হ্যামিল্টনে সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ডাচদের ১১৫ রানে হারায় নিউ জিল্যান্ড। তিন ম্যাচের সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ করল সফরকারীদের।
সেডন পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে গাপটিলের ১০৬ রান ও ইয়াংয়ের ১২০ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান করে নিউ জিল্যান্ড। রান তাড়ায় ২১৮ রানে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
গাপটিল ও ইয়াং দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ২০৩ রানের জুটি, কিউইদের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেটে যা সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল নিল ব্রুম ও কেন উইলিয়ামসনের। ২০১৬ সালে নেলসনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা।
দেশের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচে টেইলর করেন ১৬ বলে ১৪ রান। পুরো সিরিজটিই ভালো কাটেনি তার। প্রথম দুই ম্যাচে করেন ১১ ও ১ রান। তাতে অবশ্য তার গৌরবময় ক্যারিয়ারে আঁচড় পড়ছে না। নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটে অমরত্ব নিশ্চিত করে ফেলেছেন তো আগেই!
ব্যাটিংয়ে নেমে হেনরি নিকোলস শুরুতেই ফেরার পর প্রতিরোধ গড়েন গাপটিল ও ইয়াং।
৫৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করা ইয়াং ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১০২ বলে। দুটি শতকই করলেন তিনি ডাচদের বিপক্ষে এই সিরিজে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ ও সিরিজ সেরা খেলোয়াড় হন তিনিই।
৬৬ বলে ফিফটি করা গাপটিল ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তদশ সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১৯ বলে। তিন বছর ও ২০ ম্যাচ পর তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
সেঞ্চুরি ছোঁয়ার খানিক পরই কট বিহাইন্ড হয়ে শেষ হয় গাপটিলের ১২৩ বলে ২ ছক্কা ও ১১ চারের ইনিংস।
এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন টেইলর। ড্রেসিং রুমে সতীর্থরা আর গোটা মাঠ দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান করতালিতে। মাঠে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয় ডাচ ক্রিকেটাররা।
শেষ ইনিংসটি দীর্ঘ না হলেও ট্রেডমার্ক স্লগে মিড উইকেট দিয়ে একটি ছক্কা মারেন টেইলর। দলে রান বাড়ানোর তাগিদে স্লগ করতে গিয়েই হন আউট।
পরের ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ইয়াং। শেষ হয় তার ৪ ছক্কা ও ৬ চারে গড়া ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগের সেরা ছিল এই সিরিজেই প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ১০৩।
পরের ব্যাটসম্যানদের দ্রুত কিছু রানে তিনশ ছাড়িয়ে যায় নিউ জিল্যান্ডের পুঁজি। শেষ ১০ ওভারে ১০৬ রান তোলে স্বাগতিকরা।
রান তাড়ায় স্টেফান মাইর্বাগের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালোই হয় নেদারল্যান্ডসের। প্রথম ১০ ওভারে তারা তুলে ফেলে ৭৪ রান। পাওয়ার প্লেতে যা তাদের সর্বোচ্চ।
ডাচদের ইনিংসে একমাত্র ফিফটি করেন মাইবার্গ। তার ৩৩ বলের ফিফটি দলটির ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম।
টেইলরের মতো মাইবার্গেরও ছিল এটা দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ। দল হারলেও ব্যাট হাতে শেষটা খারাপ হলো না ৩৮ বয়সী এই ওপেনারের। এক ছক্কা ও ১৩ চারে ৪৩ বলে করেন ৬৪ রান।
নেদারল্যান্ডসের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের ছয় জনই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই লম্বা করতে পারেননি তাদের ইনিংস।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দেন ম্যাট হেনরি। ৩৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন এই পেসার।
দারুণ এই জয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হলো টেইলরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের। ২০০৬ সালের মার্চে নেপিয়ারে শুরু হয়েছিল যে পথচলা, সাফল্যের নানা বাঁক পেরিয়ে তা থামল হ্যামিল্টনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৩/৮ (গাপটিল ১০৬, নিকোলস ২, ইয়াং ১২০, টেইলর ১৪, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৩, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪, ডগ ব্রেসওয়েল ২২, ল্যাথাম ২৩, সোধি ১৩*, জেমিসন ৬*; ক্লাসেন ১০-০-৬২-২, ফন বিক ৯-০-৫৮-২, ফ্লয়েড ৭-০-৪১-২, ডে লেডে ৬-০-৩৭-০, সিলার ৫-০-২৭-০, রিপ্পন ৭-০-৫৫-০, আরিয়ান ৬-০-৪৯-২)
নেদারল্যান্ডস: ৪২.৩ ওভারে ২১৮ (মাইবার্গ ৬৪, ও’ডাওড ১৬, বিক্রমজিত ২৫, ডে লেডে ২১, এডওয়ার্ডস ৯, রিপ্পন ২৪, সিলার ০, ফন বিক ৩২, আরিয়ান ৯, ফ্লয়েড ২, ক্লাসেন ১*; হেনরি ৭.৩-১-৩৬-৪, জেমিসন ৬-১-৪৩-১, ডগ ব্রেসওয়েল ৭-১-২৩-২, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৬-০-৫৩-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬-১-২০-১, সোধি ১০-১-৩৯-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ১১৫ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল ইয়াং
ম্যান অব দা সিরিজ: উইল ইয়াং