জমজমাট লড়াইয়ের দিন শেষে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা

দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ডারবানে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2022, 07:39 AM
Updated : 31 March 2022, 03:54 PM

টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭৬.৫ ওভারে ২৩৩/৪

দিনের খেলা শেষ

অনুমিতভাবেই আর শুরু হতে পারল না খেলা। আলোকস্বল্পতায় যেখানে বন্ধ হয়েছিল খেলা, সেখানেই সমাপ্তি দিনের। প্রথম দিনে খেলা হতে পারল না ১৩.১ ওভার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম সেশনে তারা ওভারপ্রতি প্রায় চার রান করে তুলে কোনো উইকেট না হারিয়ে করে ৯৫ রান। দ্বিতীয় সেশনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

১১৩ রানে উদ্বোধনী জুটি থামানোর পর একের পর এক উইকেট তুলে নেয় তারা দ্রুত। ১৮০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন নড়বড়ে অবস্থায় প্রোটিয়ারা, প্রতিরোধ গড়েন তখন টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা।

দুজনের ৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিনটা স্বস্তিতেই শেষ করে তারা।

দিন শেষে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাই, তবে লড়াইয়ে ফেরার কৃতিত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৭৬.৫ ওভারে ২৩৩/৪ (এলগার ৬৭, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৫৩*, রিকলটন ১৯, ভেরেইনা ২৭*; তাসকিন ১৮-৩-৫৮-০, ইবাদত ১৭-৬-৫৮-১, খালেদ ১২.৫-০-৪৯-১, মিরাজ ২৬-৪-৫৭-১, মুমিনুল ৩-০-৮-০)

আলোর স্বল্পতায় বন্ধ খেলা

বাংলাদেশের অপেক্ষা যখন জুটি ভাঙার এবং দ্বিতীয় নতুন বলের, খেলাই বন্ধ হয়ে গেল তখন। স্থানীয় সময় ৫টা ২০ মিনিটে থমকে গেল খেলা। ৭৬.৫ ওভার খেলা হয়েছে তখন। মাঠ ছেড়ে গেলেন ক্রিকেটাররা।

ডারবানে বছরের এই সময়টায় সাধারণত বিকেল ৫টা বা সোয়া ৫টার পর খেলা হতে পারে খুব কম সময়ই।

দিনের শুরুতে খেলা ৩৩ মিনিট দেরিতে শুরু হয়েছিল সাইটস্ক্রিনের সমস্যায়।

জুটির পঞ্চাশ

১৮০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেনে নিচ্ছেন টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা। পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটি স্পর্শ করেছে ফিফটি।

১০৩ বলে এসেছে এই জুটির পঞ্চাশ। তাতে ভেরেইনার অবদান ২৬, বাভুমার ২৪।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুইশ

খালেদের বলে কাইল ভেরেইনার বাউন্ডারিতে ৬৫.৫ ওভারে ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান স্পর্শ করল দুইশ। প্রথম একশ এসেছিল অনায়াসেই, কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ ওভারে। দ্বিতীয় একশ হতে লাগল ৩৮.৫ ওভার, ৪ উইকেট হারিয়ে।

ইবাদতের প্রথম

দিনজুড়ে খুব ভালো বোলিং করতে পারেননি ইবাদত হোসেন চৌধুরি। শেষ সেশনের শুরুটাও খুব গোছানো হয়নি তার। তবে তার হাত ধরেই আরেকটি উইকেট পেয়ে গেল বাংলাদেশ।

অভিষেক ইনিংসে দারুণ শুরু করেছিলেন রায়ান রিকলটন। নিজের প্রতিভার জানান দেন দুর্দান্ত কয়েকটি শটে। তবে শট খেলার তাড়নাই কাল হলো তার জন্য। ইবাদতের বলটি খুব বিপজ্জনক কিছু ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল। সেটিই পুল করার চেষ্টা করেন রিকলটন। একটু বাড়তি লাফানো বল টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন মুমিনল হক।

