বাবরের আরেকটি সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে সিরিজ পাকিস্তানের

শূন্য রানে নেই ২ উইকেট! এটিই যেন অস্ট্রেলিয়ার প্রতীকী চিত্র হয়ে থাকল ম্যাচ জুড়ে। প্রথম দুই ম্যাচে তিনশর বেশি রান করা দলটির ব্যাটিং এবার মুখ থুবড়ে পড়ল। রান তাড়ায় টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাবর আজম। ইমাম-উল-হকও খেললেন দারুণ ইনিংস। বড় ব্যবধানে জিতে সিরিজ জয়ের আনন্দে মাতল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 04:48 PM
Updated : 2 April 2022, 07:22 PM

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শনিবার সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে পাকিস্তান জিতল ৯ উইকেটে। হার দিয়ে শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা। 

জয়ের ভিত গড়ে দেন মূলত পেসাররা। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের দারুণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ২১০ রানে।

জবাবে ইমাম ও বাবরের অবিচ্ছিন্ন ১৯০ রানের জুটিতে পাকিস্তান জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ৭৩ বল বাকি থাকতে।

১১৫ বলে ১২ চারে ১০৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা অধিনায়ক বাবর। আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইমাম এবার ১০০ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় করেন ৮৯ রান।

আগের ম্যাচে এই দুজনের সেঞ্চুরিতে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছিল পাকিস্তান।

২০০২ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। আগের দুই ম্যাচে ঝড়ো ইনিংস খেলা ট্রাফিস হেড বোল্ড হন আফ্রিদির ফুলটসে। পরের ওভারে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বিদায় নেন রউফের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। পরে এই পেসারের বলেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মার্নাস লাবুশেন।

তখন ৬ রানে ৩ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার!

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বেন ম্যাকডারমট (৩৬) ও মার্কাস স্টয়নিস (১৯) টেনে নিতে পারেননি ইনিংস। ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অ্যালেক্স কেয়ারি ও ক্যামেরন গ্রিন। কেয়ারি তুলে নেন ফিফটি, ৫৫ বলে।

দুই জনের ৯৫ বলে ৮১ রানের জুটি ভাঙে গ্রিনের বিদায়ে। ৪০ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় তিনি করেন ৪৯ রান। পরের ওভারে বেরিয়ে এসে ক্যাচ দেন কেয়ারি।

জেসন বেহরেনডর্ফ ও ন্যাথান এলিসের দ্রুত বিদায়ের পর ১৬৬ রানে ৯ উইকেট হারানো দলের স্কোর দুইশ ছাড়ায় মূলত পেসার শন অ্যাবটের ব্যাটে।

শেষ উইকেটে অ্যাডাম জ্যাম্পার সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাবট আউট হন ৪৯ রানে। ৪০ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় গড়া তার ইনিংস। জ্যাম্পা ৮ বল খেলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন।

৩টি করে উইকেট নেন রউফ ও ওয়াসিম। আফ্রিদির প্রাপ্তি দুটি।

মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তান শুরুতেই উইকেট হারায়। তিন চারে ১৭ রান করে ফখর জামান বিদায় নেন চতুর্থ ওভারে। তবে বাবর ও ইমামের দৃঢ়তায় একটুর জন্য দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি স্বাগতিকদের।

বাবর যদিও আউট হতে পারতেন ১ রানে, শর্ট মিডউইকেটে কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি হেড। দুই ব্যাটসম্যান এরপর আর সুযোগই দেননি অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের।

৫৭ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া বাবর তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ১১০ বলে। তার ওয়ানডে সেঞ্চুরি হলো ১৬টি। অধিনায়ক হিসেবে ১২ ম্যাচেই পাঁচটি!

এই সংস্করণে পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় মোহাম্মদ ইউসুফকে ছাড়িয়ে গেলেন বাবর। ২০ সেঞ্চুরি করে ওপরে আছেন কেবল সাইদ আনোয়ার।

লাবুশেনকে চার মেরে দলের জয়ে তুলির শেষ আঁচড়টা দেন ইমাম। অস্ট্রেলিয়ার রানটা আরেকটু বেশি হলে হয়তো সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকই করে ফেলতেন বাঁহাতি এই ওপেনার!

অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় তিন ম্যাচে ১৪৯ গড়ে ইমামের রান সিরিজের সর্বোচ্চ ২৯৮। ২৭৬ রান করে সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন অবশ্য বাবর।

এই সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা ৯ ওয়ানডে হেরেছিল পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ এ। পরের ম্যাচে ৩৪৮ রান তাড়ায় জিতে বৃত্ত ভাঙার পর আরেকটি দারুণ জয়ে সিরিজ শেষ করল বাবরের দল।

১৯৯৮ সালের পর এবার পাকিস্তান সফরে এসে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এবার ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।

আগামী মঙ্গলবার একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হব দুই দল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৪১.৫ ওভারে ২১০ (হেড ০, ফিঞ্চ ০, ম্যাকডারমট ৩৬, লাবুশেন ৪, স্টয়নিস ১৯, কেয়ারি ৫৬, গ্রিন ৩৪, অ্যাবট ৪৯, বেহরেনডর্ফ ২, এলিস ২, জ্যাম্পা ০*; আফ্রিদি ৮-২-৪০-২, রউফ ৮.৫-১-৩৯-৩, জাহিদ ৮-০-৫১-১, ওয়াসিম ১০-১-৪০-৩, ইফতিখার ৭-০-৩৮-১)

পাকিস্তান: ৩৭.৫ ওভারে ২১৪/১ (ফখর ১৭, ইমাম ৮৯*, বাবর ১০৫*; বেহরেনডর্ফ ৯-০-৫১-০, এলিস ৬-০-৩৮-১, জ্যাম্পা ৯-০-৫০-০, গ্রিন ৩-০-১৯-০, হেড ২-০-৯-০, অ্যাবট ৩-০-১৫-০)

ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী পাকিস্তান

ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম

ম্যান অব দা সিরিজ: বাবর আজম