ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বৃহস্পতিবার ২৭ রানে জিতেছে আকবর আলির দল। সুপার লিগে আবাহনীর এটি টানা দ্বিতীয় হার।
মাঠ ভেজা থাকায় ৩৬ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৬ উইকেটে ২৭৬ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে গাজী। ৯ বল বাকি থাকতে ২৪৯ রানে থমকে যায় আবাহনীর ইনিংস।
৪.৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে আবাহনীর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার আল আমিন জুনিয়র। নাজমুল হোসেন শান্তকে বিদায় করে বিপজ্জনক জুটি ভাঙার পর সবচেয়ে বড় বাধা মোসাদ্দেক হোসেনকেও আউট করেন তিনি। ছাড়িয়ে যান আগের সেরা (৫/২৫) বোলিং।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে মেহেদি মারুফ ও মাহমুদুল হাসানের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় গাজী। প্রথম ওভারে সাইফ উদ্দিনকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারার পর লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান মারুফ। পেস বোলিং অলরাউন্ডারের পরের ওভারে মারেন দুটি চার।
প্রথম চার ওভারে একরকম দর্শক হয়ে থাকা মাহমুদুল চড়াও হন তানভির ইসলামের উপর। বাঁহাতি স্পিনারকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কার পর মারেন চার। এরপর থেকে প্রতি ওভারেই আসতে থাকে বাউন্ডারি।
নবম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর সেই ওভারেই ফাইন লেগে ধরা পড়েন মারুফ। ৩১ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৩৫। ভাঙে ৬২ রানের জুটি।
ঝড়ো ব্যাটিং চালিয়ে যান মাহমুদুল, শট খেলতে শুরু করেন ফরহাদ হোসেনও। চতুর্দশ ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে গাজীর রান।
বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে ছক্কায় উড়িয়ে ৪৬ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মাহমুদুল। পরে নাজমুল হোসেন শান্তকে মারেন জোড়া চার। এরপর আরও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। তবে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে এর আগেই থেমে যেতে হয় তাকে।
চার ছক্কা ও আট চারে ৬৭ বলে ৮৮ রান করেন মাহমুদুল। তার বিদায়ে ভাঙে ১১৯ রানের জুটি।
এর আগেই শান্তকে ছক্কা মেরে ৪৩ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ফরহাদ। তবে তিনি যেতে পারেননি বেশি দূর। তানভিরের বলে ধরা পড়েন মিড অফে। ৪৮ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ফরহাদ করেন ৫৭।
দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলকে টানেন ধ্রুব শোরে। ৭ চারে ৪৩ বলে তার অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংসে ২৭৫ ছাড়ায় গাজীর সংগ্রহ।
রান তাড়ায় মুনিম শাহরিয়ার ও শান্তর ব্যাটে ভালো শুরু করে আবাহনী। সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলেন মুনিম, আরেক প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন শান্ত।
কাভার ড্রাইভ, স্কুপ, পুল দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ২৯ বলে ১০ চারে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মুনিম। তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সপ্তম ওভারে পঞ্চাশ স্পর্শ করে দলের রান, একশ আসে দ্বাদশ ওভারে।
শুরু থেকে ঝুঁকি নিচ্ছিলেন মুনিম। সেই ঝুঁকিই কাল হয়। ধ্রুব শোরের বল ফাইন লেগের ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ওপেনার। ঠিক মতো খেলতে পারেননি, ধরা পড়েন কাজী অনিকের হাতে। ভাঙে ১১০ রানের জুটি।
৩৯ বলে ১১ চারে মুনিম করেন ৬১।
বেরিয়ে এসে সাঈদ সরকারকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস। পরের ওভারে শোরের বলে একই ভাবে বিদায় মাহমুদুল হাসান জয়। জাতীয় দলের এই দুই ব্যাটসম্যানে যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আবাহনীকে টানেন শান্ত ও মোসাদ্দেক। ক্রিজে গিয়েই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন আবাহনী অধিনায়ক। খেলেন দারুণ কিছু স্ট্রেইট ড্রাইভ।
শান্ত ও মোসাদ্দেকের ৮১ রানের জুটিতে জয়ের পথেই ছিল আবাহনী। কিন্তু এরপরই আল আমিন জুনিয়রের ওই দুর্দান্ত স্পেল। বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই শান্তকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন তিনি। তার স্পিনে দিক হারিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো ৩৬ ওভার খেলতেই পারেনি চ্যাম্পিয়নরা।
৪২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করা শান্ত দুই ছক্কা ও ছয় চারে করেন ৭৬ রান। আল আমিনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন মোসাদ্দেক। আবাহনী অধিনায়ক চার ছক্কা ও পাঁচ চারে খেলেন ৭৩ রানের দারুণ ইনিংস।
এরপর দলকে টানতে পারেননি শামীম হোসেন, সাইফ উদ্দিনরা। আবাহনীও পারেনি হার এড়াতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৩৬ ওভারে ২৭৬/৬ (মারুফ ৩৫, মাহমুদুল ৮৮, ফরহাদ ৫৭, শোরে ৫৫*, আকবর ১১, আল আমিন জুনিয়র ১৫, সাঈদ ৫, জুবারুল ০*; সাইফ ৭-০-৬৪-০, সানি ৭-১-৩১-০, তানভির ৮-০-৬৩-৩, কামরুল রাব্বি ৩-০-২৫-২, মোসাদ্দেক ৫-০৩০-০, আফিফ ১-০-১৩-০, শান্ত ৫-০-৪৪-১)
আবাহনী লিমিটেড: ৩৪.৩ ওভারে ২৪৯ (মুনিম ৬১, শান্ত ৭৬, লিটন ৭, জয় ৫, মোসাদ্দেক ৭৩, আফিফ ৪, শামীম ১১, সাইফ ২, কামরুল ০, তানভির ২, সানি ০*; মাহমুদুল ২-০-২২-০, হাবিব ৬-০-৬১-০, খালেদ ৫-০-৩৩-০, অনিক ২-০-২৮-০, শোরে ৮-০-৪৫-২, সাঈদ ৭-০-৩৬-২, আল আমিন ৪.৩-০-২২-৬)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ২৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আল আমিন জুনিয়র