রিকলটনের অভিষেক ইনিংস শেষ ৪১ বলে ২১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪উইকেটে ১৮০।

নতুন ব্যাটসম্যান কাইল ভেরেইনা। ২৭ রান নিয়ে তার সঙ্গী টেম্বা বাভুমা।

আরেকটি রিভিউ নষ্ট

শেষ সেশনের শুরুতেই আরেকটি রিভিউ হারাল বাংলাদেশ। আগের নিস্ফলা রিভিউয়ের মতো এবারও বোলার ইবাদত হোসেন চৌধুরি।

চা বিরতির পর প্রথম ওভারেই রায়ান রিকলটনকে পরাস্ত করেন ইবাদত। বল লাগে প্যাডে। তবে বাংলাদেশের আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ দেওয়ার পর দেখা যায়, বল পিচ করছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।

এই  নিয়ে তিন রিভিউয়ের দুটিই হারাল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দারুণ সেশনে জমজমাট লড়াই

প্রথম সেশন যতটা দক্ষিণ আফ্রিকার, দ্বিতীয় সেশন ততটাই বাংলাদেশের। টস জিতে বোলিংয়ে নামার পর উইকেটশূন্য প্রথম সেশন ও ওভারপ্রতি প্রায় চার রান করে দিয়ে সকালের সেশন ছিল চূড়ান্ত হতাশার। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শুধু রানের গতিই কমায়নি বাংলাদেশ, আদায় করে নিয়েছে তিনটি উইকেট।

প্রথম দিন চা বিরতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ১৬৫। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে রান ছিল ৯৫। দ্বিতীয় সেশনে প্রোটিয়ারা তুলেছে ২৮ ওভারে ৭০ রান, উইকেট পড়েছে ৩টি।

ডিন এলগারকে (৬৭) ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ, পরের ওভারেই সারেল এরউইয়াকে (৪১) বিদায় করেন মিরাজ। এরপর কিগান পিটারসেনকে রান আউট করা সেই অসাধারণ ফিল্ডিং।

বিরতির সময় টেম্বা বাভুমা অপরাজিত ২২ রানে, অভিষিক্ত রায়ান রিকলটন খেলছেন ১১ রানে।

প্রথম দিন দ্বিতীয় সেশনের মধ্যেই ১৮ ওভার বোলিং করা হয়ে গেছে অফ স্পিনার মিরাজের। দলের সেরা বোলারও নিঃসন্দেহে তিনিই। ৪৩ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।

মিরাজের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ের শিকার পিটারসেন

মেহেদী হাসান মিরাজ আরও একটি উইকেট এনে দিলেন বাংলাদেশকে। তবে এবার বোলিংয়ে নন, চোখধাঁধানো ফিল্ডিংয়ে!

তাসকিন আহমেদের বলটিতে ব্যাটের মুখ উন্মুক্ত করে হালকা ড্রাইভ করেই রান নিতে ছোটেন টেম্বা বাভুমা। পয়েন্ট থেকে মিরাজ একটু দৌড়ে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে বল থামান। এরপর চোখের পলকে উঠে, বসে থাকা অবস্থায়ই থ্রো করে দেন গুলির বেগে। ব্যালান্স ঠিক ছিল না শরীরের, মিরাজ তবু সরাসরি থ্রোয়ে বল লাগান স্টাম্পে। পিটারসেন তখনও ক্রিজে পৌঁছতে পারেননি।

৩৬ বলে ১৯ রানে শেষ পিটারসেনের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ১৪৬।

নতুন ব্যাটসম্যান অভিষিক্ত রায়ান রিকলটন।

আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া

আরেকটি উইকেট নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও পারল না বাংলাদেশ। উইকেটের পেছনে ধরা পড়েও বেঁচে গেলেন কিগান পিটারসেন।

ইনিংসের সেটি ৪২তম ওভার, তাসকিনের নতুন স্পেলের প্রথম ওভার। স্টাম্পের বাইরের বলে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করার চেষ্টায় ঠিকমতো খেলতেপারে ননি পিটারসেন। বাংলাদেশ জোরাল আবেদন করে, কিন্তু আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে

