নেন সিঙ্গেল।

পরের দুই বলে চার-ছক্কা মারতে পারলেই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দেশের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড হয়ে যেত সাকিবের। সেটি আর পারেননি তিনি। তবে আল আমিনকে আরেকটি ছক্কা মারেন ওয়াইড লং অফ দিয়ে। ওই ওভারেই ফিফটি স্পর্শ করেন ২১ বলে।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি। দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ফরহাদ রেজার, ২০১৯ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে শেখ জামালর ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ১৮ বলে।

সাকিবের ইনিংস থামে ২৬ বলে ৫৯ রান করে আল আমিনের বলে পয়েন্ট ধরা পড়ে। সাব্বির তখন এগোচ্ছেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু থমকে যান কাছে গিয়ে।

৪৯তম ওভারে পেসার মারাজ মাহবুবের বলে স্কুপ করতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি ঠিকঠাক। বল আলতো করে ওপরে উঠে আশ্রয় নেয় কিপার আকবর আলির হাতে। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সাব্বির যদিও দেখাচ্ছিলেন, বল তার উরুতে লেগে ওপরে উঠছে।

তার ইনিংস থামে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৩ বলে ৯০ রান করে।

রূপগঞ্জের পরের দিকে ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তুলতে পারেননি। ১০ রানের মধ্যে পড়ে যায় ৫ উইকেট। ৩০০ রান তাই ছোঁয়া হয়নি তাদের।

গাজী গ্রুপের জন্য অবশ্য এই রানই হয়ে পড়ে পাহাড়সম। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাদের দুই ওপেনারকে ফেরান আল আমিন হোসেন। এরপর চিরাগ জানির আগুনে বোলিংয়ে ব্যাটিং লাইন আপ হয়ে পড়ে ধ্বংসস্তুপ!

নিজের চার ওভারের মধ্যে চার ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন চিরাগ। তার বোলিং ফিগার তখন ৪-৩-১-৪! গাজী গ্রুপ ৩৪ রানে হারায় ৬ উইকেট।

ম্যাচের ভাগ্য ততক্ষণে পরিষ্কার। খানিকটা লড়াই করেন এসএম মেহরব ও হুসনা হাবিব। সপ্তম উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়েন দুজন। ৩২ রান করা হুসনা হাবিবকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সাকিব। এরপর আরেক দফা ধস। ৭ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে গাজী গ্রুপ গুটিয়ে যায় ৩০ ওভারের আগেই।

রূপগঞ্জ তখন মাঠ ছাড়ে উল্লসিত হয়েই। কিন্তু তাদের আনন্দে ভাটা পড়ে আরেক ম্যাচে শেখ জামালের সাফল্যে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৯৩/৯ (ইরফান শুক্কুর ২৯, রকিবুল ৪৭, সাব্বির ৯০, সাকিব ৫৯, চিরাগ ৫, মুক্তার ৩, তানবীর ২, মাশরাফি২, আল আমিন ০*, নাবিল ০*; খালেদ ১০-০-৫৬-২, আরাফাত সানি ৫-০-৩৪-০, হুসনা হাবিব ৮-০-৩৫-০, মাহমুদুল ৭-০-২৩-১, আতিক ৮-১-৫১-২, মারাজ ৭-০-৩৮-২, আল আমিন জুনি. ৫-০-৫২-১)

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২৯.২ ওভারে ৯৭ (আরাফাত সানি ১৯, মাহমুদুল ৫, আল আমিন জুনি. ০, আকবর ৫, মেহরব ২৭, সাঈদ ০, মারাজ ০, হুসনা হাবিব ৩২, মারুফ ৪, আতিক ০, খালেদ ০*; সাকিব ৭-০-৩১-১, আল আমিন ৫-৩-২৮-২, চিরাগ ৭.২-৩-১৫-৫, মাশরাফি ২-০-৭-০, নাবিল ৪-০-১২-০, নাঈম ৪-১-৪-২)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১৯৬ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাব্বির রহমান