সংক্ষিপ্ত স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ৪ ওভারে ৬/০ |
জয়ের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের লড়াই
আগের দিন ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে তিনশর কাছে নিয়ে গেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা স্থায়ী ম্যারাথন ইনিংসে করলেন ১৩৭ রান। তার জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৭ রানের চেয়ে বড় লিড নিতে পারেনি।
দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সবচেয়ে ছোট লিড। আগের সর্বনিম্ন ছিল ১৭৬।
দ্বিতীয় ইনিংসে কেবল ৪ ওভার ব্যাট করতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিতে এদিন ১৭ ওভার কম খেলা হয়েছে।
তৃতীয় দিন শেষে ৭৫ রানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, হাতে রয়েছে ১০ উইকেট। বাংলাদেশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে এমন একটা সংগ্রহ গড়তে হবে সঙ্গে সফরকারীদের অলআউট করার মতো যথেষ্ট ওভার রাখতে হবে। তাই ডারবান টেস্ট দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর এক বাঁকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৯৮/৪) ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (জয় ১৩৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, মহারাজ ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০, মুল্ডার ৪-১-২৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৪ ওভারে ৬/০ (এরউই ৩*, এলগার ৩*; খালেদ ১-০-১-০, মিরাজ ২-১-২-০, শান্ত ১-০-৩-০)
আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ
প্রথম দিনের মতো আবারও আগেভাগে দিনের খেলা শেষ হওয়ার শঙ্কা জেগেছে। স্থানীয় সময় ৪. ১০ মিনিটে আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে গেছে খেলা। দিনের বাকি এখনও ১৭ ওভার।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ৬।
খেলা বন্ধ হতে না হতেই ডারবানে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। উইকেট কাভার দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন গ্রাউন্ডসম্যানরা।
শুরুতেই ব্যর্থ রিভিউ
স্রেফ এক ওভার করিয়েই সৈয়দ খালেদ আহমেদকে সরিয়ে নিলেন মুমিনুল হক। পেসারের জায়গায় বাংলাদেশ অধিনায়ক নিয়ে এলেন অনিয়মিত অফ স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্তকে।
তার প্রথম বলেই কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ।
অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়ার চেষ্টায় পারেননি ডিন এলগার। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল। কিন্তু ব্যাটের কানা স্পর্শ না করায় রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে চার। আরেক প্রান্তে মেডেন নিয়ে শুরু করেছেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
২৯৮ রানে থামল বাংলাদেশ
মাহমুদুল হাসান জয়ের ম্যারাথন ইনিংসের সমাপ্তি টেনে বাংলাদেশকে ২৯৮ রানে থামালেন লিজাড উইলিয়ামস। অন্য প্রান্তে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান ইবাদত হোসেন চৌধুরি তাই দ্রুত কিছু রানের চেষ্টায় ছিলেন জয়। কিন্তু স্লিপের ফিল্ডারকে পার করতে পারেননি তিনি। ক্যাচ জমান সাইমন হার্মার।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাবে ২৯৮ রানে থামল বাংলাদেশ। সবশেষ দুই জুটিতে যে রান এসেছিল, সেই ৬৭ রানই স্বাগতিকদের লিড।
৪৪২ মিনিট স্থায়ী ইনিংসে ১৫ চার ও দুই ছক্কায় ১৩৭ রান করেন জয়।
আগের দিনের চার উইকেটের সঙ্গে আর কিছুই যোগ করতে পারেননি হার্মার। এদিনের সেরা বোলার উইলিয়ামস, জয় তার তৃতীয় শিকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৯৮/৪) ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (জয় ১৩৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, মহারাজ ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০, মুল্ডার ৪-১-২৩-১)
ব্যবধান একশর নিচে
মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ের পর খেলার ধরন পাল্টে ফেলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। সাইমন হার্মারকে ছক্কার পর মেরেছেন চার। ভিয়ান মুল্ডারকে মেরেছেন চারটি চার, এর তিনটি টানা।
১১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ২৯৪। ৩২১ বলে ১৫ চার ও ২ ছক্কায় জয়ের রান এখন ১৩৭। ব্যবধান নেমে এসেছে ৭৩ রানে।
মুল্ডারই ভাঙলেন জুটি
বল হাতে পেতে অনেক দেরি হলেও উইকেট পেতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না ভিয়ান মুল্ডারের। নিজের তৃতীয় ওভারেই পেলেন উইকেট।
দ্বিতীয় বলে চার মেরে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে জুটির রান পঞ্চাশে নিয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই বল পর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাভার ড্রাইভের চেষ্টায় ধরা পড়েন স্লিপে, সাইমন হার্মারের হাতে।
১৪৪ বলে ৫১ রান যোগ করেন মিরাজ ও জয়। এতে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মিরাজের অবদান ৮১ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ২৯।
ম্যারাথন ইনিংসে ১১০ রানে ব্যাট করছেন জয়। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
অবশেষে মুল্ডারের হাতে বল
খেলছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। কিন্তু ওভারের পর ওভার গড়িয়ে গেলেও বল হাতে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে চা-বিরতির পর তাকে আক্রমণে আনলেন ডিন এলগার। ম্যাচের সেটি ১১১তম ওভার। ভিয়ান মুল্ডার ওভার থেকে আসে ৩ রান।
দুই উইকেটের পর জয়ের সেঞ্চুরি
নতুন সেশনের দ্বিতীয় বলেই উইকেট। লিটান দাসকে বোল্ড করে ৮২ রানের জুটি ভাঙেন লিজাড উইলিয়ামস। তবে এর প্রভাব পড়তে দেননি ইয়াসির আলি। ক্রিজে গিয়ে খেলতে থাকেন আস্থার সঙ্গে। দ্বিতীয় নতুন বল ভাবাতে পারেনি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। শেষ পর্যন্ত তার উইকেটটি ‘বোনাস’ হয়ে আসে। দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান তিনি।
এরপর থেকে মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গ দিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সব যে তিনি মাঝ ব্যাটে খেলতে পারছেন, এমন নয়। অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি, কানা নিলেও ফিল্ডারের হাতে যায়নি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। তবে জয়কে খুব ভালোভাবেই সঙ্গ দিচ্ছেন মিরাজ।
চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ২৫৭। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুমে করা ৩২০ সর্বোচ্চ।
৬৫ বলে এক ছক্কা ও ৩ চারে ২৪ রানে ব্যাট করছেন মিরাজ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি করা জয় ব্যাট করছেন ১০৬ রানে। তার ২৯৫ বলের লড়াকু ইনিংস গড়া ১০ চার ও এক ছক্কায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশে ও প্রতিপক্ষের মাঠে আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল ৭৭। ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুম টেস্টে এই রান করেছিলেন মুমিনুল হক।
স্বাগতিক বোলারদের তেমন সুযোগ দিচ্ছেন না জয়। স্পিনের বিপক্ষে পায়ের কাজ দারুণ। পাল্টা আক্রমণে চেপে বসতে দেননি আগের দিন ৪ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার সাইমন হার্মারকে, আস্থার সঙ্গে খেলছেন বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে। দুই দিনে দুটি নতুন বল সামাল দিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়। পেসারদের খেলছেন দেখেশুনে। তার ব্যাটেই ব্যবধান ১১০ এ নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ।
প্রথম সেশনে ৩০ ওভারে ১ উইকেটে ৮৫ রান যোগ করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে ২৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৭৪ রান।
জয়ের অসাধারণ সেঞ্চুরি
