ওয়ানডের পর এবার টেস্টে ইতিহাস গড়ার হাতছানি

৬ টেস্ট, ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার। বাকি একটিতে কোনোরকমে ইনিংস হার এড়ানো গেছে, কিন্তু জুটেছে ৩৩৩ রানে হার। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের তিনটি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের খতিয়ান এমনই বিব্রতকর। তবু এবার শুধু টেস্ট নয়, সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ এবং সেটিকে একদমই অবাস্তব মনে হচ্ছে না!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 03:50 PM
Updated : 30 March 2022, 04:40 PM

সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার অভিযান শুরু বৃহস্পতিবার। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি বাংলাদেশ। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।

টেস্ট ও সিরিজ জয় সম্ভব মনে হওয়ার কারণ বেশ কিছু আছে। সবচেয়ে বড় কারণ বলা যায় দুটি। প্রথমত, ওয়ানডে সিরিজ জয়ের তরতাজা আত্মবিশ্বাস। দ্বিতীয়ত, দুই দলের অভিজ্ঞতায় বেশ ফারাক। বাংলাদেশের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকাই বলা যায় নবীন এক দল!

এবারের আগে ওয়ানডেতেও কখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এই সফরে শুধু ম্যাচ নয়, ধরা দিয়েছে সিরিজ জয়। এমন ঐতিহাসিক জয়ের আত্মবিশ্বাস টেস্ট সিরিজেও বয়ে না আসার কারণ নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ওয়ানডে দল থেকে আইপিএলে চলে গেছেন কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, মার্কো ইয়ানসেন, রাসি ফন ডার ডাসেন, এইডেন মারক্রামরা। টেস্ট সিরিজে প্রথম পছন্দের পেস আক্রমণের একজনকেও পাচ্ছে না প্রোটিয়ারা, থাকছে না ব্যাটিংয়ের বড় দুই ভরসা। কুইন্টন ডি কক তো টেস্টকে বিদায়ই জানিয়ে দিয়েছেন কদিন আগে।

দক্ষিণ আফ্রিকার গোটা দলের অভিজ্ঞতা ২০৬ টেস্টের। এর মধ্যে অধিনায়ক ডিন এলগার, টেম্বা বাভুমা ও কেশভ মহারাজ মিলেই খেলেছেন ১৬৩ টেস্ট। বাকিদের অনভিজ্ঞতা তাই খুবই স্পষ্ট। বাংলাদেশের স্কোয়াডের সম্মিলিত টেস্ট সেখানে ৩৬২টি।

নিজেদের এমন উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস, এমন কমজোরি দক্ষিণ আফ্রিকা দল, বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কী হতে পারে!

প্রেরণার জন্য শুধু ওয়ানডে দল নয়, নিজেদের নিকট অতীতেও তাকাতে পারে বাংলাদেশের এই টেস্ট দল। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়া গত জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডে অসাধারণ এক জয় পেয়েছে দল। এবার সাকিব না থাকলেও আছেন তামিম। দক্ষিণ আফ্রিকায় জয় তাহলে কেন নয়?

সেই বিশ্বাসের দোলার কথা বললেন মুমিনুল হকও। তবে সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক তুলে ধরলেন প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজনীয়তাও।

“আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই আছে। আপনি যখন বিদেশের কন্ডিশনে দুটি সিরিজ খেলতে আসবেন, একটি সিরিজ জিতে গেলে আত্মবিশ্বাস সবার তুঙ্গে থাকে।”

“আমি তো সবসময় বলি, যখন খেলি তখন জেতার জন্যই খেলি। অবশ্যই ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। তার আগে কিছু কাজ থাকে, যেগুলো করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা। লক্ষ্য অবশ্যই ম্যাচ জেতা, ভালো ক্রিকেট খেলা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়া ধরে রাখা। পাঁচ দিন আমরা যদি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, ফল আমাদের পক্ষে আসবে।”

