পয়েন্ট থেকে তাইজুল ইসলামের নিখুঁত থ্রো ভেঙে দিল স্টাম্প, হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়লেন সাকিব আল হাসান। শেষ ভরসাকে হারিয়ে তখন মাথায় হাত লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। দলটির হার হয়তো ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ক্রিকেট তার অননুমেয় চরিত্র আর অনিশ্চয়তার রূপ মেলে ধরল আরও একবার। অষ্টম উইকেট জুটিতে মুক্তার আলি ও তানবীর হায়দারের ব্যাটে অবিশ্বাস্যভাবে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে হারিয়ে দিল রূপগঞ্জ।
Published : 21 Apr 2022, 08:34 PM
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে বৃহস্পতিবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুপার লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয় জাতীয় তারকায় ঠাসা দুই দল। যেখানে তামিম ইকবাল, মুমিনুল হকদের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি-সাকিবরা।
বৃষ্টির বাধায় ৩৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল রূপগঞ্জ। শেষ পর্যন্ত মুক্তার ও তানবীরের ৭৫ বলে ৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২ বল আগে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় মাশরাফির দল।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব যখন ফিরলেন জয়ের জন্য তখনও ৭৭ বলে ৬৯ রান দরকার রূপগঞ্জের। মুক্তার ও তানবীর শুরুতে ব্যাটে-বলে করতে ধুঁকছিলেন। তাতে লক্ষ্য নাগাল থেকে আরও দূরে যেতে শুরু করেছিল দলটির।
শেষ ৩৬ বলে যখন চাই ৫৩ রান, মুক্তারের রান তখন ২৪ বলে ৫, তানবীরের ২৬ বলে ১১। রকিবুল হাসানকে টানা দুই চার মেরে বল-রানের ব্যবধান কিছুটা কমিয়ে আনেন তানবীর।
যুব বিশ্বকাপজয়ী স্পিনার রকিবুলকে পরের ওভারে ছক্কায় ওড়ানোর পর রেজাউর রহমান রাজাকে দুই চার মারেন মুক্তার। শেষ ওভারে ৯ রানের সমীকরণে মেহেদি হাসানের প্রথম তিন বলে আসে ৪ চারে। চতুর্থ বলে লং-অফ দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দলকে অসাধারণ এক জয়ের আনন্দে ভাসান মুক্তার।
৪ চারে ৩৯ বলে ৩১ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার তানবীর। দুটি করে ছক্কা-চারে ৪৫ বলে ৩৯ রান করে ম্যাচের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মুক্তার।
মাঠ ভেজা থাকায় দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি প্রাইম ব্যাংকের। ৭২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
এবারের লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আল আমিন হোসেনকে দারুণ এক ফ্লিক শটে ছক্কায় ওড়ান তামিম। লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা সাকিবের দ্বিতীয় বলে পুল করে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। করেন স্রেফ ৮ রান।
সাকিবের এই লিগে খেলার কথা ছিল মোহামেডানের হয়ে। তবে শুরুতে বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ও পরে পারিবারিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় লিগে আর মাঠে নামা হয়নি তার। এর ফাঁকে মোহামেডানও ব্যর্থ হয় সুপার লিগে উঠতে। কোনো ম্যাচ না খেলা ক্রিকেটারদের অন্য দলে নাম লেখানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি মাঠে নামেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে। প্রায় এক মাস পর মাঠে নেমে শুরু করেন উইকেট মেডেন দিয়ে।
শাহাদাত হোসেনকে শূন্য রানে বিদায় করেন নাবিল সামাদ। নিজের তৃতীয় বলে চারে নামা বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুলকে (১৩) ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন কাভারে থাকা চিরাগ জানি।
নিজের তৃতীয় ওভারেই মোহাম্মদ মিঠুনকে ফেরাতে পারতেন সাকিব। কিন্তু সহজ ফিরতি ক্যাচ ছেড়ে দেন তিনি। পরে মিঠুনকে এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন মাশরাফি। নাসির হোসেনকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান সাকিব।
বিপর্যয়ে পড়া দলকে পথে ফেরান এনামুল হক ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। এক প্রান্তে নিজের মতো খেলে যান এনামুল। ছন্দে থাকা এই ব্যাটসম্যান ৬২ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি।
এক ছক্কা ও ৬ চারে ৭৩ রান করা এনামুলের বিদায়ে ভাঙে ৭০ বলে ৬৭ রানের জুটি। এই ইনিংসের পথে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। এখন পর্যন্ত দুই সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে তার রান ৮৭৮।
আগের রেকর্ডটি ছিল সাইফ হাসানের। ২০১৯ সালের লিগে প্রাইম দোলেশ্বর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ৮১৪ রান করেছিলেন এই ওপেনার। ওই বছরের লিগেই লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ৮০৭ করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
ইয়াসির ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে বোল্ড হয়ে যান চিরাগ জানির বলে। স্রেফ ৭ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় প্রাইম ব্যাংক।
রান তাড়ায় মেহেদি হাসানকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে দ্রুত ফেরেন ইরফান শুক্কুর। তাইজুল ইসলামের বলে তিনে নামা সাব্বির রহমানের ক্যাচ ছেড়ে দেন মুমিনুল।
পরে রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান রকিবুল হাসান। যদিও তাকে আউটটি নিয়ে অসন্তুষ্ট দেখা যায়। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলেন অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়েন হতাশা নিয়ে।
বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল কট বিহাইন্ড করে দেন নাঈম ইসলামকে। এক ওভার পর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি স্টাম্প এলোমেলো করে দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাব্বিরের (২৬)।
নাসিরকে ছক্কার চেষ্টায় ভারতের চিরাগ জানি ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। মাশরাফিকে বোল্ড করে দেন রেজাউর। এক ওভার পরই পাঁচে নামা সাকিবের (২১) বিদায়।
এরপর মুক্তার ও তানবীরের সেই দুর্দান্ত জুটি এবং লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের জয়োল্লাস।
১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে দুই নম্বরে রূপগঞ্জ। ২২ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জয়ের পথে ছুটে চলছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩১.২ ওভারে ১৫২ (এনামুল ৭৩, তামিম ৮, শাহাদাত ০, মুমিনুল ১৩, মিঠুন ৩, নাসির ৪, ইয়াসির ৩৯, মেহেদি ৮*, রকিবুল ০, তাইজুল ২, রেজাউর ১; নাবিল ৭-০-২৪-১, আল আমিন ৪-০-৩০-১, সাকিব ৭-১-১৯-২, নাঈম ২-০-১৩-০, চিরাগ ৩.২-০-২০-২, মাশরাফি ৬-০-৩৩-২, তানবীর ২-০-১২-০)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৩২.৪ ওভারে ১৫৪/৭ (ইরফান শুক্কুর ৫, রকিবুল ৩, সাব্বির ২৬, নাঈম ৫, সাকিব ২১, চিরাগ ১৪, মাশরাফি ৬, তানবীর ৩১*, মুক্তার ৩৯*; মেহেদি ৫.৪-১-৩২-১, রকিবুল ৭-১-৩৬-২, তাইজুল ৭-০-৩৩-০, নাসির ৫-০-২১-১, রেজাউর ৭-১-২১-১, মুমিনুল ১-০-৯-০)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুক্তার আলি