আল্ট্রা এজ-এ দেখা যায়, বল হালকা ছুঁয়ে গিয়েছিল ব্যাট।

পিটারসেন তখন খেলছিলেন ১৮ রানে।

বাংলাদেশের লড়াই

প্রথম সেশনের হতাশা পেছনে ফেলে দ্বিতীয় সেশনে দারুণ লড়াই করছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারকে বিদায় করতে পেরেছে তারা। রানের গতিও কমাতে পেরেছে কিছুটা।

দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভার খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৭ রান তুলতে পেরেছে ২ উইকেট হারিয়ে।

৩৯ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২ উইকেটে ১৩২। কিগান পিটারসেন খেলছেন ১৩ রানে, টেম্বা বাভুমা ৬ রানে।

এবার উইকেট মিরাজের

এক উইকেটের হাত ধরে ধরা দিল আরেক উইকেট। থিতু হয়ে যাওয়া এক ওপেনারের বিদায়ের পর ফিরে গেলেন আরেকজনও। এলগারের বিদায়ের পর বাজে শটে আউট হলেন সারেল এরউইয়া।

শুরু থেকেই লড়াই করে উইকেট আঁকড়ে রাখা এরউইয়া হুট করেই মনোযোগ হারিয়ে খেললেন আলগা শট। মেহেদী হাসান মিরাজ বল ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বাতাসে। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা বল টার্ন করে আরেকটু বাইরে যাচ্ছিল। বাঁহাতি এরউইয়া জায়গায় দাঁড়িয়েই চেষ্টা করেন অনেক দূরের বল ড্রাইভ করতে। ব্যাটে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে।

১০২ বলে ৪১ রান করে আউট এরউইয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২ উইকেটে ১১৭।

উইকেটে এখন দুজনই নতুন ব্যাটসম্যান। কিগান পিটারসেনের সঙ্গী টেম্বা বাভুমা।

অবশেষে উইকেট

অনেক অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারল বাংলাদেশ। সৈয়দ খালেদ আহমেদ উইকেট নিলেন নিজের দ্বিতীয় স্পেলের দ্বিতীয় বলে।

ওভার দা উইকেটে করা খালেদের ডেলিভারি অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বেরিয়ে যায় আরেকটু। তবে এলগারের মূল বিপদটা হয় বাউন্সে। বলটি আচমকাই বাড়তি লাফিয়ে ওঠে। এলগারের গ্লাভস ছুঁয়ে বল যায় পেছনে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দুই হাতে বল গ্লাভসবন্দি করেন লিটন।

১১ চারে ১০১ বলে ৬৭ করে আউট দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক। দলের রান ১ উইকেটে ১১৩।

নতুন ব্যাটসম্যান কিগার পিটারসেন।

শতরানের জুটি

লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ডিন এলগারের দুর্দান্ত অন ড্রাইভের বাউন্ডারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান স্পর্শ করল একশ। একই সঙ্গে এলো জুটির শতরানও।

১৬৪ বলে এলো জুটির সেঞ্চুরি। তাতে এলগারের অবদান ৬৪, এরউইয়ার ৩৩।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সবশেষ টেস্টে ২৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন এলগার ও এইডেন মারক্রাম। এর আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে এলগার ও মারক্রাম গড়েছিলেন ১৯৬ রানের জুটি।

রিভিউ হারাল বাংলাদেশ

প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনের শুরুটাও হলো ফুল টস দিয়ে। তবে এবার ডিন এলগার ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না ইবাদত হোসেনের বলটি। বল লাগল প্যাডে। জোরাল আবেদনে সাড়া দিলেন না আম্পায়ার। উইকেটের আশায় মরিয়া বাংলাদেশ নিল রিভিউ। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা গেল, বল ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।

