আরও উন্নতির তাগিদ অনুভব করছেন তাসকিন

অনেক ঘাম ঝরিয়ে তাসকিন আহমেদ হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগের মূল অস্ত্র। তিন সংস্করণের দলেই এখন তিনি নিয়মিত। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না এই পেসার। উন্নতির যে শেষ নেই, বেশ ভালো করেই জানা তার। সেই পথে আরও এগিয়ে যাওয়ার তাড়না অনুভব করছেন তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2022, 03:38 PM
Updated : 29 March 2022, 03:38 PM

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে গতির ঝড় তুলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তাসকিন। অভিষেক ওয়ানডেতেই গড়েন ৫ উইকেটে নেওয়ার কীর্তি। কিন্তু মাঠের ভেতরে ও বাইরের বিশৃঙ্খল জীবনের কারণে অল্প সময়েই থমকে যেতে বসেছিল ক‍্যারিয়ার।

২০১৯ সালের বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার পর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খান তাসকিন। এরপর নিজেকে নতুন করে তৈরি করার যেন পণ করেন তিনি। রোদে পুড়ে, ঘামে সিক্ত হয়ে, ফিটনেস ট্রেনিং করে, মনোবিদের সঙ্গে সেশন করে প্রস্তুত হন জাতীয় দলের আঙ্গিনায় আবার পা ফেলার জন্য।

গত বছরের জানুয়ারিতে দলে ফেরার পর থেকে তাসকিনের বোলিংয়ে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। তিন সংস্করণ মিলিয়ে দলের সেরা পেসার এখন তিনিই। তার সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জেতা ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। সিরিজ জুড়েই আগুন ঝরা বোলিং করে হন সেরা খেলোয়াড়ও।

দারুণ সব সাফল্যের পর অনেক পেয়ে যাওয়ার তৃপ্তি আসতেই পারে যে কারো মনে। তবে তাসকিন ভাবছেন কেবল, সামনের পথচলার কথা।

এখন সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টের লড়াই। দলের সঙ্গে আছেন তিনি। অনুশীলনে ঝরাচ্ছেন ঘাম, প্রস্তুতি নিচ্ছেন আসছে চ্যালেঞ্জের জন্য। সেখান থেকেই বিসিবির পাঠানো ভিডিওতে মঙ্গলবার ২৬ বছর বয়সী এই পেসার বললেন, আরও উন্নতির পথে হাঁটতে চাওয়ার কথা।

“আসলে গত দুই বছর ধরে আমরা সব ফাস্ট বোলাররাই কষ্ট করছি এবং আমাদের উন্নতি হচ্ছে। আরও উন্নতি করতে হবে। দল হিসেবে আমরা কাজ করছি, আমাদের কোচিং স্টাফরাও আমাদের সেভাবে সাহায্য করছেন। এভাবে যদি এগোতে থাকি এবং আল্লাহ যদি আমাদের সুস্থ রাখে, আশা করি ভালো কিছু করতে পারব।”

শিখেছেন অনেক কিছু, শেখার বাকি অনেক; জানেন তাসকিন। বললেন, যেকোনো কন্ডিশনে বোলিং করার মতো পেসার হতে চান তিনি। 

“বড় বোলার হতে হলে কোন কন্ডিশনে কীভাবে বোলিং করতে হয়, সেটা আমাকে জানতে হবে। আমি আগের থেকে একটু শিখেছি, তবে আরও অনেক কিছু জানতে হবে, শিখতে হবে, আরও স্কিলফুল হতে হবে। আসলে পিচ বা কন্ডিশন কখনই আমাদের কন্ট্রোলে নেই, ওটা নিয়ে অজুহাত দেওয়া ঠিক হবে না। আমার সামর্থ্য থাকতে হবে কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ভালো কিছু করার। আমি সে পথেই আছি। ভালো কিছু হবে আশা করছি।”

স্বপ্নের সীমানা এখন অনেক বিস্তৃত তাসকিনের। সীমিত ওভারের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্বমানের বোলার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

“টেস্ট ক্রিকেট আসলে সব ফরম্যাটের মধ্যে সব থেকে চ্যালেঞ্জিং। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে পারলে নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগে, কারণ সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট হচ্ছে এটা। সব ফরম্যাটে নিয়মিত খেলা আমার স্বপ্ন। তবে টেস্ট ক্রিকেট অনেক চ্যালেঞ্জিং, আমি চাই বিশ্ব মানের টেস্ট বোলার হতে। সবাই দোয়া করবেন, আমরা সবাই যেন সুস্থ থাকি এবং ভালো করি।”

দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে এর আগে কোনো সংস্করণেই ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। এবার প্রথম জয়ের খরা কাটিয়ে ধরা দিয়েছে সিরিজ জয়ও। এর আগে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই টেস্টে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।

স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর দল। তাসকিনও বললেন তাই। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবার টেস্ট জয়ের অপূর্ণতাকেও পূর্ণতা দিতে চান তারা।

“অবশ্যই আমাদের সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে। ম্যাচ জিততে পারি, এই আত্মবিশ্বাসটা অন্তত সবার আছে। সবাই জেতার জন্যই খেলব। ফলাফল যেকোনো কিছু হতে পারে, কিন্তু আমাদের তাড়না ও ইচ্চা হচ্ছে ম্যাচ জেতা। আমরা সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জিততেই চাইব।”

আগামী বৃহস্পতিবার ডারবানে শুরু হবে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ।