অসাধারণ পারফরম্যান্সে রোমাঞ্চকর জয়ের নায়ক পারভেজ রাসুল

বল হাতে যা পারফরম্যান্স, ম্যাচ জেতানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারত সেটুকুই। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় ব্যাটিংয়ের ভারও পড়ল পারভেজ রাসুলের কাঁধে। সেই চ্যালেঞ্জও তিনি আলিঙ্গন করে নিলেন দু হাত বাড়িয়ে। ৪ উইকেট নেওয়ার পর দারুণ ফিফটি করলেন তো বটেই, দুর্দান্ত শেষ জুটি আর শেষ ওভারের রোমাঞ্চে শেখ জামালকে স্মরণীয় এক জয়ও এনে দিলেন ভারতীয় এই অলরাউন্ডার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2022, 01:06 PM
Updated : 5 April 2022, 01:45 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লড়াইটা ছিল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের। মাঠের লড়াইয়েও উত্তেজনা ছড়াল তুমুল। শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিলেন রাসুল। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শীর্ষে থাকা প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ২৬৫ রান ১ বল ও ১ উইকেট হাতে রেখে ছাড়িয়ে যায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।

ইউল্যাব ক্রিকেট মাঠে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু করা প্রাইম ব্যাংকের লাগাম টেনে ধরেন রাসুল। আঁটসাঁট অফস্পিনে ২৫ রানে নেন ৪ উইকেট। এরপর রান তাড়ায় যখন দল পথহারা, ব্যাট হাতে তিনি এগিয়ে নেন দলকে।

অন্যদের ব্যর্থতায় তবু হারের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু পারভেজ রাসুল হার মানতে চাইলে তো! দশম ব্যাটসম্যান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি যখন আউট হলেন, তখনও শেখ জামালের প্রয়োজন ২৩ বলে ২৭ রান। শেষ জুটিতে আরিফ আহমেদকে নিয়ে দারুণ দৃঢ়তায় এগিয়ে যান রসুল।

শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১২ রানের। প্রাইম ব্যাংকের পেসার রবিউল হকের করা প্রথম বল ডিপ কাভারে পাঠিয়েও সিঙ্গেল না নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখেন রাসুল। পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে চার মারেন ওয়াইড লং অন দিয়ে। তৃতীয় বল ফুল লেংথ পেয়ে ছক্কায় ওড়ান লং অন দিয়ে। হতাশায় নুইয়ে পড়েন বোলার রবিউল।

চতুর্থ বলে আবার ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি রাসুল। কিন্তু পঞ্চম বল ফুল টস পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় মিড উইকেটে ঘুরিয়ে দুই রান নিয়ে মেতে ওঠেন জয়োল্লাসে।

রাসুলের অলরাউন্ড নৈপুন্যে রাঙা ম্যাচটির শুরুতে ঝড় তোলেন এনামুল হক। চলতি লিগে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান খেলেন আরেকটি দারুণ ইনিংস। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংকে ভালো শুরু এনে দেন তিনি ও শাহাদাত।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই দুটি ছক্কা মেরে শুরু হয় এনামুলের ছুটে চলা। ফিফটি পূরণ করেন তিনি স্রেফ ৩৯ বলে। চলতি লিগে ৮ ইনিংসে ৬ বারই স্পর্শ করলেন পঞ্চাশ, যার দুটিকে নিয়ে গেছেন তিন অঙ্কে।

১২০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ১৮তম ওভারে। অফ স্পিনার রবিউল ইসলাম রবির প্রথম ওভারে ছক্কা ও চার মেরে এনামুল এলবিডব্লিউ হন শেষ বলে। আউট হওয়ার পর যদিও তিনি ইশারায় দেখান, বলটি ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। তবে দেখে মনে হয়েছে, লেগ স্টাম্পে লাগত বল। ৮ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংস থামে ৬১ বলে ৭৭ রান করে।

এবারের লিগে তার রান এখন ৮ ইনিংসে ৮০.৩৭ গড়ে ও ১০০.১৫ স্ট্রাইক রেটে ৬৪৩।

এনামুলের বিদায়ের পরই ইনিংসের মোড় পাল্টে দেন রাসুল। ভারতের হয়ে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কাশ্মীরের ক্রিকেটার দারুণ ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান শাহাদাতকে (৪৯ বলে ৩৭)। পরের বলেই অভিজ্ঞ মোহাম্মদ মিঠুন (১ বলে ০) কট বিহাইন্ড হন অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে।

