কিছু প্রাপ্তি, কিছু আক্ষেপ আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা

বোলিং দুর্দান্ত। ফিল্ডিং, মাঠে শরীরী ভাষা আর লড়াইয়ের মানসিকতা দারুণ। বড় ঘাটতি ব্যাটিংয়ে। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অভিযানের সারসংক্ষেপ এই। সামনে তাকিয়ে অবশ্য অনেক আশার রসদ পাচ্ছেন নিগার সুলতানা। বিশ্বকাপের প্রাপ্তিগুলোকে সঙ্গী করে দলের এগিয়ে যাওয়ার ছবি আঁকছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2022, 02:06 PM
Updated : 27 March 2022, 02:06 PM

বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে রোববার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ২৩৪ রানে আটকে রাখতে পারলেও রান তাড়ায় নিগার সুলতানারা পারেননি লড়াই জমিয়ে তুলতে।

বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলিতেও ছিল কম-বেশি একই চিত্র। শক্তি-সামর্থ্যে বিশ্বকাপের ৮ দলের মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কাছাকাছি। সেই ম্যাচে ২৩৪ রান তুলে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পায় দল। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলিতে ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠতে পারেনি একদমই।

বিশেষ করে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ। ক্যারিবিয়ানদের সেদিন ১৪০ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু ওই রান তাড়ায়ও মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাটিং। পরে আরেক ম্যাচে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ছোট পুঁজি নিয়ে দারুণ লড়াই করে বোলাররা।

টুর্নামেন্টের প্রায় প্রতিটি ম্যাচ শেষে ব্যাটিং নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরেন নিগার সুলতানা। শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে আরেকবার ফুটে উঠল একই আক্ষেপ।

“আমরা বিশ্বকাপে এসেছিলাম শুধু পাকিস্তানকে হারানোর জন্য নয়। আমরা ম্যাচ ধরেই চেষ্টা করেছি। কোনো দলই আমাদের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়তে পারেনি। আমাদের বোলাররা অনেক দাপট দেখিয়েছে। ব্যাটিং ইউনিট ধসে পড়ায় আমরা ম্যাচগুলি জিততে পারিনি।”

“আর দু-তিনটি ম্যাচে ব্যাটিং ভালো করতে পারলে আমাদের অনেক ভালো হতো। পাকিস্তানের বিপক্ষে টপ অর্ডারে ৪-৫ জন লম্বা ইনিংস খেলায় আমরা ২৩০ ছাড়াতে পেরেছি। এই জায়গাগুলোয় কাজ করার সময় আছে অনেক ভবিষ্যতে।”

ব্যাটিংয়ে ভালো করতে না পারার একটি বড় কারণ অনভিজ্ঞতা। ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ আগে খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগের ২ বছরে ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে স্রেফ ৪টি, বিশ্বকাপের সব দলের চেয়ে যা ঢের কম।

তবে এবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার পাশাপাশি আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপেরও অংশ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। সামনে তাই বড় দলগুলির সঙ্গে খেলা থাকবে নিয়মিত। এটিই আশবাদী করে তুলছে নিগারকে।

“আমরা আইসিসির এফটিপিতে ঢুকে গেছি। এখন শীর্ষ ৭ দলের বিপক্ষে অনেক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলব আমরা। যেটা আমাদের স্কিল পাকাপোক্ত করায় সহায়তা করবে। আমরা সবসময় বলে আসছি যে আমরা ম্যাচ কম খেলি। বিশ্বকাপের মতো আসরেই কেবল এসব বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাই। যত আমরা ম্যাচ খেলব এসব দেশের বিপক্ষে, তত শিখব ও জেতার হার বাড়বে।”

“কম ম্যাচ খেলার কারণে বিভিন্ন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায় না। কখনও নিয়ন্ত্রণে থাকে, কখনও থাকে না। আমাদের যে সম্ভাবনা আছে, এখনও তা পারফরম্যান্সে দেখাতে পারিনি। তবে সামনে যেহেতু তাদের বিপক্ষে অনেক খেলা আছে, আমাদের উন্নতি হবে আরও।”

শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ বেশি খেলাই নয়, উন্নতির জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটও আরও মানসম্পন্ন করে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন অধিনায়ক। সম্ভাব্য একটি ছক কাঁটাও হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

“এর মধ্যেই আমাদের ক্রিকেট বোর্ড পরিকল্পনা করেছে যে, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলি যেন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। আরও কিছু টুর্নামেন্ট করার পরিকল্পনা আছে, যেখানে কিছু সংখ্যক ক্রিকেটার নিয়ে ৪টি বা ৫টি দল গড়ে কঠিন ম্যাচ খেলা হবে। ওসব ম্যাচ খেললে চিন্তা করতে হবে যে কোন পরিস্থিতিতে কেমন করতে হয়। স্কিলের দিক থেকে সবাই অনেক ভালো। শুধু প্রয়োজন অভিজ্ঞতার এবং যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত পারফর্ম করতে পারব।”