হার্মারের স্পিনে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিনের চ্যালেঞ্জে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2022, 08:01 AM
Updated : 1 April 2022, 03:24 PM

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ৯৮/৪

ব্যাটিংয়ে হতাশা বাংলাদেশের

দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ। প্রথম সেশনে তারা উইকেট নেয় ৪টি। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার লেজের ব্যাটসম্যানরা লড়াই করে দলকে নিয়ে যায় ৩৬৭ রানে। এরপর সাইমন হার্মারের পালা!

দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসারকে সাবধানে খেলে পার করতে পারলেও হার্মারের স্পিনে খাবি খেতে থাকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সাড়ে ৬ বছর পর টেস্টে ফেরার উপলক্ষ দারুণ বোলিংয়ে রাঙান ৪ উইকেট নিয়ে।

বাংলাদেশের ভরসা হয়ে উইকেটে টিকে আছেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। ১৪১ বলে ৪৪ রানের লড়িয়ে ইনিংস খেলে তিনি শেষ করেছেন দিন।

হার্মারের পাশাপাশি দারুণ বোলিং করেন কেশভ মহারাজও। উইকেট না পেলেও এই বাঁহাতি স্পিনার ১৯ ওভারে রান দেন কেবল ২৪।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (আগের দিন ২৩৩/৪) (বাভুমা ৯৩, ভেরেইনা ২৮, মুল্ডার ০, মহারাজ ১০, হার্মার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ের ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ৯৮/৪ (জয় ৪৪*, সাদমান ৯, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ০*; অলিভিয়ের ৪-১-৯-০, উইলিয়ামস ৫-০-১৫-০, হার্মার ২০-৭-৪২-৪, মহারাজ ১৯-১০-২৪-০, এলগার ১-০-৮-০)

দিনের সমাপ্তি

ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও নাইটওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদ দিনের শেষ কয়েক ওভার কাটিয়ে দিলেন নিরাপদে। বাংলাদেশ দিন শেষ করল ৪ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে।

হার্মারের চতুর্থ শিকার মুশফিক

একটু আগে রিভিউয়ে টিকে গেলেও এবার রিভিউয়েই মুশফিকুর রহিমকে ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা। লেগ স্টাম্প লাইনে বল করে তাকে বিদায় করলেন সাইমন হার্মারই।

লেগ স্টাম্পে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্ল্যান্স করার চেষ্টা করেন মুশফিক। বলের গতির কারণে তিনি খেলতে পারেননি ঠিকমতো। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন কাইল ভেরেইনা। জোরাল আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। হার্মার বাধ্য করেন অধিনায়ককে রিভিউ নিতে। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল হালকা ছুঁয়ে গেছে মুশফিকের গ্লাভস।

১৯ বলে ৭ রান করে আউট হলেন মুশফিক। বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯৪।

ফেরার টেস্টে দুর্দান্ত বোলিংয়ে হার্মারের শিকার ৪ উইকেট।

রিভিউয়ে টিকলেন মুশফিক

সাইমন হার্মারের বলের মুশফিকুর রহিমকে কট বিহাইন্ড আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। মুশফিক রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই। রিভিউয়ে দেখা যায়, ব্যাট থেকে বেশ দূরে ছিল বল। টিকে যান মুশফিক।

মুমিনুলের শুন্যের রেকর্ড

শূন্য রানে আউট হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড ছুঁলেন মুমিনুল হক। নেতৃত্বে ৫ বার শূন্যতে বিদায় নিয়ে স্পর্শ করলেন মোহাম্মদ আশরাফুলকে। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড এখন যৌথভাবে এই দুজনের।

আশরাফুলের ৫ শূন্য এসেছে নেতৃত্বের ২৫ ইনিংসে। মুমিনুলের ৫টি হলো ঠিক ২৫ ইনিংসেই!

