শেষ দিনের রোমাঞ্চে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

ন্যাথান লায়নের বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে টার্ন করে ভেতরে ঢুকছিল, ডিফেন্ড করতে যাওয়া বাবর আজমের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ল স্লিপে। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথটাও যেন পরিষ্কার হয়ে গেল সেখানেই। দ্রুতই বাকি চার উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতলেন কামিন্স-স্টার্করা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 12:12 PM
Updated : 26 March 2022, 07:56 AM

রাওয়ালপিন্ডির ‘মহাসড়কে’ নিষ্প্রাণ ড্রয়ের পর করাচিতে পাকিস্তানের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে প্রথম দুই টেস্ট শেষে দুই দল ছিল সমতায়। ১৫ দিনের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে সিরিজের ফয়সালা হলো শেষ টেস্টের শেষ দিনের শেষ সেশনে এসে। লাহোরে ১১৫ রানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে নিল প্যাট কামিন্সের দল।

শেষ দিনে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ২৭৮ রান, অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেট। ৩৫১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাগতিকরা গুটিয়ে যায় ২৩৫ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে বড় অবদান রাখেন অফ স্পিনার লায়ন। অধিনায়ক কামিন্সের প্রাপ্তি ৩টি। সঙ্গে প্রথম ইনিংসের ৫ উইকেটে ম্যাচে সেরা তিনিই।

জিততে হলে লাহোরে সর্বোচ্চ রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়তে হতো পাকিস্তানকে। চতুর্থ দিনে ইমাম উল হক ও আবদুল্লাহ শফিকের অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা তাদের হয়েছিল ভালো।

তবে শেষ দিনে দুই ওপেনার শুরুর জুটিতে যোগ করতে পারেন কেবল ৪ রান। দিনের চতুর্থ ওভারে ক্যামেরন গ্রিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে শফিক বিদায় নেন আগের দিনের ২৭ রানে।

তিনে নেমে এক ঘণ্টার বেশি সময় উইকেটে কাটিয়ে আজহার আলি ফেরেন ১৭ রান করে। লায়নের অফ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন তিনি। বল তার প্যাডে লেগে জমা হয় স্লিপে স্মিথের হাতে। ক্যাচের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কামিন্স নেন রিভিউ। আলট্রা এজে ব্যাটে বলের সামান্য স্পর্শের প্রমাণ মেলে।

ইমাম ততক্ষণে তুলে নেন ফিফটি। সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগান তিনি। বাবরের সঙ্গে জমে ওঠে তার জুটি। কিন্তু ৭০ রান করে ইমাম বিদায় নেন লাঞ্চের পরপরই। লায়নকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়েন সিলি পয়েন্টে।

সিরিজ জুড়ে নিজের ছায়া হয়ে থাকা ফাওয়াদ আলমের শেষটাও হয় বিবর্ণ। ১১ রান করে কামিন্সের বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের পরের ওভারে ইয়র্কারে মোহাম্মদ রিজওয়ান এলবিডব্লিউ হন শূন্য রানে। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যেত।

তখন ১৬৭ রানে পাকিস্তানের নেই ৫ উইকেট।

ষষ্ঠ উইকেটে সাজিদ খানকে সঙ্গে নিয়ে বাবর গড়েন প্রতিরোধ। চা বিরতির আগে পাকিস্তান অধিনায়ক জীবন পান ৪৫ রানে। লায়নের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ ফেলেন ট্রাভিস হেড।

বিরতির পর অস্ট্রেলিয়া নেয় দ্বিতীয় নতুন বল। স্টার্ককে চার মেরে বাবর পূর্ণ করেন ফিফটি। তার আগে টানা দুটি চার মারেন সাজিদ।

দুই জনের জুটিতে জাগে পাকিস্তানের ড্রয়ের আশাও। কিন্তু স্টিভেন স্মিথকে ক‍্যাচ দিয়ে বাবরের বিদায়ে ৭৮ বল স্থায়ী ৪৬ রানের জুটি ভাঙতেই ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় পাকিস্তান। ১০৪ বলে ৬ চারে বাবর করেন ৫৫ রান।

পরের ওভারে স্টার্কের বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজিদ (৪৭ বলে ২১)। লায়নকে পরপর ছক্কা-চার মেরে ওই ওভারেই বিদায় নেন হাসান আলি। অভিজ্ঞ অফ স্পিনারে পরের ওভারে বাউন্ডারিতে মিচেল সোয়েপসনের দারুণ ক্যাচে ফেরেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। টেস্টে ১৯তম বারের মতো পূর্ণ হয় লায়নের পাঁচ উইকেট।

আর নাসিম শাহর স্টাম্প এলোমেলো করে দিয়ে দলের জয়ে তুলির শেষ আঁচরটা দেন অধিনায়ক কামিন্স।

১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার পাকিস্তান সফরে এসেই সিরিজ জিতল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৬ সালের পর দেশের বাইরে ও ২০১১ সালের পর এশিয়ায় প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল তারা।

অস্ট্রেলিয়ার এমন অর্জনে আলাদা করে বলতে হবে উসমান খাওয়াজার কথা। অ্যাশেজের মাঝপথে টেস্ট দলে ফেরার পর থেকে দারুণ ফর্মে থাকা বাঁহাতি ওপেনার নিজের জন্মভূমি পাকিস্তানে সেঞ্চুরি করেন দুটি। ১৬৫.৩৩ গড়ে ৪৯৬ রান করে সিরিজের সেরা তিনিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৯১

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৬৮

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২২৭/৩ ডিক্লে.

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৫১) ৯২.১ ওভারে ২৩৫ (আগের দিন ৭৩/০) (শফিক ২৭, ইমাম ৭০, আজহার ১৭, বাবর ৫৫, ফাওয়াদ ১১, রিজওয়ান ০, সাজিদ ২১, নুমান ১*, হাসান ১৩, আফ্রিদি ৫, নাসিম ১; স্টার্ক ১৭-৬-৫৩-১, কামিন্স ১৫.১-৬-২৩-৩, লায়ন ৩৭-৮-৮৩-৫, সোয়েপসন ১০-১-৩৬-০, গ্রিন ১১-৪-১৮-১, লাবুশেন ২-০-১০-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১১৫ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ তে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা ম্যাচ: প্যাট কামিন্স

ম্যান অব দা সিরিজ: উসমান খাওয়াজা।