দক্ষিণ আফ্রিকার দিনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও

দিনের শেষ বলটি অনায়াসে ছেড়ে দিলেন ভিয়ান মুল্ডার। টিভি ক্যামেরার চোখ গেল তখন ড্রেসিং রুমে, ডিন এলগার তালি দিয়ে হাসিমুখে তাকালেন পাশের সতীর্থের দিকে। এই ছবিই বলে দেয়, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বেশ খুশিই। দিন শেষে তারা এগিয়ে নিশ্চিতভাবেই। তবে স্কোরকার্ড এটিও বলবে, দিনটি খুব খারাপ কাটেনি বাংলাদেশেরও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2022, 04:40 PM
Updated : 8 April 2022, 04:40 PM

পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৫ উইকেটে ২৭৮।

তাদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জনই ৬০ রান ছুঁয়েছে, কিন্তু কাউকেই ৭০ পার হতে দেয়নি বাংলাদেশ। তাদের প্রথম চার জুটিই ফিফটি পেরিয়েছে, কিন্তু কোনোটিই যেতে পারেনি সেঞ্চুরি পর্যন্ত। এসবই বলে দিচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা যখনই লাগাম ধরার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশ সেখানেই ফিরে এসেছে আবার।

আগের টেস্টের মতোই প্রথম সেশনে দ্রুতগতিতে রান তুলে শুরুটা দারুণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ নিতে পারে একটি উইকেট। তবে পরের দুই সেশনে লড়াই জমে বেশ। দুই সেশনেই দুটি করে উইকেট নিতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখার মূল কৃতিত্ব তাইজুল ইসলামের। একাদশে ফেরার টেস্টে প্রথম দিনে তার শিকার ৩ উইকেট। শুধু এটুকুতেই বোঝা যাচ্ছে না তার বোলিংয়ের পুরোটা। লাঞ্চের আগে থেকে শুরু করে চা বিরতির একটু পর পর্যন্ত এক প্রান্ত থেকে টানা ২৪ ওভার বল করে রানের রাশ টেনে ধরেছেন তো বটেই, বারবার এনে দেন ব্রেক থ্রু।

আগের টেস্টের ধারা ধরে রেখে সৈয়দ খালেদ আহমেদও বেশ আগ্রাসী বোলিংয়ে নেন ২ উইকেট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ বোলিং করা ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম দিনে ছিলেন একদমই বিবর্ণ।

ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছিলেন, উইকেট একটু শুষ্ক মনে হচ্ছে তার কাছে। ম্যাচের সকালে দেখা যায়, আদতেও বেশ শুকনো উইকেট। দুই পেসারের সঙ্গে তাই দুই স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। চোট নিয়ে দেশে ফেরা তাসকিন আহমেদের জায়গায় সুযোগ পান তাইজুল।

বোলিং আক্রমণ শুরুও হয় পেসের সঙ্গে স্পিন দিয়ে। এক প্রান্তে খালেদ, আরেকপ্রান্তে মিরাজের হাতে বল তুলে দেন মুমিনুল।

৮৬ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নতুন বল হাতে নিলেন কোনো স্পিনার। 

সেই পরীক্ষা অবশ্য শেষ হয় দ্রুতই। ১ ওভারে ৭ রান দেওয়ার পর ওই প্রান্ত থেকে আনা হয় পেসার ইবাদত হোসেনকে।

টেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে উল্লাসে ভাসছেন বোলার খালেদ আহমেদ। ছবি: আইসিসি।

প্রথম উইকেট বাংলাদেশ পেতে পারত এই পরিবর্তনের আগেই। তৃতীয় ওভারে খালেদের বল সারেল এরউইয়ার প্যাডে লাগার পর আউট দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ নেয়নি রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগছিল স্টাম্পে।

তখন ৫ রানে থাকা এরউইয়া বেশিদূর এগোতে পারেননি। ২৪ রানে তাকে থামান সেই খালেদই। তবে ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে গেছে ভালো শুরু।

উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ৫২। প্রথম ১০ ওভারেই বাউন্ডারি আসে ৭টি। খালেদ-ইবাদত-মিরাজ, আলগা বল করে কেউই পারেননি চাপ সৃষ্টি করতে। অবিশ্বাস্যভাবে, প্রথম ২৫ ওভারে স্রেফ ৫টি বল ছিল স্টাম্পে!

