বিবর্ণ শুরুর পর বাংলাদেশের লড়াই

উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে টস জিতে মুমিনুল হক নিলেন বোলিং। অধিনায়কের চাওয়া যদিও পূরণ হলো না। তেমন বোলিংই করতে পারলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। এলোমেলো বোলিংয়ের সুবিধা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুর জুটিতেই পেয়ে যায় শতরান। তবে বিবর্ণ প্রথম সেশনের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে ফিরেছে সফরকারীরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2022, 04:45 PM
Updated : 31 March 2022, 05:51 PM

ডারবান টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৩৩ রান। মাঝপথে দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দলকে অর্ধশত রানের জুটিতে টানছেন টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা।

ম্যাচ শুরুর আগেই বড় এক ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পেটের পীড়ায় হারায় তামিম ইকবালকে। ছোট খাটো কিছু চোট সমস্যায় ছিটকে যান বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।

অদ্ভূত সমস্যায় ম্যাচ শুরু হতে পারেনি নির্ধারিত সময়ে। সাইটস্ক্রিনের একটা অংশ কালো থাকায় আপত্তি জানান ডিন এলগার। সেটা ঠিক করতে নষ্ট হয় আধ ঘণ্টার বেশি মূল্যবান সময়। আবার দিনের শেষ দিকে আলোকস্বল্পতায় আগেভাগেই শেষ হয়ে যায় খেলা। এই দুইয়ের মাঝে বাংলাদেশ বোলিং করতে পারে ৭৬.৫ ওভার।

প্রথম সেশনে পেসাররা ছিলেন খুবই অধারাবাহিক। হয় অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ডেলিভারি দেন, নয়তো লেগ স্টাম্পে। বাউন্ডারি বল ছিল অনেক বেশি, সেগুলো অনায়াসে কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান তোলেন ডিন এলগার।

প্রথম সেশনের পর লাইন-লেংথ অনেকটা ফিরে পান তাসকিন। তবে দিন জুড়ে অধারাবাহিক ছিলেন ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। যদিও এই দুই জনেই পান একটি করে উইকেট। 

তামিমের অভাব বাংলাদেশ কতটা অনুভব করবে সেটা হয়তো বোঝা যাবে পরে। তবে সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলামের অভাব প্রথম দিনেই প্রবলভাবে অনুভব করেছে দল। একেবারেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি খালেদ।

সাকিবের জায়গায় বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হওয়ায় মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে তাই বাড়তি দায়িত্ব। প্রথম দিনে মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রস্তুত। ২৬ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে একটি উইকেট নেওয়ার সঙ্গে দারুণ ফিল্ডিংয়ে করেছেন একটি রান আউট।

কিংসমিডে ইনিংস শুরু করতে নেমে প্রথম বলটাই পান ফুলটস, অনায়াসে বাউন্ডারি মারেন ডিন এলগার। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি স্বাগতিকদের। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে ৯৫ রান তুলে ফেলেন এলগার ও সোরেল এরউই।

লাঞ্চের পরই তিন অঙ্ক স্পর্শ করে দলের রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা টানা তিন টেস্টে পায় শতরানের উদ্বোধনী জুটি।

এটি অবশ্য সম্ভব হতো না, যদি লিটন দাস কাজে লাগাতে পারতেন সহজ সুযোগ। প্রথম সেশনের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কাট করার চেষ্টায় ক‍্যাচ দিয়েও বেঁচে যান এরউই।

৬০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এলগার। দারুণ ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ককে থামান খালেদ। ভাঙেন ১১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।

মূলত বাড়তি বাউন্সেই কাবু হন এলগার। বল আচমকা লাফিয়ে তার গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। এলগার ১১ চারে ১০১ বলে করেন ৬৭।

৩২ রানে বেঁচে যাওয়া এরউই ফিরে যান পরের ওভারে। একটানা তাকে স্টাম্পে বল করতে করতে মিরাজ বেশ দূরে ডেলিভারি দেন। সেটাই তাড়া করতে গিয়ে বাঁহাতি ওপেনার স্টাম্পে টেনে আনেন বল।

দ্বিতীয় সেশনে লাইন ও লেংথে বেশ ধারাবাহিক ছিলেন বোলাররা। তার সুফলও মেলে।

ব্যক্তিগত ১৮ রানে ফিরতে পারতেন কিগান পিটারসেন। তাসকিনের বল তার ব্যাটের কানা নিয়ে জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। কিন্তু জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি, রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। পরে দেখা যায়, ব্যাটের কানা ছুঁয়েছিল বল।

এর জন্য অবশ্য চড়া মাশুল দিতে হয়নি মিরাজের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। তাসকিনের বলে পয়েন্টের দিকে বল পাঠিয়েই রানের জন্য ছুটে যান বাভুমা। সাড়া দেন পিটারসেন। একটু দৌড়ে ঝাঁপিয়ে বল ঠেকিয়ে, চট করে মিরাজ দেখে নেন কোন ব্যাটসম্যান কোথায়। শরীরের ভারসাম্য না থাকলেও দুরূহ কোণ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে বিদায় করে দেন পিটারসেনকে।

রিভার্স সুইপে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলা অভিষিক্ত রায়ান রিকেলটন খেলেন চমৎকার কিছু শট। সেই শট খেলাই তার কাল হয়। ইবাদতের শর্ট বলে পুল করে মিড অনে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

বিনা উইকেটে ১১৩ থেকে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৮০। সেই চাপ অবশ্য পরে আর কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

৫৩ রানের জুটিতে দলকে টানছেন বাভুমা ও ভেরেইনা। ৬ চারে ১১৯ বলে বাভুমার রান ৫৩। ৩ চারে ভেরেইনা খেলছেন ২৭ রানে।

পুরনো বলে তাদের বেশ ভোগাচ্ছিলেন মিরাজ। নতুন বল নেওয়ার সময়ও এগিয়ে আসছিল। শেষ বেলায় কোনো নাটকীয়তা ঘটতো কি না, সেটা জানা গেল না আলোকস্বল্পতায় আগেভাগেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায়।

বাভুমা ও ভেরেইনার জুটিতে দিন শেষে হয়তো একটু এগিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই নতুন বল হাতে পাবে বাংলাদেশ। সফরকারীরা হয়তো তাকিয়ে সেদিকেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৭৬.৫ ওভারে ২৩৩/৪ (এলগার ৬৭, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৫৩*, রিকলটন ১৯, ভেরেইনা ২৭*; তাসকিন ১৮-৩-৫৮-০, ইবাদত ১৭-৬-৫৮-১, খালেদ ১২.৫-০-৪৯-১, মিরাজ ২৬-৪-৫৭-১, মুমিনুল ৩-০-৮-০)