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১৬ বার শূন্যতে ফেরার রেকর্ডও আশরাফুলের। ১২ বার শূন্য করে রেকর্ডের দুইয়ে মাশরাফি মুর্তজা। মুমিনুল এখন যৌথভাবে তিনে খালেদ মাসুদ, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমে সঙ্গে।

শূন্যতেই শেষ মুমিনুল

রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গেলেও বেশিক্ষণ টিকলেন না মুমিনুল হক। সাইমন হার্মারের বলে কিগান পিটারসেনের দারুণ ক্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলেন শূন্য রানেই।

জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে সামনে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন মুমিনুল। কিন্তু বলের লাইন কাভার করতে পারেননি পুরোপুরি। ব্যাটের কানায় লেগে প্যাডে ছুঁয়ে বল যায় সামনের দিকে। সিলি মিড অফ থেকে বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত দকষতায় এক হাতে ক্যাচ নেন পিটারসেন।

ফেরার টেস্টে হার্মার নিলেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৮০।

টেস্টে এই নিয়ে ১১ বার শূন্য রানে ফিরলেন মুমিনুল, অধিনায়ক হিসেবে ৫ বার।

অল্পের জন্য রক্ষা মুমিনুলের

দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন মুমিনুল হক। নন স্ট্রাইক প্রান্তে টেম্বা বাভুমার থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগলেই তিনি আউট হতেন। একটুর জন্য বল স্টাম্পে না লাগায় রক্ষা পান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

দারুণ বলে বোল্ড শান্ত

যেভাবে খেলছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়, জুটি ভাঙার জন্য দরকার ছিল বিশেষ কিছুর। সেটিই করে দেখালেন সাইমন হার্মার। অফ স্পিনারদের জন্য স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন তিনি শান্তকে।

হার্মারের ফ্লাইটেড ডেলিভারি মিডল স্টাম্পে পিচ করে সামনে টেনে আনে শান্তকে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন শান্ত। কিন্তু বল দারুণভাবে টার্ন করে শান্তর ব্যাটের পাশ দিয়ে আলতো করে লাগে অফ স্টাম্পের বাইরের অংশে।

শান্তর সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ দুটি করে চার ও ছক্কায় ৮৭ বলে ৩৮ রান করে। বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮০। নতুন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক।

জুটির পঞ্চাশ

ব্লকের পর ব্লক, মাথা নিচু করে সাবধানী ব্যাটিং চলছিল। হুট করেই নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে সাইমন হার্মারকে উড়িয়ে মারলেন মাথার ওপর দিয়ে। ওই ছক্কায় পূর্ণ হলো মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে তার জুটির ফিফটি।

জুটির শুরুতে একটু আগ্রাসী ছিলেন শান্ত। উইকেটে যাওয়ার পরপরই দারুণ অন ড্রাইভে চার মারেন কেশভ মহারাজকে, পরে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান হার্মারকে, বাউন্ডারি মারেন ডিন এলগারের বলে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজ আঁটসাঁট বোলিং করতে থাকেন। শান্ত ও জয় ক্রিজ আঁকড়ে রাখেন সতর্ক ব্যাটিংয়ে।

দ্বিতীয় উইকেটের দুজনের জুটির ফিফটি এলো ১৪৮ বলে। শান্তর ব্যাট থেকেই এসেছে ৩৮ রান।

বাংলাদেশের পঞ্চাশ

সাদমানকে হারানোর ধাক্কা সামলে মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশকে। জয় শুরু থেকেই খেলছেন আস্থায়, শান্তর শুরুটাও হয়েছে দারুণ। দল পঞ্চাশ ছুঁয়েছে ১৫.২ ওভারে।

১৬ ওভারের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবহার করেছে তিনি স্পিনার। সাইমন হার্মার ও কেশভ মহারাজ তো বটেইম বল করেছেন অধিনায়ক ডিন এলগার নিজেও।

তিনে শান্ত

চা বিরতির পর আবার ব্যাটিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে শেষ সেশনের লড়াই শুরু করেছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত।

বিরতির আগে বিপদ বাংলাদেশের

চা-বিরতির ঠিক আগে প্রথম উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ১০ ওভার নিরাপদে কাটানোর পর বিদায় নিলেন সাদমান ইসলাম। প্রায় সাড় ৬ বছর পর টেস্টে ফিরে সাইমন হার্মার উইকেটের দেখা পেলেন দ্বিতীয় ওভারেই।

হার্মারের ফ্লাইটেড বলের লেংত পড়তে গড়বড় করে বসেন সাদমান। সামনে না খেলে তিনি অপেক্ষায় থাকেন পেছনের পায়ে। বল পিচ করে টার্ন না করে একটু নিচু হয়ে সোজা গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। সাদমানের ব্যাট নামে অনেক পরে। উল্লাসে মেতে ওঠেন হার্মার।

