বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে বুধবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জমজমাট ম্যাচে স্রেফ ১ রানে জিতেছে প্রাইম ব্যাংক। ২৭৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে ব্রাদার্সকে তারা দুই বল আগে গুটিয়ে দিয়েছে ২৭২ রানে।
প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক রেজাউর দুর্দান্ত বোলিংয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো নেন পাঁচ উইকেট। এই পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন তিনি।
সোহাগ গাজীর ঝড়ো ফিফটিতে একটা সময় ম্যাচে চালকের আসনে বসলেও রেজাউরের নৈপুণ্যের সামনে পেরে ওঠেনি ব্রাদার্স।
শেষে উচ্ছ্বাসে ভাসলেও টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি প্রাইম ব্যাংকের। বেশিদূর যেতে পারেননি তাদের আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এনামুল হক। ইনিংস বড় করতে পারেননি মেহেদি হাসানও। মোহাম্মদ মিঠুনকে বোল্ড করে দেন শ্রীলঙ্কার চতুরাঙ্গা ডি সিলভা।
এক প্রান্তে দ্রুত রান তুলে ৪১ বলে ফিফটি করেন শাহাদাত হোসেন দিপু। ৯ চারে ৬৪ রান করা তরুণ ব্যাটসম্যানের প্রতিরোধ ভাঙেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১১৪ রানে হারায় তারা ৪ উইকেট।
এরপর দলকে টানেন নাসির হোসেন ও শামসুর রহমান। দুইজনে গড়েন শতরানের জুটি। ৬২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন নাসির, শামসুরের ফিফটি আসে ৪৯ বলে।
তিনটি করে ছক্কা-চারে ৬৬ রান করা নাসিরকে বোল্ড করে ১১৭ রানের জুটি ভাঙেন আবু হায়দার। এক ছক্কা ও ৬ চারে ৬০ রান করে ফেরেন শামসুর।
শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের কিছু রানে ২৭০ পার করে প্রাইম ব্যাংক।
ব্রাদার্সের আবু হায়দার দারুণ বোলিংয়ে ৫১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই মেহেদির বলে বোল্ড হয়ে যান সাদিকুর রহমান। যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রকিবুল হাসানকে সুইপ করে ক্যাচ তুলে দেন আশরাফুল। আক্রমণে এসেই মাইশুকুর রহমানকে ফিরিয়ে দেন রেজাউর।
এই পেসারের পরের ওভারে শিকার অনেকটা সময় উইকেটে কাটানো ইমতিয়াজ হোসেন। এক ছক্কা ৪ চারে ৪৩ রান করা এই ওপেনার ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। চতুরাঙ্গার স্টাম্প এলোমেলো করে দেন রেজাউর।
নিজের প্রথম তিন ওভারেই উইকেট নেওয়া রেজাউরের প্রথম স্পেল শেষে বোলিং বিশ্লেষণ, ৫-০-১৩-৩।
ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন সোহাগ গাজী। অলক কাপালীকে দুই ছক্কার পর রুবেলকে মারেন দুটি ছক্কা ও এক চার। নাসিরকে পরপর দুই ওভারে ছক্কায় উড়িয়ে ২০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন সোহাগ। পরের বলেই উড়িয়ে মেরে বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ৬ ছক্কা ও ২ চারে ৫৪ রানের ইনিংস।
তার সঙ্গে ৬৫ রানের জুটিতে আমিনুল করেন স্রেফ ১০ রান। মূলত এই জুটিতেই ম্যাচ হেলে পড়ে ব্রাদার্সের দিকে।
সোহাগের বিদায়ের পর শেষ ৩০ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৬ রান, হাতে তিন উইকেট। রুবেলের এক ওভারে ১৮ রান নিয়ে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় নেন আমিনুল ও আবু হায়দার।
এরপরই রেজাউরের ওই জোড়া আঘাত। ৬২ রান করা আমিনুলকে ফেরানোর পর রায়হান উদ্দিনকে আউট করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
তারপরও সম্ভবনা ছিল ব্রাদার্সের। শেষ ৬ বলে লাগত কেবল ৩ রান, যদিও হাতে ছিল একটি মাত্র উইকেট। কাপালীর লেগ স্পিনে সুজন এলবিডব্লিউ হলে হতাশায় শেষ হয় দলটির লড়াই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (এনামুল ১৫, শাহাদাত ৬৪, মেহেদি ২২, মিঠুন ১, নাসির ৬৬, শামসুর ৬০, কাপালী ১৯, নাহিদুল ১০, রেজাউর ০, রুবেল ১*, রকিবুল ২*; আবু হায়দার ১০-১-৫১-৪, সুজন ৭-০-৪৯-২, চতুরাঙ্গা ১০-০-৩৮-১, সোহাগ ৪-০-২৯-০, রায়হান ১০-০-৩৯-১, আশরাফুল ৪-০-২৩-১, আমিনুল ৩-০-২৩-০, মাইশুকুর ২-০-১৫-০)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৯.৪ ওভারে ২৭২ (ইমতিয়াজ ৪৩, সাদিকুর ১, আশরাফুল ১৭, মাইশুকুর ৪, আমিনুল ৬২, চতুরাঙ্গা ১১, ধীমান ৫১, সোহাগ ৫৪, আবু হায়দার ২৪*, রায়হান ০, সুজন ১; রুবেল ৯-০-৭৫-১, মেহেদি ১০-১-২৪-১, রকিবুল ১০-১-৫৩-১, রেজাউর ১০-০-৪৩-৫, নাহিদুল ৪-১-২৩-০, কাপালী ৪.৪-০-৩১-১, নাসির ২-০-২২-১)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রেজাউর রহমান