দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারকে আনফিট বললেন কোচ সালাউদ্দিন

দলের ভেতরে যত কিছুই চলুক, এমনিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলে সাধারণত রাখঢাক রাখেন কোচ, ক্রিকেটার বা দলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবার দেখালেন ব্যতিক্রমী কিছু। ফিটনেস নিয়ে দলের ক্রিকেটারদের স্রেফ ধুয়ে দিলেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের কোচ। ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচ প্রশ্ন তুললেন দলের প্রতি ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়েও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2022, 11:20 AM
Updated : 17 April 2022, 03:03 PM

বরাবরের মতো এবারও শিরোপার লক্ষ্য নিয়ে দল সাজায় প্রাইম ব্যাংক। শিরোপা জয়ের আশা নিয়েই তারা শুরু করে লিগ, প্রথম দিকে ছুটতে থাকে লক্ষ্যের পথেই। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক চলছিল শুরুতে। এরপরই পথচ্যুতি। সুপার লিগে যদিও উঠতে পেরেছে তারা, তবে অনেকটাই ছিটকে গেছে ট্রফির লড়াই থেকে। অভাবনীয় কিছু হলেই কেবল তাদের শিরোপা জয় সম্ভব।

সালাউদ্দিনের কথায়ও পরিষ্কার, শিরোপা আশা তারা ছেড়ে দিয়েছেন। সুপার লিগ শুরুর আগের দিন মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দেশের সেরা কোচদের একজন বলে বিবেচিত এই কোচ বললেন, আগামী মৌসুমের জন্য এখনই ক্রিকেটারদের সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

“কোচ হিসেবে দলকে ওই জায়গায় ফেরানো (যেভাবে শুরু করেছিল দল) আমার পক্ষে খুব কঠিন। আমার মনে হয়, আমার দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় আনফিট। প্রাণশক্তি তিন-চার ম্যাচের জন্যই ছিল। এরপর আর ছিল না। আমার বার্তা আমি দলকে দিয়ে দিয়েছি। সামনের বছর যদি খেলতে হয়, তাহলে ফিটনেস নিয়ে খেলতে হবে। নয়তো খেলার সুযোগ নেই।”

“মৌসুম শুরুর আগে খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। খেলা শুরুর পর ফিটনেস নিয়ে কাজ করা কঠিন। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিং দল ছিলাম সম্ভবত। ওটা পুষিয়ে দেওয়া কঠিন হবে। আশা করছি, তারা যেন আগামীবার খেলার আগে ফিটনেস ঠিক করে আসে। তাহলে নিজের জন্য ভালো হবে, দলের জন্য ভালো হবে।”

প্রাইম ব্যাংকের হয়ে এবার খেলেছেন এনামুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন, শেখ মেহেদি হাসানের মতো জাতীয় তারকারা। সঙ্গে ছিলেন ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসেন, বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান, পেসার রেজাউর রহমানের মতো উঠতি ক্রিকেটাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে প্রাইম ব্যাংকের সবশেষ ম্যাচটি খেলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। এই দলে আছেন তামিম ইকবালও। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে ব্যক্তিগত কাজে লন্ডন গেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পর তিনি খেলবেন সুপার লিগে দলের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে।

তামিম-মুমিনুলরা না থাকলেও দলে পরীক্ষিত ক্রিকেটার কম ছিল না। তবে বেশ কয়েক ম্যাচেই প্রাইম ব্যাংক ভালো শুরুর পর ধরে রাখতে পারেনি। ফিটনেসের ঘাটতির কারণেই ক্রিকেটাররা খেই হারিয়েছে বলে মনে করেন সালাউদ্দিন।

“ম্যাচের শেষ দিকে গিয়ে যত ভুল করবেন, তত আপনি ম্যাচের জন্য আনফিট। সাধারণত, এটা আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে বেশি হয়। আমি বলব যে, ফিটনেস ভালো হলে আপনি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। এটা পুরোটা নির্ভর করে ফিটনেসের উপর। সেটা মানসিক ফিটনেস বলুন আর শারীরিক ফিটনেস, দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যারা শেষ দিকে ভুল করে, তারা এই কারণেই করে।”

শারীরিক ফিটনেসের ঘাটতির পাশাপাশি সালাউদ্দিন প্রশ্ন তুললেন ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়েও। দলের প্রতি যথেষ্ট নিবেদন তাদের ছিল কিনা, এই সংশয় কোচের মনে।

“আমার মনে হয়, দলের ‘টিম ফিলিংস’ থাকা খুব জরুরি। আপনি যত ভালো দল করেন না কেন, দলের ভেতর থেকে যদি ‘টিম ফিলিংস’ না আসে, তাহলে দলের জন্য ফল পাওয়া কঠিন। আপনার তো দলের প্রতি দরদ থাকতে হবে। তারপর দল ফলাফল করবে কী করবে না, সেটা বোঝা যাবে। অন্তত যদি দরদ দিয়ে খেলেন, তারপরও যদি দল হেরে যায় তাহলে, আপনার মানসিক সন্তুষ্টি থাকবে। সেই তৃপ্তি আমি পাইনি।”