ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব ছাড়লেন রুট

একের পর এক ম্যাচ ও সিরিজ হার। জয় যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের টানা ব্যর্থতার দায়ভার স্বাভাবিকভাবেই এসেছে জো রুটের কাঁধে। তার অধিনায়কত্ব নিয়ে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। দাবি উঠেছে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ারও। তবে রুট প্রত্যয়ী ছিলেন দলকে আরও কিছুদিন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2022, 08:15 AM
Updated : 15 April 2022, 09:52 AM

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন রুট, যা কার্যকর হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। শেষ হয়েছে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার পাঁচ বছরের পথচলা।

২০১৭ সালে অ্যালেস্টার কুকের জায়গায় ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান রুট। লাল বলের ক্রিকেটে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৬৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ২৭ জয়ের রেকর্ডও তার। এই তালিকায় পেছনে ফেলেছেন মাইকেল ভন (২৬ ম্যাচ) এবং কুক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে (দুজনেই ২৪ ম্যাচ করে)।

অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য কম ধরা দেয়নি রুটের হাতে। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে ভারতকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ড। ওই বছরই ২০০১ সালের পর ইংল্যান্ডের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতেন তিনি। দুই বছর পর আবারও লঙ্কানদের তাদেরই মাটিতে হারায় ইংলিশরা। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে তার দল।

সাফল্য যেমন এসেছে, ব্যর্থতাও কম নেই রুটের। তার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ২৬ টেস্টে হেরেছে ইংল্যান্ড। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট হারার দিকে তার ওপরে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (২৯) ও নিউ জিল্যান্ডের স্টিভেন ফ্লেমিং (২৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা হেরেছেন রুটের সমান ম্যাচ।

রুটের অধিনায়কত্বে সবশেষ পাঁচ টেস্ট সিরিজই হেরেছে ইংল্যান্ড। সবশেষ ১৭ টেস্টের মধ্যে জিততে পেরেছে কেবল একটিতে। অ্যাশেজে ৪-০ তে হারার পর গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েও তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হেরে এসেছে তারা।

দলের ব্যর্থতার দায়ে বারবারই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে রুটকে। ইংল্যান্ডের সাবেক তিন অধিনায়ক মাইকেল আথারটন, নাসের হুসেইন ও মাইকেল ভন সরাসরিই বলেছিলেন, রুটকে সরিয়ে দেওয়ার কথা।

রুট অবশ্য প্রত্যাশী ছিলেন দলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে। কিন্তু চারদিকের সমালোচনার জোয়ারে আর পারলেন না তিনি কাজ চালিয়ে যেতে। ইসিবির বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দায়িত্ব ছাড়ার এখনই সঠিক সময় মনে হয়েছে তার।

“ক্যারিবিয়ান সফর থেকে ফিরে নেতৃত্বের পথচলা নিয়ে ভাবনার সময় পাওয়ার পর, আমি ইংল্যান্ডের পুরুষদের টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পরিবার এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করার পর আমি বুঝতে পেরেছি এটাই সঠিক সময়।”

“দেশের অধিনায়কত্ব করতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং বিগত পাঁচ বছরের দিকে আমি গর্বের সঙ্গে ফিরে তাকাব। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের চূড়ার দায়িত্বটি পালন করা এবং এর রক্ষক হতে পারা অনেক সম্মানের।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে আর মাঠে ফেরেননি রুট। বিশ্রাম নেন ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে। জানান, নেতৃত্বের চাপ পেয়ে বসেছিল তাকে। এই পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব ছাড়লেও ইংল্যান্ডকে সহায়তা করতে সব সময় প্রস্তুত থাকার কথা জানালেন রুট।

“ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করা চালিয়ে যেতে এবং দলকে সফল করতে সক্ষম এমন পারফরম্যান্স করতে মুখিয়ে আছি আমি। পরবর্তী অধিনায়ক, সতীর্থ ও কোচদের যেভাবে পারি সাহায্য করার জন্য উন্মুখ আছি।”

ইংল্যান্ড টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক বেন স্টোকস নতুন নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন অনেকটা। ররি বার্নস, স্টুয়ার্ট ব্রড ও জস বাটলারও থাকবেন হয়তো বিবেচনায়। যদিও তারা দলটির টেস্ট একাদশে নিয়মিত নন।

অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে বেশ সফল রুট। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন, ৪৬.৪৪ গড়ে ৫ হাজার ২৯৫। সর্বোচ্চ ১৪ সেঞ্চুরি ও ২৬ ফিফটির রেকর্ডও তার। তবে হাল ছেড়ে দিলেন দলের বাজে পারফরম‍্যান্সে।