ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ডিন এলগারের দল প্রথম ইনিংসে থেমেছে ৩৬৭ রানে।
কিংসমিডে টেম্বা বাভুমার প্রতিরোধের পর দলকে টানেন সাইমন হার্মার। কলপ্যাক চুক্তি শেষে জাতীয় দলে ফেরা এই অফ স্পিনার শেষ দুই উইকেটে লিজাড উইলিয়ামস ও ডুয়ানে অলিভিয়েরের সঙ্গে মিলে যোগ করেন ৬৯ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে টেস্টে পাঁচ উইকেটের আশা জাগান খালেদ। শরিফুল ইসলামের চোটে সুযোগ পাওয়া এই পেসার ৯২ রানে নেন ৪ উইকেট। আগের তিন টেস্ট মিলিয়ে কেবল ১ উইকেট পাওয়া খালেদই প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশের সফলতম বোলার।
তার প্রাপ্তির দিনে ভীষণ হতাশা নিয়ে ফেরেন টেম্বা বাভুমা। ২০১৬ সালের পর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও বিদায় নেন ৯৩ রানে।
৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা পুরান বলের শেষ ৩.১ ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দেয়। নতুন বল হাতেও শুরুর আভাস ভালো ছিল না বাংলাদেশের জন্য, প্রথম ওভারে খালেদ হজম করেন দুই বাউন্ডারি। তবে পরের ওভারে তিনিই নাড়িয়ে দেন স্বাগতিকদের।
চমৎকার এক ডেলিভারিতে কাইল ভেরেইনাকে এলবিডব্লিউ করে ভাঙেন ৬৫ রানের জুটি। পরের বলেই মাহমুদুল হাসান জয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পান ভিয়ান মুল্ডার। সাদামাটা এক ডেলিভারিতে হ্যাটট্রিকের জন্য কেশভ মহারাজকে চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেননি খালেদ।
শুরুতেই জোড়া উইকেট নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। মহারাজকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান বাভুমা। ৬৫ রানে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যাওয়ার পর ৭৭ রানে ইয়াসির আলিকে কঠিন ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। সম্ভাবনা জাগে তার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের।
এমন সময়ে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রত্যাশের চেয়ে অনেক বেশি টার্ন করা একটি বলে ভেঙে যায় বাভুমার সেঞ্চুরির স্বপ্ন। তড়িঘড়ি করে ব্যাট নামিয়ে সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু বল পায়ে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। তার ১৯০ বলে খেলা ৯৩ রানের ইনিংসে চার ১২টি।
৫৩ রানের জুটি ভাঙার পরের বলে বিদায় নেন মহারাজও। ইবাদত হোসেনের দারুণ ডেলিভারিতে তিনি হন বোল্ড।
২৯৮ রানে ৮ উইকেট হারানো প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ধরে রাখতে পারেনি বোলাররা। তাদের বাজে বোলিংয়ের পাশাপাশি সৌভাগ্যসূচক কিছু রানে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ।
রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে ৩৪ রানের নবম উইকেট জুটি ভাঙেন খালেদ। শুভাশিষ রায়কে (৩/১১৮) ছাড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পেসারদের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড হয়ে যায় তার।
দশম উইকেটও যথেষ্ট বিরক্ত করে সফরকারীদের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুটি সেঞ্চুরি থাকা হার্মার খেলছিলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতোই। মিরাজের স্পিনে কোনোভাবে বেঁচে গিয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন অলিভিয়ের। একবার আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যাওয়ার পর তিনি মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হন সেই আম্পায়ার্স কলেই।
ভাঙে ৩৫ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ৩৬৭ রানে। দেশের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বনিম্ন। তাদের আগের সর্বনিম্ন ছিল ৪২৯।
৭৩ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন হার্মার।
মিরাজ ৩ উইকেট নেন ৯৪ রানে। ইবাদত ২ উইকেট পান ৮৬ রানে। তাসকিন ২৩ ওভার বোলিং করে পাননি কোনো উইকেট।
শেষের দুই জুটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে। তবে সফরকারীদের জন্য দুর্ভাবনার কারণ দেখা গেছে লাঞ্চের পর। বেশ টার্ন পেয়েছেন অফ স্পিনার মিরাজ। এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসের ব্যাট করতে হবে মুমিনুল হকের দলকে। বাংলাদেশ একজন নিয়ে খেললেও দক্ষিণ আফ্রিকা এই টেস্টে খেলছে দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (আগের দিন ২৩৩/৪) (বাভুমা ৯৩, ভেরেইনা ২৮, মুল্ডার ০, মহারাজ ১০, হার্মার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ের ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)