অন্য প্রান্তে নিয়মিতই উইকেট পড়ছে, কিন্তু অবিচল রয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। লড়াকু ব্যাটিংয়ে ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই চেষ্টাতেই ভেসেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আনন্দে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম সেঞ্চুরি। মুমিনুল হকের ৭৭ ছিল আগের সেরা। ব্যাটসম্যানের জন্য কঠিন পরীক্ষার জায়গায় প্রথম ইনিংসেই জয় ছুঁয়ে ফেললেন তিন অঙ্ক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে অভিষেকে করেছিলেন শূন্য। তবে এর বিষাদে তিনি ডুবে থাকেননি। নিউ জিল্যান্ডে খেলা পরের টেস্টেই খেলেন লড়াকু ৭৮ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের জয়ে যে ইনিংসের ছিল বড় ভূমিকা।
সেটিকে ছাড়িয়ে নিজের তৃতীয় টেস্টে এবার ২৬৯ বলে স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক। ১৭০ বলে ছুঁয়েছিলেন পঞ্চাশ, পরের পঞ্চাশ এলো একটু দ্রুততায়।
স্কিল ও টেম্পারামেন্টের পরীক্ষায় উতরে গিয়ে দলের খুব প্রয়োজনের সময় অসাধারণ ইনিংস খেলছেন জয়। এক প্রান্ত আগলে রেখে জুটি গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
৯৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ২৩৫। জয় ২৭০ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় খেলছেন ১০০ রানে। এক ছক্কায় মেহেদী হাসান মিরাজের রান ১০।
অহেতুক রান আউট ইয়াসির
আগের ওভারে হয়তো রান আউট হতে পারতেন মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু টেম্বা বাভুমা থ্রো করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললে বেঁচে যান এই ওপেনার। পরের ওভারে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে দারুণ এক উপহার পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রান আউট হয়ে যান ইয়াসির আলি চৌধুরি।
ডুয়ানে অলিভিয়েরের বল মিড উইকেটে পাঠিয়ে ছোটেন জয়। প্রথম কল ছিল দুই তবে সেটি সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ইয়াসিরকে ফিরিয়ে দেন তিনি। তবে ততক্ষণে অনেক দূর চলে আসা ইয়াসিরের আর ফেরার পথ ছিল না। দুই ব্যাটসম্যান চলে আসেন এক প্রান্তে। ফিল্ডারের বাজে থ্রোর পরও তাই বেলস ফেলতে অনেক সময় ছিল কাইল ভেরেইনার হাতে।
৫৩ বলে জয়ের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়েন ইয়াসির। যেখানে তার অবদান দুই চারে ৩৭ বলে ২২।
৯১ রানে খেলছেন জয়। ক্রিজে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার রানের আশেপাশে যেতে এই জুটিই বাংলাদেশের শেষ ভরসা।
বাংলাদেশের দুইশ
৮০তম ওভারে উইকেট মিললেও দ্বিতীয় নতুন বল নিতে বেশি দেরি করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮০.৫ ওভারে নতুন বল নিয়েছেন ডিন এলগার।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে সাবধানী মাহমুদুল হাসান জয়। নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি খেলছেন আস্থার সঙ্গে। ৮৫তম ওভারে দলের রান ছুঁয়েছে দুইশ।
লাঞ্চের পর ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। পেসার লিজাড উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন লিটন দাস।
পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ৯২ বলে ৬ চারে ৪১ রান করেন লিটন।
ভাঙে ১৭১ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটি। ক্রিজে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গী ইয়াসির আলি চৌধুরি।
জয়-লিটনের ব্যাটে চমৎকার সেশন
দিনের শুরুতেই উইকেট হারালেও চাপে ভেঙে পড়েনি বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয়ের রেকর্ড গড়া ইনিংস ও ভাগ্যকে পাশে পাওয়া লিটন দাসের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
৩০ ওভারে তাসকিন আহমেদকে হারিয়ে ৮৫ রান যোগ করেছে সফরকারীরা।
লাঞ্চে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৮৩। এখনও ১৮৪ রানে পিছিয়ে মুমিনুল হকের দল।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদুল হাসান জয় খেলছেন ৮০ রানে। তার ২৩০ রানের লড়াকু ইনিংস গড়া আট চার ও এক ছক্কায়। এই ইনিংস খেলার পথে ছাড়িযে গেছেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে খেলা ৭৮ রানকে।
