ছলছল চোখে বিদায়, শেষ ম্যাচে অল্পতে শেষ টেইলর

জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দেশ নিয়ে গর্ব আর ভালোবাসা নিশ্চয়ই সবসময়ই থাকে। তবে এ দিন আবেগটাই বুঝি বেশি পেয়ে বসল রস টেইলরকে। দেশের জার্সি গায়ে শেষবার বলে কথা! ক্যামেরার চোখ খুব কাছ থেকে ফুটিয়ে তুলল তাকে।তখন তার চোখের কোণে চিকচিক করছে জল। সতীর্থদের সঙ্গে তখন তার সঙ্গী তিন সন্তানও। জাতীয় সঙ্গীত শেষ হতেই এক হাতে মুছলেন চোখের পানি। তার পিঠ চাপড়ে দিলেন পাশে দাঁড়ানো মার্টিন গাপটিল। টেইলর সন্তানদের গালে এঁকে দিলেন ভালোবাসার চিহ্ন। এরপর মাঠ ছাড়লেন দর্শকের তুমুল করতালিতে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2022, 06:30 AM
Updated : 4 April 2022, 08:09 AM

রস টেইলরের শেষের শুরুটা হলো এমনই আবেগময়। এরপর ব্যাটিংয়ে নামার পালা। সেটির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। গাপটিল ও উইল ইয়াং দ্বিতীয় উইকেটে গড়লেন দুই শতাধিক রানের জুটি। প্রায় ৩৪ ওভারের সেই জুটিতে প্যাড পরে অপেক্ষা টেইলরের। অবশেষে গাপটিলের আউট তাকে সুযোগ করে দিল ৩৯তম ওভারে।

ব্যাট হাতে তিনি নামলেন, শেষবারের মতো। ড্রেসিং রুমে সতীর্থরা আর গোটা মাঠ তখন দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানাচ্ছে করতালিতে। টিভি পর্দায় দেখা গেল গ্যালারিতে থাকা পরিবার-পরিজনদের। মাঠে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দিলেন প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা।

মাঠে খুব দীর্ঘস্থায়ী হলো না তার উপস্থিতি। ট্রেডমার্ক সেই স্লগে একটি ছক্কা অবশ্য মারলেন মিড উইকেট দিয়ে। দলে রান বাড়ানোর তাড়ায় স্লগ করতে গিয়েই আউট হয়ে গেলেন ১৬ বলে ১৪ রান করে। সমাপ্তি হলো বর্ণাঢ্য এক অধ্যায়ের। ২০০৬ সালের মার্চে নেপিয়ারে শুরু হয়েছিল যে পথচলা, গৌরবময় নানা বাঁক পেরিয়ে সোমবার তা থেমে গেল হ্যামিল্টনে।

গত জানুয়ারিতে টেইলরকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। সেটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে চূড়ান্ত বিদায়। এ দিনের পর থেকে রস টেইলরের পরিচয়, ‘সাবেক ক্রিকেটার।’

জাতীয় সঙ্গীতের সময় অশ্রুসজল টেইলর। ছবি: ভিডিও থেকে।

শেষ ম্যাচের মতো শেষ সিরিজটি খুব ভালো কাটেনি তার। তিন ম্যাচে রান ১১, ১ ও ১৪। তবে তার গৌরবময় ক্যারিয়ারে আঁচড় তাতে পড়েনি। নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটে অমরত্ব নিশ্চিত করে ফেলেছেন তো আগেই!

টেস্টে ৭ হাজার ৬৮৩ রান, দেশের হয়ে সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি ১১২ টেস্ট খেলার রেকর্ডও তার (যৌথভাবে ড্যানিয়েল ভেটোরির সঙ্গে)। তার ১৯ টেস্ট সেঞ্চুরি দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

ওয়ানডেতে তার রান ও সেঞ্চুরি, দুটোতেই তিনি নিউ জিল্যান্ডের সবার ওপরে। ২‌১ সেঞ্চুরিতে ৮ হাজার ৬০৭ রান। ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে চার নম্বরে ব্যাট করে ৭ হাজার রান (৭৬৯০) রান করার একমাত্র কীর্তি তারই।

টি-টোয়েন্টিতে রান ১ হাজার ৯০৯, দেশের হয়ে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ।

তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ১৮ হাজার ১৯৯ রান, এই জার্সিতে সাড়ে ১৫ হাজার রানও নেই আর কারও। তার ৪০ সেঞ্চুরিও কিউইদের রেকর্ড

স্লিপে, সীমানায় কিংবা মঠের যে কোনো পজিশনে, ফিল্ডিংয়ে ছিলেন বরাবরই বিশ্বস্ত। শেষ ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে মাঠে নামার আগে তার ক্যাচ ৩৫০টি। কিপারদের বাইরে এই ক্যাচ সংখ্যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ।

এই সবকিছুই ছাপ আছে তার গ্রেটনেসের। তবে পরিসংখ্যানে যেটা লেখা নেই, তা হলো নির্ভরতা। তিনি থাকা মানেই দল নিশ্চিন্ত, সব সংস্করণেই এই বাস্তবতা ছিল বছরের পর বছর। ব্যাটিং বিপর্যয় বা ধস, কঠিন চ্যালেঞ্জ বা প্রতিকূল পথ, টেইলর বরাবরই ছিলেন ব্যাট হাতে সাহসী সৈনিক। চওড়া ব্যাটে কখনও হাল ধরেছেন দলের, কখনও ব্যাটকে মুগুর বানিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। কখনও ক্রিকেট ব্যকরণের একান্ত অনুসারী হয়ে দলকে রক্ষা করেছেন, কখনও ক্রিকেট বইকে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লগ আর উদ্ভাবনী ব্যাটিংয়ে মেলে ধরেছেন ভিন্ন এক জগৎ। ৩৮ বছর বয়সে ক্ষান্তি দিলেন সেই অভিযান।

বিদায়ী ম্যাচটা এবার জয়ে রাঙানোর পালা। উইল ইয়াংয়ের ১১২ বলে ১২০ ও গাপটিলের ১০২ রানের ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড ৫০ ওভারে তুলেছে ৩৩৩ রান। ডাচদের বিপক্ষে জয়টা কেবল তাই সময়েরই ব্যাপার।