৮০০ পেরিয়ে এনামুল, প্রাইম ব্যাংকে আটকা আবাহনী

কোচের কাছে বলা যায় একরকম অপমানিতই হতে হয়েছে। ম্যাচের আগের দিন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার আনফিট। প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটারদের তাতে আঁতে ঘা লাগার কথা যথেষ্টই। ভেতরে তাড়নাও জ্বলে ওঠার কথা। তাদের সেই আগুনেই পুড়ল আবাহনী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 12:52 PM
Updated : 18 April 2022, 12:52 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বড় জয় দিয়ে সুপার লিগ শুরু করল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে তারা ১৪২ রানে উড়িয়ে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডকে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার প্রাইম ব্যাংকের ২৭৩ রান তাড়ায় আবাহনীর ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ে স্রেফ ১৩১ রানেই।

৮৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে ম্যাচের সেরা এনামুল হক। স্বপ্নের মতো লিগ কাটাতে থাকা ব্যাটসম্যান এই ইনিংসের পথে এবারের লিগের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পেরিয়ে গেছেন ৮০০ রান।

১১ ইনিংসে ৭৩.১৮ গড়ে এনামুলের রান ৮০৫। ঢাকা লিগ লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ২০১৯ সালে করা সাইফ হাসানের ১৬ ম্যাচে ৮১৪।

আবাহনীর হয়ে একাই লড়াই করেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক। আবাহনী অধিনায়ক করেন ৫৭ বলে ৬৫। দলের বাকি সবাই মিলে করেন ৫৬, সঙ্গে অতিরিক্ত রান ৯।

টস জিতে বোলিং নিয়ে এ দিন প্রথম উইকেট পেতেই গলদঘর্ম হয় আবাহনী। এনামুল ও শাহাদাত হোসেনের সফল জুটি প্রাইম ব্যাংককে এনে দেয় আরেকটি ভালো শুরু।

ম্যাচের প্রথম ওভারে সাইফ উদ্দিনকে গালির পাশ দিয়ে চার মেরে শুরু করেন এনামুল। এরপর বেশি দ্রুততায় রান তোলেন শাহাদাত। ষষ্ঠ ওভারে শহিদুল ইসলামকে কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন তিনি, অষ্টম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে দুটি ছক্কা মারেন দৃষ্টিনন্দন ইনসাইড আউট শটে।

পরে এনামুলও শট খেলতে শুরু করেন। ১০ ওভারে রান আসে ৬৭।

একাদশ ওভারে মাঠে কিছু একটা নিয়ে মেজাজ হারাতে দেখা যায় আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক। মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে বেশ উত্তেজিত হয়ে আঙুল তুলে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।

৯৭ রানে উদ্বোধনী জুটি থামান শহিদুল। স্টাম্পের বল অনসাইডে টেনে খেলার চেষ্টায় মিড উইকেটে ক্যাচ দেন শাহাদাত (৫১ বলে ৩৮)।

তিনে নেমে মুমিনুল হক টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। মোসাদ্দেকের বলে সুইপ করে উড়িয়ে তিনি ধরা পড়েন স্কয়ার লেগ সীমানায় (৮)।

এনামুল তখনও এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে। এবারের আসরে দুটি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের সামনে হাতছানি ছিল আরেকটি শতরানের। তার নিজের দায়েই সেই সম্ভাবনার মৃত্যু। মুমিনুলের মতোই উড়িয়ে সুইপ করে ধরা পড়েন তিনি সীমানায়।

৫ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস থামে ৭৭ রানে। লিগের ১১ ইনিংসে যা তার অষ্টম পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস।

দারুণ বোলিংয়ে তিন উইকেট নেন প্রাইম ব্যাংকের রকিবুল হাসান। ছবি: ওয়ালটন।

এরপর নাসির হোসেনকে (৬) দ্রুত ফিরিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে আবাহনী। তবে মোহাম্মদ মিঠুন ও ইয়াসির আলি চৌধুরির জুটিতে এগিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েন ৫৯ রানের জুটি।

দুজনের ইনিংসই থামে ৪০ পেরিয়ে। আরাফাত সানির বল উড়িয়ে লং অফে ধরা পড়েন মিঠুন। ৫৯ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক।

জাতীয় দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে লিগে প্রথম খেলতে নেমে ইয়াসির শুরু করেছিলেন ধীরে। ২২ বলে তার রান ছিল ১১। পরে আগ্রাসী কিছু শট খেলে শেষ পর্যন্ত করেন ৪৩ বলে ৪৩।