দুইবার জীবন পাওয়া লিটন ৬ চারে ৯০ বলে ৪১ রানে ব্যাট করছেন লিটন। ১৬ রানে লিজাড উইলিয়ামসের বলে স্লিপে ডিন এলগারকে ক্যাচ দেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পরে ৩৯ রানে সাইমন হার্মারের বলে লেগ স্লিপে ভিয়ান মুল্ডারকে ক্যাচ দিয়ে আবার বাঁচেন তিনি।
এক প্রান্তে বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ পরীক্ষায় ফেলছেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে। অন্য পান্তে আগের দিনের মতো ততটা প্রভাব ফেলতে পারছেন না হার্মার। দ্বিতীয় দিন চার উইকেট নেওয়া অফ স্পিনারের বলে সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি মারছেন জয় ও লিটন। এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর মরিয়া চেষ্টায় দুটি রিভিউও হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৬৯ বলে দুই জনের জুটির রান এখন ৮২।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের এর চেয়ে বড় জুটি আছে কেবল একটি। ২০০২ সালে পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় উইকেটে হাবিবুল বাশার ও হান্নান সরকার গড়েছিলেন ৮৪ রানের জুটি।
সব মিলিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটিকে স্পর্শ করেছেন লিটন ও জয়। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে লিটন গড়েছিলেন ৮২ রানের জুটি।
দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে দ্বিতীয় নতুন বল। আর একবার ওভার পরই নতুন বল নিতে পারবেন ডিন এলগার।
ফের জীবন, ফের ব্যর্থ রিভিউ
সাইমন হার্মারের লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন লিটন দাস। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় ভিয়ান মুল্ডারের কাছে। এই ধরনের কিছুর জন্যই তাকে রাখা হয়েছিল লেগ স্লিপে কিন্তু ক্যাচ জমাতে পারেননি তিনি। সে সময় ৩৯ রানে ছিলেন লিটন।
এর আগে ১৬ রানে স্লিপে ডিন এলগারকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
এক বল পর ক্যাচের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটের কানা নয় প্যাডে লেগে উঠেছিল ক্যাচ, সেটা ধরেই উৎসবে মাতেন স্বাগিতকরা। আম্পায়ার আউট না দিলে নেন রিভিউ একই সঙ্গে হারান আরেকটি রিভিউ।
এর আগে মাহমুদুল হাসান জয়ের বিপক্ষেও রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার রিভিউ আছে আর কেবল একটি।
মুমিনুলকে ছাড়িয়ে জয়
কেশভ মহারাজকে তিন বলের মধ্যে দুটি চার মেরে নতুন উচ্চতায় উঠলেন মাহমুদুল হাসান জয়। মুমিনুল হককে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন তরুণ এই ওপেনার।
২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুম টেস্টে মুমিনুলের ৭৭ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
কাট করে মারা জয়ের প্রথম চারে ব্যবধান নেমে আসে দুইশর নিচে। পরের চার টেস্টে নিজের আগের সেরা ৭৮ স্পর্শ করেন জয়।
রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন লিটন
সাইমন হার্মারের স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল ব্যাটে খেলতে পারেননি লিটন দাস। তবে কট বিহাইন্ডের জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন কিপার-ব্যাটসম্যান লিটন।
পরে দেখা গেছে ব্যাট স্পর্শ করেনি বল, লেগেছিল থাই প্যাডে। তাই পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
সে সময় ২৯ রানে ছিলেন লিটন।
এর আগেই মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে তার জুটি স্পর্শ করে পঞ্চাশ, ৮০ বলে। ইনিংসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় অর্ধশত রানের জুটি। আগেরটিতেও ছিলেন জয়, সেখানে তার সঙ্গী ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
আগের ওভারে শর্ট লেগে কঠিন একটি সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকা পরের ওভারে কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