৩৩ বলে ৯ রান করে আউট সাদমান। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারাল একাদশ ওভারে, উদ্বোধনী জুটি শেষ ২৫ রানে।

এই আউটের পরই আসে চা বিরতির ঘোষণা। মাহমুদুল হাসান জয় অপরাজিত ১৬ রানে।

নির্বিঘ্নে শুরু বাংলাদেশের

দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন বলের চ্যালেঞ্জে আপাতত উতরে গেল বাংলাদেশ। ডুয়ানে অলিভিয়ের ও অভিষিক্ত লিজাড উইলিয়ামসকে ভালোভাবেই সামলে নিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। নবম ওভারেই তাই সাইমন হার্মারের অফ স্পিন আক্রমণে আনতে বাধ্য হলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার।

১০ ওভারে বাংলাদেশের রান কোনো উইকেট না হারিয় ২৫। মাহমুদুল হাসান জয় খেলছেন ১৬ রানে, ৯ রানে সাদমান ইসলাম।

ওপেনিংয়ে জয়-সাদমান

অনুমিতভাবেই বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে নেমেছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম।

জয়ের এটি তৃতীয় টেস্ট। গত জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুইতে ঐতিহাসিক জয়ের টেস্টে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর তিনি পরের টেস্টে খেলতে পারেননি আঙুলের চোটে।

সাদমানের এটি ত্রয়োদশ টেস্ট। সবশেষ ৮ ইনিংসে ফিফটি নেই তার, ৫বারই ফিরছেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। তামিম ইকবাল অসুস্থ না হলে এই টেস্টে তিনি থাকতেন একাদশের বাইরে। তার সামনে চ্যালেঞ্জ সুযোগ কাজে লাগানোর।

প্রোটিয়া লেজের লড়াই

প্রথম সেশনে দারুণ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিতে পারলেও দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে প্রতিরোধ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টেলএন্ডাররা। সাড়ে ছয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ফেরার টেস্টে অফ স্পিনার সাইমন হার্মার দারুণ লড়াই করেন ব্যাট হাতে। শেষ দুই জুটিতে মহামূল্য ৬৯ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এরপরও অবশ্য দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন রান এটিই। আগে মাত্র দুবার তারা অলআউট হয়েছিল দেশের মাঠে, ৪২৯ ও ৪৪১ রানে।

শরিফুল ইসলাম ফিট থাকলে যার একাদশেই জায়গা হতো না, সেই খালেদ মাহমেদ ৯২ রা নে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার। দক্ষিণ আফ্রিকায় পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এটি। দারুণ বোলিংয়ে মিরাজের শিকার ৩ উইকেট।

চ্যালেঞ্জ এবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (আগের দিন ২৩৩/৪) (বাভুমা ৯৩, ভেরেইনা ২৮, মুল্ডার ০, মহারাজ ১০, হার্মার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ের ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)

অবশেষে সমাপ্তি

দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ জুটির যন্ত্রণা থেকে অবশেষে মুক্তি পেল বাংলাদেশ। ডুয়ানে অলিভিয়েরকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ইতি টানলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

মিরাজের ফ্লাইটেড ডেলিভারি অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে টার্ন করে বেশ খানিকটা। পেছনের পায়ে খেলার চেষ্টায় অলিভিয়ের পারেননি ব্যাটে-বলে করতে। বল লাগে প্যাডে। আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি অলিভিয়ের।

তিনি আউট ১২ রানে। সাইমন হার্মার অপরাজিত ৩৮ রানে। শেষ জুটিতে রান এলো ৩৫। দক্ষিণ আফ্রিকা অল আউট ৩৬৭ রানে।

নিস্ফলা রিভিউ

শেষ উইকেট নিতে মরিয়া বাংলাদেশ সফল হলো না রিভিউয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের বল বিশাল টার্নে ঠিকমতো খেলতে পারেননি ডুয়ানে অলিভিয়ের। বল লাগে পায়ে। জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিভিউয়ে দেখা যায় বল লাগছিল লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশে।

আম্পায়ার্স কলে টিকে যান অলিভিয়ের। দীর্ঘায়িত হয় বাংলাদেশের হতাশা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাড়ে তিনশ

নবম জুটির মতো শেষ জুটিতেই বাংলাদেশকে ভালোই যন্ত্রণা দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লগ সুইপে সাইমন হার্মারের ছক্কায় রান পেরিয়ে গেল সাড়ে তিনশ।

১১৬ ওভারে রান ৯ উইকেটে ৩৫৪। শেষ জুটির রান ২২। হার্মার খেলছেন ৩২ রানে।

জয়ের দুর্দান্ত ক্যাচ, খালেদের চতুর্থ

বাংলাদেশের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠা জুটি অবশেষে শেষ হলো। খালেদ আহমেদের বলে গালিতে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন মাহমুদুল হাসান জয়।

অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বলে ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন লিজাড উইলিয়ামস। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় গালির দিকে। বেশ গতিতে আসা নিচু হওয়া বলে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন জয়।

অভিষিক্ত উইলিয়ামস অবশ্য তার কাজ করে গেছেন। ৩২ বলে ১২ রান করেছেন, সাইমন হার্মারের সঙ্গে নবম উইতেটে গড়েছেন ৩৪ রানের মূল্যবান জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৯ উইকটে ৩৩২।

খালেদ দেখা পেলেন তার চতুর্থ শিকারের। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও নিশ্চিত করলেন। আগের সেরা ছিল ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে শুভাশিস রায়ের ১১৮ রানে ৩ উইকেট।

লাঞ্চের পর খেলা শুরু

লাঞ্চের পর বাংলাদেশের বোলিং শুরু হলো মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন দিয়ে। সেশনে তার প্রথম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা নিল ৩ রান।

বাংলাদেশের দারুণ সেশন

লাঞ্চের আগে শেষ ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মারলেন লিজাড উইলিয়ামস। তবে খুব স্বস্তিতে বিরতিতে যেতে পারছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ যে আদায় করে নিয়েছে ৪ উইকেট!

৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকার রান লাঞ্চ বিরতিতে ৪ উইকেটে ৩১৪।

সেশনে ২৮.১ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ৮১ রান।

দিনের শুরুতে দ্বিতীয় নতুন বলে টানা দুই ডেলিভারিতে কাইল ভেরেইনা ও ভিয়ান মুল্ডারকে ফেরান খালেদ আহমেদ। এরপর কেশভ মহারাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে অর্ধশত রানের জুটি গড়ে তোলেন টেম্বা বাভুমা। মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণ এক ডেলিভারিতে বাভুমাকে থামান ৯৩ রানে। পরে ইবাদত বোল্ড করে দেন মহারাজকে।

লেজের দুই ব্যাটসম্যান সাইমন হার্মার ও লিজাড উইলিয়ামস খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে লাঞ্চের আগে দলের অলআউট হওয়া ঠেকান।

রিভিউয়ে সফল উইলিয়ামস

ইবাদত হোসেনের বলে লিজাড উইলিয়ামসকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বাঁহাতি লিজাড উইলিয়ামস।

রিভিউয়ে অবশ্য শুরুতে ভুল করেন ব্রডকাস্টাররা। উইলিয়ামসকে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ধরে নিয়ে রিভিউ দেখানো হয় শুরুতে। তাতে ব্যাটসম্যানকে আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে আবার শুধরে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেই দেখানো হয়। এবার বল পিচ করে লেগ স্টাম্পের সামান্য বাইরে। রক্ষা পান উইলিয়ামস।

দক্ষিণ আফ্রিকার তিনশ

ইবাদত হোসেনের বলে একটি লেগ বাই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার রান তিনশ স্পর্শ করল ১০১ ওভারে। হারাতে হয়েছে তাদের ৮ উইকেট।

ইবাদতের শিকার মহারাজ

টেম্বা বাভুমার সঙ্গে জুটি ভাঙার পর কেশভ মহারাজও বিদায় নিলেন দ্রুতই। তাকে বোল্ড করে দিলেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি।

ফুল লেংথ বল সিমে পিচ করে ভেতরে ঢোকে একটু। মহারাজ ব্যাট চালাতে একটু দেরি করে ফেলেন। বল তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় স্টাম্পে।