ধরা দিল না প্রত্যাশিত উইকেট, উল্টো হারাতে হলো একটি রিভিউ।

প্রথম সেশনে দুর্দান্ত দক্ষিণ আফ্রিকা

টস জিতে আগে বোলিংয়ে নেমে উইকেটের ফায়দা নেওয়ার আশা ভেস্তে গেল অনেকটাই। পেসারদের এলোমেলো বোলিংয়ে ডারবান টেস্টে বাংলাদেশের শুরুটা হলো বাজে। ঠিক উল্টো প্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে সিরিজ হেরে চাপে থাকা দল টেস্ট সিরিজের শুরুটা করল দুর্দান্ত।

ডিন এলগার ও সারেল এরউইয়া উদ্বোধনী জুটিতে উপহার দিলেন দারুণ ব্যাটিং। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯৫।

ঘাসের ছোঁয়া থাকা বাংলাদেশের বোলিং হলো একদমই ধারহীন। উইকেটে মুভমেন্ট বা সহায়তা কতটা আছে, সেটা বোঝার মতো বোলিংই করতে পারেননি তিন পেসার তাসকিন-ইবাদত-খালেদ।

তিন জনেরই লেংথ ছিল একটু খাটো। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ ও ধারাবাহিকতাও ছিল না যথেষ্ট। আলগা বল দিয়েছেন তারা নিয়মিতই। সেসবের ফায়দা নিয়েছেন এলগার ও এরউইয়া। বিশেষ করে এলগার খেলছেন দারুণ।

১০ চারে ৭৬ বলে ৬০ রান নিয়ে খেলছেন এলগার, সমান বলে ৩২ রানে খেলছেন এরউইয়া।

লাঞ্চের আগের ওভারে একটি বড় সুযোড় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু মিরাজের বলে এরউইয়ার ক্যাচ ছাড়েন কিপার লিটন।

প্রথম সেশনের ২৫ ওভারে বাংলাদেশ মেডেন নিয়েছে স্রেফ দুটি। ইবাদত শুরুতে একটু নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও পরে প্রচুর বাউন্ডারি বল দিয়ে রান গুনেছেন ওভারপ্রতি প্রায় ছয় করে।

সুযোগ হাতছাড়া

লাঞ্চের ঠিক আগে জুটি ভাঙার বড় একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সারেল এরউইয়ার ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার লিটন দাস।

মিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করার চেষ্টা করেন বাঁহাতি এরউইয়া। একটু বাড়তি লাফিয়ে ব্যাটের কানায় ছুঁয়ে বল যায় পেছনে। স্টাম্প ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা লিটনের গ্লাভসে লেগে বল পড়ে মাটিতে।

৩২ রানে জীবন পান এরউইয়া।

এলগারের ফিফটি

এমনিতে ধীরস্থির ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিতি ডিন এলগারের। সময় নিয়ে ইনিংস গড়তে পছন্দ করেন। বাংলাদেশের পেসারদের আলগা বোলিংয়ের ফায়দা নিয়ে এবার তিনি ফিফটি করে ফেললেন স্রেফ ৬০ বলেই। ইনিংসে চার ৯টি।

এলগারের ৭৫ টেস্টের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি। দ্রুততম ফিফটিও বাংলাদেশের বিপক্ষেই, ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ৬০ বলে।

আক্রমণে স্পিন

পেসারদের ব্যর্থতায় প্রথম দিন লাঞ্চের আগেই স্পিনের দিকে তাকাতে হলো বাংলাদেশকে। অধিনায়ক মুমিনুল হক ১৯তম ওভারে বল তুলে দিলেন একাদশের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে।

শুরুর জুটির ফিফটি

ইবাদত হোসেনের বলে ডিন এলগারের টানা দুটি বাউন্ডারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান পেরিয়ে গেল ফিফটি। একই সঙ্গে পঞ্চাশ ছাড়াল উদ্বোধনী জুটিও।

টেস্টের প্রথম সকালে শুরুর জুটির ফিফটি এলো স্রেফ দ্বাদশ ওভারেই! জুটির ৫৩ রানে এলগারের রানই ৪০, এরউইয়ার ১২।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এই নিয়ে ১৫ টেস্ট ইনিংসে ১০ বারই ফিফটি পেয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি।