একটু পর রাসুলের শিকার আরেক অভিজ্ঞ নাসির হোসেন (১১ বলে ১১)। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেওয়ার পর নাসির অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিজে।

রাসুলের ওই ওভারেই স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান শামসুর রহমান (০)। বিনা উইকেটে ১২০ থেকে প্রাইম ব্যাংকের রান তখন ৫ উইকেটে ১৩৬! একটু পর বিদায় নেন অলক কাপালীও।

তিনে নামা অভিমন্যু ইশ্বরন তখন এক প্রান্তে পড়ে আছেন। ১৫৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানো দলকে তিনি উদ্ধার করেন শেখ মেহেদি হাসানকে নিয়ে। সপ্তম উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।

৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ বলে ৪০ করে ফেরেন মেহেদি। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে দারুণ লড়াই করে দলকে ২৬৫ রানে নিয়ে যান ইশ্বরন। গত বছর ভারতীয় টেস্ট দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করে আসা ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৮১ বলে ৬২ রান করে।

রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৭ ওভারে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে শেখ জামাল। তাতে মূল অবদান অবশ্য কেবল সৈকত আলির। আরেক ওপেনার সাইফ হাসান ছিলেন স্রেফ দর্শক হয়ে। ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটির পর যখন আউট হলেন সাইফ, তার রান তখন ২৩ বলে ১১!

বরাবরই আগ্রাসী সৈকত ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৫ করে আউট হন ৬৪ বলে। এরপর একের পর এক উইকেটের পতন। শেখ জামাল অধিনায়ক ইমরুল এক প্রান্ত থেকে দেখেন অপর প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া।

মেহেদির অফ স্পিনে রবিউল ইসলাম রবি (০) ও তাইবুর রহমান (৬) বিদায় নেন দ্রুত। বড় ভরসা জহুরুল ইসলাম ১৬ রান করে বোল্ড হন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে।

দীর্ঘক্ষণ এক প্রান্ত আটকে রাখা ইমরুল কায়েস যখন ৭৯ বলে ৫২ রান করে আউট হলেন, ম্যাচ থেকে তখন এক প্রকার ছিটকেই গেছে শেখ জামাল। জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ৬৮ বলে ৯০ রান, উইকেট স্রেফ ৪টি।

তবে পারভেজ রাসুল হাল ছাড়েননি। সাতে নেমে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়ে জিয়াউর রহমান আউট হন ১৭ বলে ১৭ করে।

রাসুল এগোতে থাকেন লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। শেষের আগের ওভারে রেজাউর রহমান রাজাকে দারুণ শটে বাউন্ডারি মেরে ফিফটিতে পা রাখেন ৪৫ বলে। ওই ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। এরপর শেষ ওভারে বীরোচিত ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মাথা উঁচু করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব : ৫০ ওভারে ২৬৫/৯ (এনামুল ৭৭, শাহাদাত ৩৭, ইশ্বরন ৬২*, মিঠুন ০, নাসির ১১, শামসুর ০, কাপালী ৩, মেহেদি ৪০, রেজাউর ১০, রবিউল ১৩, রকিবুল ১*; জিয়াউর ৪-০-১৮-০, মৃত্যুঞ্জয় ৫-০-৪২-২, সানজামুল ৮-০-৪৭-০, আরিফ ৮-০-৪০-০, রাসুল ১০-১-২৫-৪, রবি ৫-০-৩৫-১, তাইবুর ৯-০-৪৭-২, সাইফ ১-০-৮-০)।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ২৬৬/৯ (সৈকত ৬৫, সাইফ ১১, ইমরুল ৫২, রবি ০, তাইবুর ৬, জহুরুল ১৬, রাসুল ৬৫*, জিয়াউর ১৭, সানজামুল ২, মৃত্যুঞ্জয় ১১, আরিফ ৫*; রবিউল ৪.৫-০-৪০-০, মেহেদি ১০-০-৪৫-২, রকিবুল ১০-০-৬২-২, কাপালী ৯-২-২৮-২, রেজাউর ৮-০-৪৭-১, নাসির ৮-১-৩৩-০)।

ফল: শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ১ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ রাসুল।