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকার সুবিধাও মানছেন ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলার অপেক্ষায় থাকা মুমিনুল। তবে স্বাগতিক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার এগিয়ে থাকার কথাও তিনি মনে করিয়ে দিলেন।

“অভিজ্ঞতার দিক থেকে হয়তো আমরা বাড়তি সুবিধা পেতে পারি। তবে ওদেরও কিন্তু সুবিধা থাকবে। কারণ ঘরের মাঠের সুবিধা ওরা পাবে। সুবিধা ওরাও পাবে, আমরাও পাব। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পাঁচদিন ১৫টা সেশন যারা ভালো ক্রিকেট খেলবে, চাপ ধরে রাখতে পারবে, ভালো জায়গায় বল করতে পারবে, ব্যাটিং ভালো করতে পারবে, তারাই ম্যাচটা জিততে পারবে। এখানে চাপের ব্যাপারগুলো ধরে রাখা জরুরি, কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন, কীভাবে ব্যাটিং-বোলিং করছেন।”

স্বাগতিক হিসেবে সেই সমীকরণেও দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শঙ্কা ও বাংলাদেশের আশার জায়গা আছে। খেলা যে মাঠে, অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী সেই কিংসমিডে গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স মোটেও ভালো নয় প্রোটিয়াদের। এখানে সবশেষ চার টেস্টের তিনটিতেই সফরকারীদের কাছে হেরেছে তারা, বাকিটি হয়েছে ড্র। এই মাঠে সবশেষ ৯ টেস্টে তাদের জয় স্রেফ ১টি। উপমহাদেশের দল শ্রীলঙ্কা এই সময়টায় এখান থেকে জিতে ফিরেছে ২ বার, ভারত ১ বার।

বাংলাদেশের বাড়তি সুবিধা আছে আরেকটি জায়গায়ও। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের কাছ থেকে কন্ডিশন আর প্রতিপক্ষ নিয়ে অনেক কার্যকর তথ্যই পাওয়ার কথা মুমিনুলদের। অধিনায়ক সেটা সরাসরি বলেও দিলেন।

“ওয়ানডে ম্যাচগুলি দেখেছেন, পুরো মনে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলই খেলছে…২-৩ জন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার (কোচিং স্টাফে)। কোনো দেশের বিপক্ষে খেললে ওই দেশের কোচিং স্টাফ যখন থাকবে, এটা অবশ্যই আপনার জন্য ইতিবাচক। কন্ডিশন কেমন, কীভাবে ব্যাটিং-বোলিং করতে হয়, এগুলোর ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়। এটা অবশ্যই বাড়তি সাপোর্ট দেবে সবাইকে।”

সাকিব না থাকলে একাদশের ক্ষেত্রে যে ভাবনায় থাকতে হয়, তা আছে এবারও-বাড়তি ব্যাটসম্যান নাকি বোলার খেলানো হবে? দলের আগের ধারা ও কন্ডিশনকে বিবেচনায় নিলে, বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোর ঝোঁকই দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সাত নম্বরে ইয়াসির আলি চৌধুরি পেতে পারেন সুযোগ।

তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের খেলা একরকম নিশ্চিত। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস। সাতে ইয়াসির খেললে আটে মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর তিন পেসার হয়তো তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন চৌধুরি।

ডারবানে অবশ্য একাদশের ক্ষেত্রে তাপমাত্রাও ভুমিকা রাখে কখনও কখনও। এবারও সেখানে বেশ গরম, সংবাদ সম্মেলনে জানালেন মুমিনুল। ম্যাচের সকালের উইকেট ও কন্ডিশনের কারণে একটু এদিক-সেদিক হতেও পারে একাদশ।

শেষ পর্যন্ত একাদশ যেমনই হোক, মূল বাস্তবতা বদলাবে না। বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ এবার। নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জয়ের প্রেরণায়, এখানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুবাস নিয়ে এখন নতুন ইতিহাসের পানে ছোটার পালা মুমিনুলদের।