নির্বিঘ্নে শুরু প্রোটিয়াদের

প্রথম বলে বাউন্ডারি, প্রথম দুই ওভারে ১২ রান। তাসকিন আহমেদের শুরুটা হলো একটু অগোছালো। পরে একটু গুছিয়ে নিলেও বিপজ্জনক হতে পারেননি। ইবাদত হোসেন চৌধুরির লাইন-লেংথ বেশ গোছানো শুরু থেকেই। তবে বাংলাদেশের দুই পেসারকে ভালোভাবেই সামলে নিলেন ডিন এলগার ও সারেল এরউইয়া।

টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল বলেছিলেন শুরুর আর্দ্রতা কাজে লাগাতে চাওয়ার কথা। আপাতত পূরণ হয়নি সেই লক্ষ্য। ইবাদত ও তাসকিন কয়েকবার বিপাকে ফেলেছেন এলগার ও এরউইয়াকে, তবে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি কেউই। বরং একটু খাটো লেংথে করেছেন বল। আরেকটু ফুল লেংথে বল না করার দায়টা তাদের দেওয়া যায়।

নবম ওভারে আক্রমণে এসেছেন তৃতীয় পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তিনিও প্রথম ওভারে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারেননি।

১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ৪১। টেস্টের প্রথম সকালে বিশ্বের যে কোনো কন্ডিশন ও উইকেটে ভালো শুরু। ৬ চারে ৩৭ বলে ৩২ রানে খেলছেন এলগার, ২৩ বলে ৮ রানে এরউইয়া।

৪ ওভারে তাসকিন গুনেছেন ১৭ রান, মেডেন নেই। ইবাদতন ৫ ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান।

অবশেষে খেলা শুরু

সাইটস্ক্রিন সমস্যার আপাতত সমাধান। খেলা শুরু হলো ৩৩ মিনিট দেরিতে।

বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ শুরু করলেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলটিই করলেন ফুলটস, দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগার তা অনয়াসেই পাঠালেন বাউন্ডারিতে।

অপেক্ষা চলছে

খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়ের পর পেরিয়ে গেছে ৩০ মিনিট। এখনও হয়নি একটি বলও। সাইটস্ক্রিন ঠিকঠাক করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠ ছেড়ে গেছেন।

ম্যাচ শুরু হতে দেরি

স্থানীয় সময় ২টায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা। দুই দলের ক্রিকেটাররা ও আম্পায়ার মাঠে, কিন্তু ম্যাচ শুরু হলো না সময়মতো। সাইটস্ক্রিনই যে প্রস্তুত নয়!

মাঠকর্মীরা কাজ করছেন সাইটস্ক্রিন ঠিক করতে।

দুই স্পিনার ও দুই অভিষিক্তর দক্ষিণ আফ্রিকা

ডারবানের উইকেট অনেক সময়ই একটু মন্থর হয়ে পড়ে খেলা গড়ানোর সঙ্গে। এবার যদিও উইকেটে ঘাস আছে, দক্ষিণ আফ্রিকা তবু একাদশে রেখেছে দুই স্পিনার। দীর্ঘদিন ধরেই দলের মূল স্পিনার হয়ে থাকা কেশভ মহারাজের সঙ্গে আছেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মার।

২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৫টি টেস্ট খেলেন হার্মার। এরপর কলপ্যাক ক্রিকেটার হিসেবে পাড়ি জমান ইংলিশ ক্রিকেটে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার তিনি ফিরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। টেস্ট খেলতে নামছেন তিনি প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর। ১৭২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭৪৩ উইকেটের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন দুজন। মিডল অর্ডারে জায়গা পেয়েছেন রায়ান রিকলটন। ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ৩৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১০ সেঞ্চুরিতে ২ হাজার ৮৫৯ রান করেছেন ৫১.০৫ গড়ে। শুধু টেস্ট নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথম ম্যাচ এটি তার।