এলগার অনায়াসেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৬৬ বলে। দ্বিতীয় উইকেটে কিগান পিটারসেনের সঙ্গে তার জুটিও জমে ওঠে দ্রুত। লাঞ্চের আগে রান ছাড়িয়ে যায় একশ।

রানের গতিতে খানিকটা বাঁধ দেওয়া যায় তাইজুল আক্রমণে আসার পর। লাঞ্চের একটু পর ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনিই। একটু জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে বিদায় করে দেন ওয়ানডের গতিতে খেলতে থাকা এলগারকে (৮৯  বলে ৭০)। পিটারসেনের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের জুটি থামে ৮১ রানে।

পরের ওভারেই ইবাদতকে টানা তিন বলে দারুণ তিন বাউন্ডারিতে পিটারসেন ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৭৪ বলে। বাভুমা যেন বাইরে থেকে থিতু হয়েই উইকেটে যান। অধিনায়ককে হারানোর ধাক্কা এই জুটিতে সামাল দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

টানা বোলিং করতে থাকা তাইজুল ভাঙেন এই জুটিও। ওভারের আগেই বাউন্ডারির বাইরে থেকে স্পিন কোচ কিছু একটা দেখান তাইজুলকে। এরপরই এই বাঁহাতি স্পিনার বিদায় করে দেন দারুণ খেলতে থাকা পিটারসেনকে (১২৪ বলে ৬৪)।

দক্ষিণ আফ্রিকা তাতে দমে যায়নি। বাভুমা ও রায়ান রিকেলটনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়ে ওঠে এরপরই।

বাভুমা যথারীতি ঠাণ্ডা মাথায় ওক প্রান্ত আগলে রাখেন, বাজে বল পেলেই সেটিতে বুঝিয়ে দেন প্রাপ্য। বাঁহাতি রিকেলটন ছিলেন একটু রোমাঞ্চপ্রিয়। কিছু আগ্রাসী শট তিনি খেলেন, রিভার্স সুইপে চেষ্টা করেন তাইজুলদের লাইন-লেংথ এলোমেলো করতে।

সেই তাড়নাই কাল হয় তার। দ্বিতীয় নতুন বল না নিয়ে বাংলাদেশ পুরনো বলেই স্পিন চালিয়ে যায়। তাতে মেলে সাফল্য। তাইজুলকে রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় রিকেলটন স্লিপে ক্যাচ দেন ৪২ রানে।

এরপর নতুন বলে ধরা দেয় বড় এক সাফল্য। খালেদের একটি বাড়তি লাফানো বলে ভেঙে যায় বাভুমার প্রতিরোধ। তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বলে স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

শেষ বেলায় আরেকটি উইকেট নিতে পারলে বাংলাদেশকে রাখা যেত সমানে-সমান। কাইল ভেরেইনা ও ভিয়ান মুল্ডার তা হতে দেননি। দিনটা নিরাপদে পার করেন তারা।

১৯ বল খেলে রান করতে পারেননি মুল্ডার, ভেরেইনা অপরাজিত ১০ রানে। থিতু নন দুজনের কেউই। তাই দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের সুযোগ আছে ভালোভাবেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৭৮/৫ (এলগার ৭০, এরউইয়া ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরেইনা ১০*, মুল্ডার ০*; খালেদ ২০-৪-৫৯-২, মিরাজ ১৯-২-৫৮-০, ইবাদত ১৬-২-৭৫-০, তাইজুল ৩২-৭-৭৭-৩, শান্ত ৩-০-৯-০)।