৪০ বলে ১৯ রান করে শেষ মহারাজের লড়াই। ইবাদত পেলেন তার দ্বিতীয় শিকারের দেখা।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৮ উইকেটে ২৯৮।

উইকেটে নতুন দুই ব্যাটসম্যান সাইমন হার্মার ও লিজাড উইলিয়ামস।

আক্ষেপে শেষ বাভুমার লড়াই

বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে অপেক্ষায়, পেরিয়ে যাচ্ছে ম্যাচের পর ম্যাচ। টেম্বা বাভুমার অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। এবার খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পেলেন না বহু কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার দুর্দান্ত ইনিংস শেষ হলো সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে।

মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত টার্নিং ডেলিভারি হতভম্ব করে দেয় বাভুমাকে। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারিতে কাট করার পজিশনে দ্রুতই চলে যান বাভুমা। বল টার্ন করে অনেকটা। শেষ মুহূর্তে ব্যাট পেতে দিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। বল বিশাল বাঁক খেয়ে তার পায়ে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে।

বাভুমা ফিরলেন ১২ চারে ১৯০ বলে ৯৩ রান করে। জুটি থামল ৫৩ রানে।

তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল সপ্তম টেস্টে, সেই ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ৫০ টেস্টেও সেঞ্চুরি সেই একটিই।

মিরাজ নিলেন ইনিংসে তার দ্বিতীয় উইকেট।

জুটির পঞ্চাশ

দিনের শুরুতে নতুন বলে জোড়া ধাক্কা সামলে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টেম্বা বাভুমা ও কেশভ মহারাজের জুটি শুধু প্রতিরোধই গড়েনি, রানও তুলছে ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন করে।

সপ্তম জুটির ফিফটি এসেছে ৯১ বলে। তাতে বাভুমার অবদান ২৯ রান, মহারাজের ১৮।

সুযোগ হাতছাড়া

টেম্বা বাভুমার প্রতিরোধ ভাঙার একটি সুযোগ মিলেছিল। কিন্তু কঠিন সেই সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

ইবাদত হোসেনের ডেলিভারি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে, লেংথ বল। বাভুমার ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় স্লিপে। ইয়াসির আলি চৌধুরি ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তীব্র গতিতে আসা বল তার হাতে লেগে চলে যায় পেছনে।

বাভুমা রক্ষা পেলেন ৭৭ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ৬ উইকেটে ২৬৭।

একটুর জন্য

অল্পের জন্য আরেকটি উইকেটের দেখা পেল না বাংলাদেশ আর স্বস্তি পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাসকিন আহমেদের বল লেংথ থেকে ভেতরে ঢোকে বেশ কিছুটা। টেম্বা বাভুমার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল ছোবল দেয় পেছনের পায়ে।

জোরাল আবেদনে আঙুল তোলেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল লাগছিল লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশে।

আম্পায়ার্স কলে টিকে যান ৬৫ রানে থাকা বাভুমা। বাংলাদেশের রিভিউও টিকে থাকে।

হলো না হ্যাটট্রিক

টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের হাতছানি ছিল খালেদ আহমেদের সামনে। কিন্তু হ্যাটট্রিক বলটি খুব ভালো করতে পারলেন না তিনি। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের লেংথ বল অনায়াসে ছেড়ে দিলেন নতুন ব্যাটসম্যান কেশভ মহারাজ।

খালেদের টানা দুই

জুটি ভাঙার পর আরেকটি উইকেট ধরা দিল পরের বলেই। সৈয়দ খালেদ আহমেদ উইকেট নিলেন টানা দুই বলে। স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন মাহমুদুল হাসান জয়।

নতুন ব্যাটসম্যান ভিয়ান মুল্ডারকে অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল করেন খালেদ। পিচ করে বলটি বেরিয়ে যায় একটু। ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে মুল্ডার ব্যাট চালিয়ে দেয় জায়গায় দাঁড়িয়ে। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পেছনে। গুলির বেগে আসা বল তৃতীয় স্লিপে বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে দুই হাতে তালুবন্দি করেন জয়।

স্লিপ ফিল্ডিং বাংলাদেশের বরাবরের দুর্বলতা। সেই বাস্তবতায় এটি অসাধারণ ক্যাচ।

মুল্ডার আউট হলেন ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৬ উইকেটে ২৪৫।