প্রথম টেস্ট খেলতে নামছেন লিজাড উইলিয়ামসও। ২৮ বছর বয়সী পেসার আগে ১টি ওয়ানডে ও ৬টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার উইকেটে ৬৫ ম্যাচে ২০৬টি।

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: ডিন এলগার (অধিনায়ক), সারেল এরউইয়া, কিগান পিটারসেন, টেম্বা বাভুমা, রায়ান রিকলটন, কাইল ভেরেইনা, ভিয়ান মুল্ডার, কেশভ মহারাজ, সাইমন হার্মার, লিজাড উইলিয়ামস, ডুয়ানে অলিভিয়ের।

তামিমের সঙ্গে নেই শরিফুলও

পেটের পীড়ায় তামিম ইকবালের না থাকার কথা টসের সময়ই জানান অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরে একাদশ দেখে জানা যায়, খেলছেন না শরিফুল ইসলামও।

বাংলাদেশের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম ভিডিও বার্তায় জানান, ছোটখাটো কিছু চোট সমস্যা আছে শরিফুলের। এছাড়া, অনুশীলন শেষে দুর্বল অনুভব করছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না দল।

তামিম না থাকায় আরেকটি সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন সাদমান ইসলাম। শরিফুল না খেলায় সেখানে সুযোগ মিলছে সৈয়দ খালেদ আহমেদের।

বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

বাংলাদেশের বড় ধাক্কা

ম্যাচ শুরুর আগেই বাংলাদেশের সম্ভাবনায় বড় চোট। দল পাচ্ছে না অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালকে। টসের সময় অধিনায়ক মুমিনুল হক জানালেন, পেটের পীড়ায় ভুগছেন তামিম।

টসে হাসি মুমিনুলের

টস ভাগ্যকে পাশে পেলেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন, আগে বোলিং করবেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগার বললেন, টস জিতলে আগে ব্যাটিংই করতেন তারা।

উইকেটে সবুজ ঘাসের ছোঁয়া আছে বেশ। মুমিনুল বললেন, আর্দ্রতাও আছে কিছুটা। এজন্যই টস জিতে বোলিং নিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

খর্ব শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা

আইপিএল খেলতে চলে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা পাচ্ছে না প্রথম পছন্দের পেস আক্রমণের কাউকেই। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি ও মার্কো ইয়ানসেন নেই, চোটের কারণে নেই গতি তারকা আনরিক নরকিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের নেতা থাকবেন তাই ডুয়ানে অলিভিয়ের। ব্যাটিংয়ে তারা পাচ্ছে না এইডেন মারক্রাম ও নির্ভরযোগ্য রাসি ফন ডার ডাসেনকে।

বাংলাদেশ পাচ্ছে না সাকিব আল হাসানকে। পারিবারিক কারণে ওয়ানডে সিরিজ শেষেই দেশে ফিরেছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।

ব্যর্থতার জাল ছেঁড়ার সুযোগ

৬ টেস্টের ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার, আরেকটিতে হার ৩৩৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের তিন সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স এতটাই নাজুক। তবে এবার সেই ব্যর্থতায় অধ্যায় পেছনে ফেলে নিজেদর সাফল্যে রাঙানোর সুযোগ।

এই সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কখনও ওয়ানডে ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এবার শুধু ম্যাচ নয়, ধরা দিয়েছে সিরিজ জয়। রঙিন পোশাকের সেই আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই সাদা পোশাকে মাঠে নামছে মুমিনুল হকের দল। তাদের প্রেরণা হয়ে আছে গত জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডে দারুণ এক জয়ের স্মৃতি। নিউ জিল্যান্ডের আগের সব সফরে কখনোই কিউইদের কোনো সংস্করণে হারাতে না পারলেও এবার খর্ব শক্তির দল নিয়েই তাদের বিপক্ষে অসাধারণ জয় আসে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। এবার তেমন কিছুর হাতছানি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ডারবানে।