মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে রোববার অস্ট্রেলিয়া জিতল ৭১ রানে। সপ্তম শিরোপা জিতে রেকর্ডটা আরও সমৃদ্ধ করল তারা।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মূল কারিগর অ্যালিসা হিলি। এই ওপেনার খেলেন ১৩৮ বলে ১৭০ রানের ইনিংস। ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি।
সঙ্গে র্যাচেল হেইন্স ও বেথ মুনির ফিফটিতে অস্ট্রেলিয়া করে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৩৫৬ রান।
জবাবে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড থমকে যায় ২৮৫ রানে। চার নম্বরে নেমে ১২১ বলে ১৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেও হারের বিষাদ সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় সিভারকে।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে হিলির শুরুটা ছিল ধীরস্থির। এরপর ডানা মেলে দেন সেমি-ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটার। হেইন্সের সঙ্গে জমে ওঠে তার জুটি।
দুজনকেই একই ওভারে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ইংল্যান্ডের সামনে। ৪৭ রানে হেইন্সের ক্যাচ ফেলেন ড্যানি ওয়াট, ৪১ রানে হিলির ক্যাচ নিতে পারেননি সিভার।
অবশেষে ১৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে হেইন্সের বিদায়ে। ৯৩ বলে ৭ চারে তিনি করেন ৬৮ রান।
৬২ বলে ফিফটি করার পর হিলি তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ঠিক ১০০ বলে। পরের পঞ্চাশে যেতে তার লাগে কেবল ২৯ বল।
দ্বিতীয় উইকেটে মুনির সঙ্গে ১৫৬ রানের আরেকটি বড় জুটি গড়ে হিলির ইনিংস থামে ৪৬তম ওভারে স্টাম্পড হয়ে।
২৬ চারে গড়া ইনিংসে হিলি স্পর্শ করলেন আরেকটি রেকর্ড। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সবচেয়ে বেশি (দুই) সেঞ্চুরিতে তিনি রিকি পন্টিং ও মাহেলা জয়াবর্ধনের পাশে বসলেন।
মুনি আউট হন ৪৭ বলে ৮ চারে ৬২ রান করে। শেষ দিকে দুই ওভারে দুটি করে উইকেট হারালেও অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহটা নিয়ে যায় প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬ উইকেট নেওয়া সোফি এক্লেস্টোন এবার ১০ ওভারে দেন ৭১ রান, উইকেট পান একটি।
সেই ম্যাচে পাঁচবার জীবন পেয়ে ১২৯ রানের ইনিংস খেলা ওয়াট এবার রান তাড়ায় বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারেই। ট্যামি বিউমন্ট (২৭) ও অধিনায়ক হিদার নাইটও (২৬) পারেননি তেমন কিছু করে দেখাতে।
নিয়মিত উইকেট হারানো দলকে একাই টানেন সিভার। ২৩ রানে তাকেও এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সে যাত্রায়।
৯০ বলে সেঞ্চুরি করে এগিয়ে যান সিভার। ২১৩ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর চার্লি ডিনের সঙ্গে দারুণ এক জুটিতে ফিকে হয়ে যাওয়া আশা নতুন করে জাগানোর চেষ্টা করেন তিনি।
শেষ ৪৮ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৮২ রান। কিন্তু ৬৫ রানের নবম জুটি ভাঙার পর আর বেশিদূর যেতে পারেনি তারা। দ্রুত শেষ ব্যাটার আনা শ্রাবসোলকে বিদায় করে উচ্ছ্বাসে মাতে অস্ট্রেলিয়া।
স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে হিলির হাতে। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ৫০৯ রান করে টুর্নামেন্টে সেরাও তিনিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৫৬/৫ (হিলি ১৭০, হেইন্স ৬৮, মুনি ৬২, গার্ডনার ১, ল্যানিং ১০, ম্যাকগ্রাথ ৮*, পেরি ১৭*; বার্ন্ট ১০-০-৬৯-০, শ্রাবসোল ১০-০-৪৬-৩, সিভার ৮-০-৬৫-০, ডিন ৪-০-৩৪-০, এক্লেস্টোন ১০-০-৭১-১, ক্রস ৮-০-৬৫-০)
ইংল্যান্ড: ৪৩.৪ ওভারে ২৮৫ (বিউমন্ট ২৭, ওয়াট ৪, নাইট ২৬, সিভার ১৪৮*, জোন্স ২০, ডাঙ্কলি ২২, বার্ন্ট ১, এক্লেস্টোন ৩, ক্রস ২, ডিন ২১, শ্রাবসোল ১; শাট ৮-০-৪২-২, ব্রোন ৭-০-৫৭-০, কিং ১০-০-৬৪-৩, ম্যাকগ্রাথ ৮-০-৪৬-১, জোনাসেন ৮.৪-০-৫৭-৩, গার্ডনার ২-০-১৫-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭১ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: অ্যালিসা হিলি
প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: অ্যালিসা হিলি