রান তাড়ায় নাঈম ও চিরাগের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয় নিয়ে মোটেও ভাবতে হয়নি লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। শেষ দিকে বৃষ্টির বাধায়ও আসেনি ফলাফলে পরিবর্তন। ইউল্যাব ক্রিকেট মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ২৯ রানে হারায় নাঈমের দল।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জাকির হাসান ও ভারতের বাবা অপরাজিথের দারুণ দুটি ইনিংসের পর বাকি ব্যাটসম্যানদের টুকটাক অবদানে ২৯৪ রানের বড় পুঁজি দাঁড় করায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। তিনটি করে ছক্কা-চারে ৭২ রান করেন অপরাজিথ।
আগের তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি করা জাকির অল্পের জন্য পাননি আরেকটি শতরানের দেখা। এবার থামেন তিনি ৩ ছক্কা ও ৭ চারে ৮২ বলে ৯১ রানে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের আগের তিন ম্যাচে রান ছিল ১১৭, ৬৩ ও ১২৪।
লক্ষ্য তাড়ায় ক্যারিয়ারের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরিতে ১২২ রান করেন চিরাগ। ১০৯ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ছয়টি ছক্কা ও ৮ চারে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের আগে বল হাতে দুই উইকেট নেওয়া এই ক্রিকেটারের হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে গত ম্যাচে ১২৪ রানের ইনিংস খেলা নাঈম এবার অপরাজিত ১১৪ রান নিয়ে। তার ১৩০ বলের ইনিংসে ২ ছক্কার পাশে ৮ চার। আসরে প্রথম তিন ম্যাচে তার রান ছিল ৯২, ৯৫ ও ৯১।
নাঈম-চিরাগের ২৩৮ রানের জুটিতে জয়ের মঞ্চ তৈরি ছিল রূপগঞ্জের। ৪২ বলে যখন ৩৭ রান প্রয়োজন তাদের, হানা দেয় বৃষ্টি। এরপর আর খেলা সম্ভব হয়নি।
মাঠ ভেজা থাকায় সোমবারের এই ম্যাচ আধা ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই হয় রূপগঞ্জ টাইগার্সের। মিজানুর রহমান ও জাকিরের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫৫ রান। ভুল বোঝাবুঝিতে মিজানুর (৩৩) রান আউট হয়ে ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন অপরাজিথ ও জাকির। তাদের ব্যাটে দুইশর কাছাকাছি পৌঁছে যায় দলটির রান। ৫৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন জাকির, অপরাজিথের ফিফটি আসে ৬৫ বলে।
ফিফটির পর রানের গতি বাড়ান জাকির। পরের ২৪ বলে করেন ৪১ রান। আরেকটি সেঞ্চুরি যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, তখনই ছন্দপতন। বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়েও একটু থমকে যান, শর্ট কাভারে ক্যাচ নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ভাঙে ১৩৭ রানের জুটি।
লিগের ৪ ম্যাচে জাকিরের রান হলো দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৩৯৫।
পরের ওভারে মাশরাফিকে সহজ ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ফজলে মাহমুদ। চিরাগের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অপরাজিথ।
শেষ দিকে আরিফুল হক ও ফরহাদ রেজা দলের খাতায় যোগ করেন কিছু রান। তিনশর কাছে পুঁজি পায় রূপগঞ্জ টাইগার্স।
বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বাজে হয় রূপগঞ্জের। ৫ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসে তারা। তানজিদ হাসান ও আব্বাস মুসা আলভী দুইজনেই হন বোল্ড।
ফিফটির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন চিরাগ। পরের পঞ্চাশ রান করেন তিনি স্রেফ ৩৪ বলে। ৭৬টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার পর প্রথমবার কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ৯২ বলে।
আরিফুলের শর্ট বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে করতে না পেরে মিড উইকেটে ধরা পড়েন চিরাগ। শেষ হয় তার ঝকঝকে ইনিংসটি।
ক্যারিয়ারের দ্বাদশ লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি করেন নাঈম ১১৯ বলে। আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে তিন ফিফটি ও দুই সেঞ্চুরিতে তার রান হলো ৫১৬।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯৪ (মিজানুর ৩৩, জাকির ৯১, অপরাজিত ৭২, ফজলে মাহমুদ ৩, মার্শাল ১০, আরিফুল ২৬, শরিফুল্লাহ ১৮, ফরহাদ রেজা ২৫, নাসুম ৬, শফিকুল ২*, মুকিদুল ১; মাশরাফি ৯-০-৫৫-২, নাবিল ১০-১-৩৯-২, শফিউল ৬-০-৪৩-২, নাঈম ৯-০-৪৪-০, আসিফ ৮-০-৬১-০, চিরাগ ৮-০-৪৯-২)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৩ ওভারে ২৫৭/৩ (তানজিদ ১, আলভী ৪, চিরাগ ১২২, নাঈম ১১৪*, রকিবুল ৩*; নাসুম ৮-০-৩৮-১, শরিফউল্লাহ ১০-১-৪৭-১, শফিকুল ৫-০-৩৩-০, মুকিদুল ৮-০-৪৯-০, ফরহাদ রেজা ২-০-২০-০, ফজলে মাহমুদ ৫-০-৩১-০, অপরাজিত ২-০-২১-০, আরিফুল ৩-০-১৯-১)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২৯ রানে জিতেছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ
ম্যান অব দা ম্যাচ: চিরাগ জানি