ক্যারিয়ারের আগের ৩ টেস্টে খালেদের উইকেট ছিল ১টি। এবার এই টেস্টেই নিলেন ৩ উইকেট।

নতুন বলে খালেদের সাফল্য

দ্বিতীয় নতুন বলে কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। কাইল ভেরেইনাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

নতুন বলের শুরুটা যদিও ভালো ছিল না তার। প্রথম বলটিই করেন লেগ স্টাম্পে, যেটি অনায়াসেই বাউন্ডারিতে পাঠান টেম্বা বাভুমা। ওই ওভারে বাভুমা বাউন্ডারি মারেন আরেকটি। প্রথম ওভারে জোড়া চার হজম করে খালেদ লেংথ খুঁজে পান নতুন বলে নিজের দ্বিতীয় ওভারে।

গুড লেংথ থেকে একটু সামনে পিচ করা বল তীক্ষ্নভাবে ঢোকে ভেতরে। ভেরেইনার ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে বল লাগে প্যাডে। আবেদনে আঙুল তুলতে খুব একটা সময় নেননি আম্পায়ার। ভেরেইনা যদিও রিভিউ নেন। তবে বল লাগছিল স্টাম্পে। দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় রিভিউ।

৮১ বলে ২৮ রান করে আউট ভেরেইনা। বাভুমার সঙ্গে জুটির সমাপ্তি ৬৫ রানে।

দ্বিতীয় নতুন বল

৮০ ওভার শেষ হতেই আর অপেক্ষা নয়। দ্বিতীয় নতুন বল নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। চকচকে লাল কুকাবুরা তুলে দিলেন তিনি সৈয়দ খালেদ আহমেদের হাতে।

মেঘলা শুরু

দিনের শুরুতে ডারবানের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা বেশ। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির শঙ্কাও আছে এ দিন।

বাংলাদেশের লক্ষ্য

বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো প্রথম দিন শেষে বলেন, দুই দলকে তিনি সমতায় দেখছেন। দ্বিতীয় দিন সকালে তার চাওয়া দ্রুত দুটি উইকেট নেওয়া এবং সেই পথ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০০-৩২০ রানের মধ্যে আটকে রাখা।

বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে দ্বিতীয় নতুন বলের দিকে, যা পাওয়া যাবে আর ৩.১ ওভার পরই। কোচের চাওয়া পূরণ করতে হলে আগের দিনের হতাশা পেছনে ফেলে জ্বলে উঠতে হবে তাসকিন আহমেত, ইবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদের পেসত্রয়ীকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া থাকবে, টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনার জুটি যেন লম্বা হয় আরও। ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় আছেন ভিয়ান মুল্ডার, অলরাউন্ডার হিসেবেই যাকে নেওয়া হয় দলে। ৮ টেস্ট খেলে এখনও পর্যন্ত অবশ্য কোনো ফিফটি করতে পারেননি তিনি। এবার তিনি চাইবেন সেই খরার অবসান। এছাড়াও দুই স্পিনার কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মারের ব্যাটের হাতও খারাপ নয়। দুজনেরই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে দুটি করে। মহরাজের টেস্ট ফিফটি আছে ৩টি।

প্রথম দিন শেষের ছবি

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ২৩৩ রান, প্রথম দিন শেষে খানিকটা এগিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে খুব পিছিয়ে

নয় বাংলাদেশও। প্রথম সেশনে উইকেট নিতে না পারার হতাশা ভুলে তারা ঘুরে দাঁড়ায় দ্বিতীয় সেশনে। এক পর্যায়ে ১৮০ রানের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় ৪ উইকেট। পড়ে টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনার অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রানের জুটিতে প্রোটিয়ারা দিনটা শেষ করে স্বস্তিতে।

প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৭৬.৫ ওভারে ২৩৩/৪ (এলগার ৬৭, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৫৩*, রিকলটন ১৯, ভেরেইনা ২৭*; তাসকিন ১৮-৩-৫৮-০, ইবাদত ১৭-৬-৫৮-১, খালেদ ১২.৫-০-৪৯-১, মিরাজ ২৬-৪-৫৭-১, মুমিনুল ৩-০-৮-০)