জীবন বদলে দেওয়া সিরিজের গল্প শোনালেন পান্ত

এখন তিন সংস্করণেই মাঠে আলো ছড়াচ্ছেন রিশাভ পান্ত। হয়ে উঠেছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাতে পেয়ে বসেছিল শঙ্কা। কঠিন সেই সময় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু একটি সিরিজ দিয়ে। ভারতের সবশেষ অস্ট্রেলিয়া সফর বদলে দিয়েছিল তার জীবন, ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সেই সময়ের কথা তুলে ধরলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2022, 04:53 PM
Updated : 5 April 2022, 05:03 PM

২০১৭ সালে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে পা রাখার পরের বছর টেস্ট ও ওয়ানডেতে অভিষেক হয় পান্তের। তিন সংস্করণেই তখন দলটির হয়ে নিয়মিত খেলতে থাকেন তিনি।

পরে বাদ পড়েন টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দল থেকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের দলেও রাখা হয়নি তাকে। ছিলেন না ২০২০-২১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার সফরের সীমিত ওভারের সিরিজের দলেও। ওই সফরে শুধু ছিলেন টেস্ট দলে।

সব কিছু মিলিয়ে তখন ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছিল পান্তকে। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা ভারতীয় নারী দলের সদস্য জেমিমাহ রদ্রিগাসের সঙ্গে ড্রিমইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে কিছুটা তুলে ধরলেন ২৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

“তখন আমি কারো সঙ্গে কথা বলছিলাম না, পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গেও না। আমার নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমি স্রেফ প্রতিদিন ২০০ শতাংশ দিতে চেয়েছি।”

সময়টা ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে, বলতে থাকেন পান্ত।

“আমি ভাবছিলাম, ‘এখন কী হবে’। আমার বয়স ২২-২৩ বছর। সেটা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বাজে একটা সময়, মানসিকভাবে। ভাবছিলাম ‘এখন কী করব’।”

“হঠাৎ করেই যেন সবকিছু থেমে গিয়েছিল…দুই সংস্করণের দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছিল। সবাই বলছিল ‘আমাকে দিয়ে আর সম্ভব না।’ কিন্তু আমি সেখানে একা বসে কেবলই ভাবছিলাম, ব্যক্তিগতভাবে আমি কী করতে পারি।”

নিজেকে প্রস্তুত করতে চেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখতে চাননি পান্ত। ঘাম ঝরান অনুশীলনে, করেন কঠোর পরিশ্রম। অতিরিক্ত পরিশ্রমে অবশ্য সমস্যায়ও পড়েন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেননি ঘাড়ের ব্যথায়। পরে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে নেমে করেন সেঞ্চুরি।

তবু জায়গা হয়নি সিরিজের প্রথম টেস্টের একাদশে। ঋদ্ধিমান সাহার চোটে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ আসে পান্তের। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি ঠিকভাবে। এক ইনিংসে খেলার সুযোগ পেয়ে করেন কেবল ২৯ রান।

সিডনিতে তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও হাসেনি পান্তের ব্যাট। রান করেন মাত্র ৩৬। পরে কনুইয়ের ব্যথা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০৭ রানের বিশাল টার্গেটে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত যদিও তা হয়নি, ম্যাচটি হয় ড্র। পান্ত খেলেন ১১৮ বলে ৩ ছক্কা ও ১২ চারে ৯৭ রানের ইনিংস।

চার ম্যাচের সিরিজটি তখন ১-১ সমতায়। চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেন দুর্গ ভেঙে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে ভারত। পান্ত বললেন, তৃতীয় টেস্টই ছিল সিরিজ ও তার জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া মুহূর্ত।

“ম্যাচ চলাকালে আমি ব্যথানাশক ইনজেকশন নিই, নেটে যাই এবং ব্যাট ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু তা করতে খুবই ব্যথা করছিল। (কনুইয়ে) বল লাগায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম, ভয়ও পেয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়া দলে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জস হেইজেলউডও ছিল এবং তারা আরও জোরে বল করত।“

“লাঞ্চের আগে রাহানেও আউট হয়ে যায় এবং আমি চিন্তায় পড়ে যাই…আমি কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। চাপ বাড়ছিল। অজিরা স্লেজিং করছিল, কারণ ম্যাচে ভালো অবস্থায় ছিল এবং জিততে চাচ্ছিল।”

“এরপর আমি পথ পেয়ে যাই, মিড-অন ফিল্ডারকে কিছুটা এগিয়ে আনা হয় এবং আমি মিড-অন দিয়ে একটি বাউন্ডারি মারি। পরের বলও সে (নাথান লায়ন) ওই জায়গায় করে এবং কয়েক ওভার পর আমি তাকে ছক্কা মারি।”

একটা সময় ভারতের তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল ১০২ রানে। একদিকে হাতের ব্যথা আর সামনে ৪০০ রানের বিশাল লক্ষ্য। ব্যথা সয়ে ভড়কে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণের  সিদ্ধান্ত নেন পান্ত। ৬৪ বলে করেন ফিফটি। এরপরই ম্যাচের গতিপথ পাল্টাতে থাকে, বলেন তিনি।

“একরকম আচমকাই ম্যাচের মোমেন্টাম পাল্টে যায় এবং আমরা এমন একটা অবস্থানে চলে আসি যেখান থেকে ম্যাচ জেতা সম্ভব। আর আমার ব্যথাটাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কারণ আমি প্রতিটি বলে আমার সব মনোযোগ দিচ্ছিলাম। এভাবেই ব্যথার ওপর থেকে মনোযোগ সরে গিয়েছিল।”

“আমার খারাপ লাগছিল-শতক হাতছাড়া করার জন্য নয়, বরং ওই অবস্থা থেকে ভারতের জন্য ম্যাচটি জিততে না পারায়… ম্যাচটি ছিল সিরিজে আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট এবং আমার জীবনেরও। আর এরপর আসে গ্যাবার ওই জয়।”

গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার ৩২৮ রান তাড়ায় দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন পান্ত। খেলেন ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। এক টেস্ট কম খেলেও ওই সিরিজে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন পান্ত। ৬৮.৫০ গড়ে করেছিলেন ২৭৪ রান।