মিঠুন-ইয়াসিরের মধ্যে শামসুর রহমান শুভ আউট হন প্রথম বলেই। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে আবার প্রাইম ব্যাংকের রানের গতি আসে কমে। তবে শেখ মেহেদি হাসানের ২৭ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংসে তারা ২৭০ ছাড়াতে পারে।

হনুমা বিহারি ফিরে যাওয়ায় বিদেশি হিসেবে যাকে এনেছে আবাহনী, সেই ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার লিগে নিজের প্রথম ম্যাচে।

প্রাইম ব্যাংক এ দিন একাদশ সাজায় স্রেফ চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে। আবাহনীর সামনে তাই সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ তারা নিতে পারেননি। প্রাইম ব্যাংকের একমাত্র পেসার রেজাউর রহমান স্রেফ ২ ওভার বোলিং করে ছিলেন খরুচে। কিন্তু তাদের স্পিন আক্রমণে সামনে দাঁড়াতে পারেনি আবাহনী।

নতুন বলে তরুণ বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল ইসলামের শিকার তিন উইকেট, শেখ মেহেদির দুটি। দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও নেন দুটি। পঞ্চম বোলার হিসেবে যাকে কাজে লাগানোর কথা, সেই নাসির হোসেন বিশেষজ্ঞ বোলারের মতোই ১০ ওভার করে নেন ৩ উইকেট।

আবাহনী ধুঁকতে থাকে ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই। প্রথম তিন উইকেটই শিকার করেন রকিবুল। ইনিংসের প্রথম দুই ওভার মেডেনের পর উড়িয়ে মেরে শেকল ভাঙার চেষ্টায় কাভারে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ফর্মে থাকা জাকের আলি।

দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলে ফিরে নাজমুল হোসেন শান্ত তিনে নেমে কাটা পড়েন দুর্ভাগ্যজনক এলবিডব্লিউয়ে। রকিবুলের বল পিচ করে অনেকটা নিচু হয়ে ছোবল দেয় তার গোড়ালির দিকে। ব্যাটসম্যানের সেখানে করার ছিল সামান্যই।

বোলিংয়ে সফল ধনাঞ্জয়া ব্যাটিংয়ে প্রথম বলেই আউট জন স্টম্পের বেশ বাইরের বল কাট করতে গিয়ে। চারে নামা আফিফ হোসেনও উইকেট ছুঁড়ে আসেন শেখ মেহেদিকে তুলে মারতে গিয়ে।

ওপেনার লিটন দাস তখনও টিকে। কিন্তু উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিলে এক পর্যায়ে সামিল তিনিও। তাইজুলের সোজা বল কাট করে গিয়ে বোল্ড  তিনি ২৩ রানে। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আবাহনী।

এরপর স্রেফ একা একটু চেষ্টা করে যান মোসাদ্দেক। সাইফ উদ্দিন, শামীম হোসেনরা পারেননি সঙ্গ দিতে। মোসাদ্দেকের বিনোদনদায়ী ইনিংস শেষ হয় ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ করে। আবাহনীর ইনিংস গুটিয়ে যায় স্রেফ ৩২.৪ ওভারেই।

এই পরাজয়ে শিরোপা ধরে রাখার লড়াই থেকে আরও দূরে সরে পড়ল আবাহনী। ১১ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৪। সমান পয়েন্ট প্রাইম ব্যাংকেরও। ২০ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, ১৬ পয়েন্ট লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (এনামুল ৭৭, শাহাদাত ৩৮, মুমিনুল ৮, মিঠুন ৪৪, নাসির ৬, ইয়াসির ৪৩, শামসুর ০, শেখ মেহেদি ৩৪*, তাইজুল ২, রেজাউর ২, রকিবুল ৬*; সাইফ উদ্দিন ১০-০-৩৫-২, সানি ৫-০-৩৭-১, শহিদুল ৯-০-৬০-১, তানভির ১০-০-৫৩-১, ধনাঞ্জয়া ১০-০-৫৭-৩, মোসাদ্দেক ৬-০-২৮-১)

আবাহনী : ৩২.৪ ওভারে ১৩১ (জাকের ০, লিটন ২৩, শান্ত ৪, ধনাঞ্জয়া ০, আফিফ ৫, সাইফ উদ্দিন ১১, মোসাদ্দেক ৬৫, শামীম ৪, শহিদুল ১, তানভির ৭, সানি ২*; রকিবুল ৬-১-১৮-৩, শেখ মেহেদি ৭.৪-২-১৯-২, তাইজুল ৭-০-৪২-২, নাসির ১০-১-৩৩-৩, রেজাউর ২-০-১৮-০)।

ফল: প্রাই ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৪২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক।