রুটকে নেতৃত্বে চান না আথারটন-নাসের-ভন

টেস্ট দলের টানা ব্যর্থতা আর মেনে নিতে পারছেন না ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়করা। জো রুটের নেতৃত্ব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন মাইকেল আথারটন, নাসের হুসেইন ও মাইকেল ভন। অধিনায়কত্ব থেকে রুটকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 03:48 PM
Updated : 28 March 2022, 06:00 PM

২০১৭ সাল থেকে টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রুট। লাল বলের ক্রিকেটে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৬৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড তার। অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ জয় ও পরাজয়ের তালিকায়ও তিনি সবার ওপরে।

এখন পর্যন্ত রুটের নেতৃত্বে ২৭ টেস্ট জিতেছে ইংল্যান্ড, হেরেছে ২৬টিতে। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট হারার দিকে তার ওপরে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (২৯) ও নিউ জিল্যান্ডের স্টিভেন ফ্লেমিং (২৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা হেরেছেন রুটের সমান ম্যাচ।

লম্বা সময় ধরেই রুটের নেতৃত্বে সময়টা ভালো যাচ্ছে না ইংল্যান্ডের। গত পাঁচ টেস্ট সিরিজেই তারা হেরেছে। সবশেষ ১৭ টেস্টের মধ্যে জিততে পেরেছে কেবল একটিতে। অ্যাশেজে ৪-০ তে হারার পর সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হেরেছে তারা।

পঞ্চাশ টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম অধিনায়ক মাইকেল আথারটন।

দলের ব্যর্থতার দায়ে স্বাভাবিকভাবেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে রুটকে। তবে তিনি এখনই দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ। দলকে নিয়ে সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর আশার বানী শোনাচ্ছেন তিনি।

রুটের সেসব প্রত্যাশার কথায় মন গলছে না আথারটনের। অ্যাশেজ সিরিজে ভরাডুবির পরই রুটকে দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলেছিলেন পঞ্চাশ টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম অধিনায়ক। দা টাইমসে নিজের কলামে সেই কথা লিখলেন তিনি আরও একবার।

“রুটের অধিনায়কত্ব অগ্রহণযোগ্য এবং সে নিশ্চিতভাবে এটা ভালো করেই জানে। তার দল পাঁচটি সিরিজ জয় ছাড়া পার করেছে এবং গত ১৭ টেস্টের মধ্যে কেবল একটি জিততে পেরেছে। ভালো খেলোয়াড়ে পূর্ণ একটি দলের জন্য যা জঘন্য পথচলা।”

“অস্ট্রেলিয়ায় উপস্থিত ছিলেন এমন যে কারো কাছে যেমন স্পষ্ট, যারা সেখানে ছিলেন না তাদের কাছেও এটা পরিষ্কার যে, অধিনায়কত্বের পথচলায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে রুট। একটি পরিবর্তন সব সমস্যার সমাধান দেবে না- এটা বাজে একটা দল। এর সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে অবহেলার মূল্য দিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। কিন্তু এমন একটা সময় আসে যখন একজন অধিনায়কের নতুন কিছু বলার থাকে না, খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার কোনো নতুন পদ্ধতি থাকে না। তখন ভিন্ন একজন ও ভিন্ন ধরনের প্রয়োজন পড়ে।”

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবশেষ অ্যাশেজে শোচনীয়ভাবে হারের পর ইংল্যান্ড দলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। চাকরি হারিয়েছেন প্রধান কোচ ক্রিস সিলভারউডসহ অনেকে। কিন্তু নেতৃত্বে টিকে গেছেন রুট। ব্যর্থতার পরও রুটের দায়িত্বে থাকার আগ্রহ বিস্মিত করছে আথারটনকে। 

সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন

“অ্যাশেজের পরই রুট ওই অবস্থায় চলে গেছে এবং এরপর কিছুই বদলায়নি। তখনই শেষ করে দিলে ভালো হতো। এখন দায়িত্বটি নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিতে হবে…অস্ট্রেলিয়া সফরের পরও রুটের কীভাবে মনে হলো তার দায়িত্বে থাকার অধিকার আছে কিংবা দায়িত্বে থাকা অন্যরা চাকরি হারানোর পরও সে কীভাবে রয়ে গেছে, এটা ছিল রহস্যজনক। এখনো তা-ই আছে।”

ব্যাটসম্যান হিসেবে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন রুট ঠিকই। কিন্তু নেতা হিসেবে পারছেন না নিজের ছাপ রাখতে। ৪৫ টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া নাসের ডেইলি মেইলে লিখা কলামে আঙ্গুল তুলেছেন রুটের নেতৃত্বের সামর্থ্য নিয়ে।

“রুট একজন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ও পছন্দ করার মতো ছেলে। কিন্তু আমার মনে হয়, তার মধ্যে অধিনায়ক হওয়ার মতো সহজাত কিছু ছিল না। এটা পরিষ্কার যে, রুট ও পল কলিংউডের দায়িত্বে ইংল্যান্ড দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটা পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছে যেখানে তারা সবাই বন্ধু এবং সবাই একটা দল হিসেবে আছে। তারা পছন্দ করার মতো একটা দল হওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু টেস্ট জেতার জন্য এরচেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিজ্ঞ দুই পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে নেয়নি ইংল্যান্ড। যা ভালো লাগেনি নাসেরের। দল নির্বাচন নিয়েও তাই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। 

“মাঝেমধ্যে কঠিন চরিত্রের মানুষ লাগে, এমনকি যদি তাকে ওই কোচ বা অধিনায়কের সামলানো কষ্টকরও হয়। সামলানো কঠিন এমন লোকদের বাদ দিয়ে ১০ জন ‘জী আচ্ছা’ করা খেলোয়াড় নিয়ে দল গড়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার শামিল। অধিনায়কত্বের মূল ব্যাপার, এই ভূমিকার যে দিকটি আমি সবচেয়ে পছন্দ করতাম, তা হলো, যারা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করে, তাদের থেকে সেরাটা বের করা।”

নাসের মনে করছেন, ইংল্যান্ডকে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের করতে পারেন বেন স্টোকস। এই অলরাউন্ডারকে পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান তিনি। 

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন।

“জো যদি নিজ থেকে সরে না যায়, তবে অন্য কাউকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত। নতুন কোচের উচিত বেন স্টোকসের সঙ্গে বসা এবং জিজ্ঞেসা করা, মাঠের বাইরে মানসিকভাবে সে কেমন আছে এবং খেলার মধ্যে কেমন আছে। বেনকে দেখে মনে হচ্ছে সে আবার আবেগ দিয়ে খেলছে, জ্বলে উঠছে। তার কথা যদি কোচের কাছে ঠিক লাগে, তবে তাকেই (নেতৃত্বের) দায়িত্ব দেওয়া উচিত।”

ডেইলি টেলিগ্রাফে ভন লিখেছেন, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ এলেও তা লুফে নিতে পারেন না রুট। ৫১ টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্বে দেওয়া এই ক্রিকেটারের মতে, কখন ইতি টানতে হবে জানা উচিত রুটের। 

“এটা (ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া) হয়েছে গ্রানাডায়, অস্ট্রেলিয়ায় বারবার হয়েছে এবং গত গ্রীষ্মে অনেকবার হয়েছে। এই ধারা চলছেই, চাপে পড়লে রুটের ইংল্যান্ড সেটা সামলাতে পারে না। যখনই একটা সময় আসে যেখানে জেতা দরকার, তারা সেটাই হারে।”

“২০০৮ গ্রীষ্মের আগেই জানতাম যে আমি সরে দাঁড়াব। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে কখন পথচলার শেষ, সেটা জানতে হবে। জো-র নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত আগামী দেড় বছর নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি তার আছে কি না? দল কি তার কথা শুনছে? দলের অবস্থায় কিন্তু তার প্রমাণ মিলছে না।”