সাইমন হার্মারের বল ঠিক মতো ডিফেন্স করতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। ক্যাচ উঠেছে বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে দেন শর্ট লেগের ফিল্ডর, আঙুল ছোঁয়াতে পারলেও মুঠোয় নিতে পারেননি। সে সময় ৬৪ রানে ছিলেন জয়।
পরের ওভারে মিডল অর্ডারে পরে কেশভ মহারাজের বেরিয়ে যাওয়া বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় পারেননি লিটন। ব্যাটের কানা ঘেঁষে জমা পড়ে কিপার হাতে। কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে একটি রিভিউ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সে সময় ২৯ রানে ছিলেন লিটন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থ রিভিউ
আগের ওভারে শর্ট লেগে কঠিন একটি সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকা পরের ওভারে কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
সাইমন হার্মারের বল ঠিক মতো ডিফেন্স করতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। ক্যাচ উঠেছে বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে দেন শর্ট লেগের ফিল্ডার, আঙুল ছোঁয়াতে পারলেও মুঠোয় নিতে পারেননি। সে সময় ৬৪ রানে ছিলেন জয়।
পরের ওভারে মিডল অর্ডারে কেশভ মহারাজের বেরিয়ে যাওয়া বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় পারেননি লিটন। ব্যাটের কানা ঘেঁষে জমা পড়ে কিপার হাতে। কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে একটি রিভিউ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সে সময় ২৯ রানে ছিলেন লিটন।
একটি উইকেট ও একটি সুযোগ
দিনের শুরুতে নাইটওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদের বিদায়ের পর ফিরে যেতে পারতেন লিটন দাসও। তবে লিজাড উইলিয়ামসের বলে স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি ডিন এলগার। সে সময় ১৬ রানে ছিলেন লিটন।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভারে ৪৫ রান যোগ করেছে বাংলাদেশ। পানি বিরতির সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৪৩। ১৮২ বলে ৬৩ রানে খেলছেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৪২ বলে লিটনের রান ২১।
পেসারদের বিপক্ষ সাবধানী ছিলেন জয়। তবে চড়াও হয়েছেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মারের উপর। দুই চারের পর বেরিয়ে এসে উড়িয়েছেন ছক্কায়। আগের দিন চার উইকেট নেওয়া হার্মারকে চার মেরেছেন লিটনও।
বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে দুই জনই খেলছেন সাবধানে। এর মধ্যে নিজের জোনে একটি বল পেয়ে লিটন কাট করে মেরেছেন বাউন্ডারি।
আগের দিনের চেয়ে স্পিন সামলাতে এদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পায়ের ব্যবহার বেশ ভালো হচ্ছে। শুরুতে ক্যাচিং পজিশনে অনেক ফিল্ডার থাকলেও তাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।
৫ ওভারের স্পেল করে আক্রমণ থেকে সরে গেলেন লিজাড উইলিয়ামস ও ডুয়ানে অলিভিয়ের। এরপর আক্রমণে এলেন দুই স্পিনার কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মার।
তাসকিন আহমেদকে বিদায় করার পর লিটন দাসকেও ফেরানোর পথ করেছিলেন উইলিয়ামস। তার বলে স্লিপ ক্যাচ নিতে না পারা অধিনায়ক ডিন এলগার এরপরও আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেন এই পেসারকে।
আগের দিন চার উইকেট নেওয়া হার্মারকে চমৎকার স্ট্রেট ড্রাইভে চার মেরে ১৭০ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান মাহমুদুল হাসান জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষ টেস্টে বাংলাদেশের এটি কেবল সপ্তদশ ফিফটি। নেই কোনো সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ মুমিনুল হকের ৭৭।
এলগারের ব্যর্থতায় বাঁচলেন লিটন
ক্রিজে যাওয়ার একটু পরেই পুল করে ডুয়ানে অলিভিয়েরকে চার মারেন লিটন দাস। সেই ওভারেই ব্যাক ফুট পাঞ্চে মারেন আরেক বাউন্ডারি। পরে অলিভিয়েরকে ঠিক মতো পুল করতে না পেরে ক্যাচের মতো উঠেছিল, কিন্তু লাফিয়েও নাগাল পাননি কিপার, হয় চার।
