ডারবানে হার্মারের স্পিনে বিপাকে বাংলাদেশ

দুই প্রান্তে দুই স্পিনার বোলিং করছেন। ব্যাটসম্যানের আশেপাশে ক‍্যাচের অপেক্ষায় কিপারসহ সাত ফিল্ডার। এই চিত্র দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে, সেটাও কেবল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। এতেই পরিষ্কার, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে স্বাগতিক স্পিনারদের সামলানো। চার উইকেট নিয়ে সাইমন হার্মার বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাজটা সহজ হবে না।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2022, 04:35 PM
Updated : 1 April 2022, 04:35 PM

৪ উইকেটে ৯৮ রানে ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। সবকটি উইকেট নিয়েছেন সাড়ে ছয় বছর পর দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে নামা অফ স্পিনার হার্মার।

দ্বিতীয় দিন ৪৯ ওভার ব্যাট করে সফরকারীরা। এর ৩৯ ওভারই করেন দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজ। ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশকে ভোগানো হার্মার ফেরার ম্যাচে ৪ উইকেট নিতে ২০ ওভারে দেন ৪২ রান। কোনো উইকেট না পেলেও ১৯ ওভারে স্রেফ ২৪ রান দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কাজটা দারুণভাবে করেছেন বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ।

১৪১ বলে চারটি চারে ৪৪ রানে খেলছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। নাইটওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদ ৬ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি।

কিংসমিডে শুক্রবার ৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা টেম্বা বাভুমার ৯৩ ও শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে হার্মারের লড়াইয়ে করে ৩৬৭ রান।

দিনের শুরুতে নতুন বলে পরপর দুই উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের চাপে ফেলে দেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তবে মহারাজ ও বাভুমার জুটিতে তিনশর পথে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে বাভুমা ফেরার পরের বলে মহারাজকেও আউট করে তাদের তিনশর আশেপাশে গুটিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা জাগায় মুমিনুলের দল।

সেখান থেকে লিজাড উইলিয়ামস ও ডুয়ানের অলিভিয়েরের সঙ্গে ৬৯ রান যোগ করে দলের সংগ্রহ সাড়ে তিনশ ছাড়ান হার্মার।

বাংলাদেশের দুই ওপেনার নতুন বলে উইলিয়ামস ও অলিভিয়েরকে সহজেই সামলানোর পর হুমকি হয়ে আসেন হার্মারই। ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস খেলে সফরকারীদের ভোগানো ৩৩ বছর বয়সী এই বোলার চা-বিরতির আগে শেষ ওভারে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি।

বলের ফ্লাইট বুঝতে পারেননি সাদমান। সামনের পায়ে খেলার বদলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় বলের লাইনে যেতে পারেননি। ৯ রান করে ফিরে যান বোল্ড হয়ে।

জয় ও তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন স্পিনারদের। জোনে বল পেলে মারছিলেন বাউন্ডারিও। দুটি করে ছক্কা ও চার মারা শান্তকেও বোল্ড করে থামান হার্মার।

সেটি ছিল অফ স্পিনারের জন্য স্বপ্নের এক ডেলিভারি। হার্মারের ফ্লাইটেড ডেলিভারি পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন শান্ত। কিন্তু মিডল স্টাম্পে পড়ে টার্ন করে ব্যাটের কানা ঘেঁষে আঘাত হানে অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে। ভাঙে ৫৫ রানের জুটি।

সিলি পয়েন্টে কিগার পিটারসেনের দারুণ রিফ্লেক্স ক‍্যাচে শূন্যতেই থামেন মুমিনুল হক। সঙ্গে গড়েন অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড। টেস্টে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানের রেকর্ডে বসেন মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে। সাবেক অধিনায়কের মতো মুমিনুলও পাঁচ শূন্য করলেন ২৫ ইনিংসে।

দলের বিপদে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। লেগ স্টাম্পে পড়ে আরও বেরিয়ে যাওয়া বল না খেললেও পারতেন তিনি। কিন্তু খেলার চেষ্টায় ঠিক মতো পারেননি, গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ে কাইল ভেরেইনার গ্লাভসে। নিজে একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন মুশফিক। দক্ষিণ আফ্রিকা তাকে বিদায় করে সফল রিভিউয়ে।

১ উইকেটে ৮০ থেকে বাংলাদেশের রান হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৯৪। দিনের বাকি সময়টা তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কাটিয়ে দেন জয়। দ্বিতীয় দিন শেষে ২৬৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই রান এখন মনে হচ্ছে পাহাড়সম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (আগের দিন ২৩৩/৪) (বাভুমা ৯৩, ভেরেইনা ২৮, মুল্ডার ০, মহারাজ ১০, হার্মার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ের ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ৯৮/৪ (জয় ৪৪*, সাদমান ৯, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ০*; অলিভিয়ের ৪-১-৯-০, উইলিয়ামস ৫-০-১৫-০, হার্মার ২০-৭-৪২-৪, মহারাজ ১৯-১০-২৪-০, এলগার ১-০-৮-০)