মাঠের বাইরে তাসকিনের যে চ্যালেঞ্জ দেখছেন মাশরাফি

ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সের হাত ধরে আসে তুমুল জনপ্রিয়তা। মাঠে আলো ছড়ালে মাঠের বাইরে হাতছানি থাকে অনেক কিছুর। সাজানো থাকে পথ হারানোর নানা উপকরণ। তাসকিন আহমেদের সামনেও এখন সম্ভাব্য সেসব ছবি দেখছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের মতে, তাসকিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2022, 12:49 PM
Updated : 27 March 2022, 01:55 PM

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে ঐতিহাসিক জয় এনে দেওয়ার পর দেশের ক্রিকেটে তাসকিনকে নিয়ে চলছে স্তুতির জোয়ার। এসব যদিও তার জন্য নতুন কিছু নয়। জাতীয় দলে আসার আগে থেকেই তিনি নজর কাড়েন গতি দিয়ে। এরপর অভিষেক ওয়ানডেতেই সাড়া জাগান ৫ উইকেট নিয়ে। গতি আর গ্ল্যামার দিয়ে দ্রুতই দেশের ক্রিকেটে হয়ে ওঠেন তিনি সেনসেশন।

তবে একসময় ফিকে হতে থাকেন তিনি। বলের ধার হারিয়ে হয়ে ওঠেন বিবর্ণ। অনেকে সেখানে দায় দেখেন মাঠের বাইরের অনিয়ন্ত্রিত জীবনের। লম্বা সময় তাই জাতীয় দল থেকে দূরে থাকতে হয় তাকে।

এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ভেঙে আবার গড়েন তিনি। গত দেড় বছর ধরেই তিনি আগের চেয়ে ভিন্ন এক ক্রিকেটার, আলাদা এক মানুষ। মাঠের বাইরে তিনি অনেক গোছানো, তাই সাফল্য আসছে মাঠের ভেতর। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক।

মাঠের বাইরের পুরনো ভূতগুলো আবার ভর করার শঙ্কাও তাই থেকে যাচ্ছে। এখানেই তাসকিনকে সতর্ক করে দিলেন মাশরাফি। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অনুশীলনে এসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি বললেন, মাঠের বাইরের সব হাতছানি উপেক্ষা করতে হবে তাসকিনকে।

“ও যে কঠোর পরিশ্রম করেছে, সেটির ফল মিলছে। এখন ওর মূল সময় যাচ্ছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো সে কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এই যেমন আপনারা আমাকে প্রশ্ন করছেন ওকে নিয়ে, দেশে ফেরার পর ওকে নিয়ে অন্যরকম আবহ তৈরি হবে। মিডিয়া তার পেছনে থাকবে, লোকজন থাকবে। এসবকে নিয়ন্ত্রণ করা ও মাটিতে পা রেখে ঠিক কাজগুলি বারবার করে যাওয়া, তার কাজ যে শুধু মাঠেই, বাইরে নয়, এসবকে ক্রমাগত বুঝে চলা, তার জন্য গুরুত্বপূণ।”

“আমি নিশ্চিত, সে পারবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে ৫ উইকেট নিয়েছিল, তারপর সেটব্যাক ছিল। সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনুধাবন করতে পেরেছে বলে এই পর্যন্ত এসেছে। আশা করি, এটা চলতে থাকবে।”

এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়ই আইপিএলে খেলার ডাক এসেছিল তাসকিনের। শেষ পর্যন্ত বিসিবি চায়নি সফরের মাঝপথে তাকে আইপিএলে পাঠাতে, তিনি নিজেও দেশের হয়ে খেলাকে গুরুত্ব দিয়ে ফিরিয়ে দেন আইপিএলের প্রস্তাব। মাশরাফির মতে, এই ত্যাগের জন্য বোর্ডের উচিত তাসকিনকে পুরস্কৃত করা। উদাহরণ দিলেন তিনি ইংল্যান্ডের বোর্ডের।

“আপনি যদি অ্যান্ডারসন এবং ব্রডের দিকে তাকান, ইসিবি কিন্তু তাদেরকে সবসময়… ক্ষতিপূরণ ঠিক নয়, তাদেরকে এই পুরস্কারটা দেওয়া হয়, যেহেতু তারা আইপিএল না খেলে দেশকে সার্ভিস দিচ্ছে, তাদেরকে ন্যূনতম পুরস্কার দেওয়া। তখন হয়কি ক্রিকেটারদের ভালোলাগা কাজ করে, না বোর্ড আমাদের দেখভাল করছে, তখন আমরা টেস্ট ক্রিকেট কেন যে কোনো ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত।'

“(পুরস্কার) না দিলেও প্রস্তুত থাকা উচিত। তবে পৃথিবীটা তো অন্যভাবে চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে দেখুন, টেস্ট সিরিজে কেউ নেই। আপনি তাই জোর করে চালাতে গেলে মুশকিল হয়ে যায় অনেক সময়। এখানে তাই আমার মনে হয় বিসিবি ও ক্রিকেটারদের সমন্বয় থাকা উচিত যে, ‘তুমি সুযোগ পেয়েছো (ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে), কিন্তু এই সিরিজে তোমাকে আমার দরকার। তোমার ক্ষতিপূরণ যতটা করা সম্ভব, আমরা করব।’ তখন বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে এবং যেটির প্রতিফলন মাঠে আমরা বেশি করতে পারব।”

এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই পেশাদারিত্বের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য হাসপাতালে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত তিনি সিরিজ শেষ করেন। শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ে অবদানও রাখেন। মাশরাফি এজন্য কুর্নিশ জানালেন সাকিবকে।

“সাকিবের যেটা হয়েছে, বাসার ৪-৫ জন অসুস্থ ছিল। আমাদের অবশ্যই সাকিবের ত্যাগটা আলাদা করে দেখতে হবে। সে চাইলে চলে আসতে পারতো। সে থেকে গিয়ে দলকে সাপোর্ট দিয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য, কারণ এক-দুইজন নয়, সবাই অসুস্থ ছিল।”

“সবচেয়ে বড় ব্যাপার সে সিরিজটা জিততে চেয়েছিল। এটা কিছুটা স্বার্থপরের মতো বলা হয়ে যাবে, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ, তার পরিবারের সবাই অসুস্থ ছিল…দিন শেষে এটা সাকিবের সিদ্ধান্ত ছিল। সাকিব দুই পাশ দারুণভাবে সামলে নিতে পেরেছে, এটা আমি মনে করি হ্যাটস অফ টু সাকিব।”