পরের ওভারেই স্লিপে দেন সহজ ক্যাচ। লিজাড উইলিয়ামসের বলে ঠিক মতো ড্রাইভ করতে পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে যায় ডিন এলগারের কাছে। কিন্তু প্রথম স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। সে সময় ১৬ রানে ছিলেন লিটন।
১৪১ বলে ৪৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় অন্য প্রান্তে গুটিয়ে রেখেছেন নিজেকে। এখন পর্যন্ত আরও ২৫ বল খেলে যোগ করেছেন কেবল ২ রান।
তাসকিনকে ফিরিয়ে উইলিয়ামসের প্রথম
আগের দিন দুই স্পিনার প্রবল প্রতাপ দেখালেও তৃতীয় দিনের সকালে পেস দিয়েই বোলিং শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কন্ডিশনও পেস সহায়ক। মেঘ রয়েছে আকাশে।
শুরুতেই এলো সাফল্য। দিনের তৃতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদকে বিদায় করে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পেলেন লিজাড উইলিয়ামস।
মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে দ্বিতীয় দিন শেষ বেলায় নেমেছিলেন তাসকিন। পরের দিন তিনি ফিরলেন আগেভাগেই। উইলিয়ামসের অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলে ব্যাট চালিয়ে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় গালিতে। দ্বিতীয় চেষ্টায় জমান ভিয়ান মুল্ডার।
১০ বল খেলে তাসকিন করেন ১।
১০১ রানে পঞ্চম উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ক্রিজে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ছন্দে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান লিটন দাস।
মূল লক্ষ্য ব্যবধান কমানো
কিংসমিডের উইকেট যেন হয়ে উঠেছে মিরপুরের মতো। দ্বিতীয় দিন থেকেই স্পিনাররা যথেষ্ট টার্ন পাচ্ছেন, কিছু বল নিচুও হচ্ছে। স্বাগতিকদের দুই স্পিনার সাইমন হার্মার ও কেশভ মহারাজ পরীক্ষা নিচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। একশ রানের আগেই চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলের জন্য লিড এখন অনেক দূরের পথ।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে মেহেদী হাসান মিরাজ জানান, তাদের প্রথম লক্ষ্য ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানো। সেটা নিশ্চিত করতে কাটিয়ে দিতে চান প্রথম সেশন।
ক্রিজে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়, ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় থাকা লিটন দাস, ইয়াসির আলি চৌধুরি ও মিরাজের কাঁধে তাই অনেক অনেক দায়িত্ব। সেটা পালনের পথ মোটেও সহজ নয়। দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চের পর থেকে উইকেটে স্পিনারদের জন্য সুবিধা বাড়তে শুরু করেছে। তৃতীয় দিন উইকেট থেকে হার্মার ও মহারাজ আরও বেশি সহায়তা পাওয়ার কথা।
দ্বিতীয় দিন শেষের ছবি
দ্বিতীয় নতুন বল হাতে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে বাংলাদেশের হতাশা তত যেন বেড়েছে। ব্যাট হাতে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দারুণ লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩৬৭ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন সাইমন হার্মার। পরে চার উইকেট নিয়ে সফরকারীদের বিপদে ফেলে দিয়েছেন এই অফ স্পিনার।
৪ উইকেটে ৯৮ রানে কিংসমিডে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ডারবান টেস্টে এখনও ২৬৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে মুমিনুল হকের দল। নাইটওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদকে নিয়ে ক্রিজে আছেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (আগের দিন ২৩৩/৪) (বাভুমা ৯৩, ভেরেইনা ২৮, মুল্ডার ০, মহারাজ ১০, হার্মার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ের ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ৯৮/৪ (জয় ৪৪*, সাদমান ৯, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ০*; অলিভিয়ের ৪-১-৯-০, উইলিয়ামস ৫-০-১৫-০, হার্মার ২০-৭-৪২-৪, মহারাজ ১৯-১০-২৪-০, এলগার ১-০-৮-০)