বোলিং গৌরবের দিনে ব্যাটিংয়ের পুরনো হতাশা

আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ৫ ব্যাটারের ৪ জনই অস্ট্রেলিয়ার। ব্যাট হাতে তারা বিশ্ব শাসন করেন। সেই ব্যাটিং লাইন আপকেই কাঁপিয়ে দিল বাংলাদেশ। কিন্তু বোলারদের গৌরবম পারফরম্যান্সের এই দিনে আরও একবার আক্ষেপ ব্যাটিং নিয়ে। রান যদি আরেকটু বেশি হতো, হয়তো অবিস্মরণীয় এক জয়ে বিশ্বকাপ রাঙাতে পারত বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 10:08 AM
Updated : 25 March 2022, 10:08 AM

মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে রেকর্ড ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া চলতি টুর্নামেন্টেও ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। টানা ৬ ম্যাচ জিতে আসরের একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে শুক্রবার তারা মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের। কিন্তু বিশ্বকাপের নবীন এই দলের সামনেই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয় টপ ফেবারিটদের।

ম্যাচের প্রথম ইনিংস অবশ্য অনুসরণ করে অনুামত চিত্রই। বৃষ্টিতে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশ করতে পারে স্রেফ ১৩৫ রান।

কিন্তু ওই পুঁজি নিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। অভিজ্ঞ সালমা খাতুন দুর্দান্ত বোলিংয়ে আউট করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিন ব্যাটারকে। পরে নাহিদা আক্তার ও রুমানা আহমেদও উইকেট শিকারে যোগ দিলে ৭০ রানে ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

এরপর অবশ্য আর পারা যায়নি। বিপর্যয়ে অনেকবারই অস্ট্রেলিয়ার ত্রাতা হওয়া বেথ মুনি আরও একবার দারুণ খেলে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের সঙ্গে জুটিতে দলকে জিতিয়ে দেন ৫ উইকেটে।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা বললেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে এমন বিপাকে ফেলতে পারাও একটা প্রাপ্তি।

“বোলাররা আজকে দারুণ বল করেছে। আজকে যা করেছে তারা, তা দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়াকে মাঠে কঠিন সময় উপহার দিতে পারাটাও ছিল দারুণ। সালমা অসাধারণ বোলিং করেছেন।”

অস্ট্রেলিয়াকে আরও কোণঠাসা করতে পারত বাংলাদেশ, যদি অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের দেওয়া সুযোগটি নিতে পারতেন রিতু মনি। মাত্র ৪ রানেই ক্যাচ দেন তিনি, নিজের বলে হাত ছুঁইয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি রিতু। সেই সাদারল্যান্ড পরে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন। মুনির সঙ্গে তার ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দেয়।

নিগার এখানে দায় দিলেন নিজেদের ভাগ্যকে।

“এটা দুর্ভাগ্যজনক। বোলার বল ডেলিভারি করার পর কাজটা কঠিন হয়ে যায় (ফিরতি ক্যাচ নেওয়া)। রিতু চেষ্টা করেছে। ভাগ্যেরও ব্যাপার এটা। যদি ক্যাচটা হয়ে যেত, আরেকটা উইকেট নিতে পারতাম, ম্যাচটা আরও কাছাকাছি যেতে পারতাম।”

ক্যাচ ছাড়া হয়তো আক্ষেপ করতে হতো না, যদি ব্যাটিংয়ে আরেকটু ভালো করতে পারত বাংলাদেশ। কন্ডিশন যদিও এ দিন ছিল বেশ কঠিন। ওয়েলিংটনে এমনিতেই বাতাস সবসময় থাকে তীব্র। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ায় এ দিন ঠাণ্ডাও ছিল প্রচণ্ড। কন্ডিশনের প্রতিবন্ধকতার কথা বললেন নিগারও।

“কাজটা কঠিন ছিল, কারণ প্রথমবার আমরা এরকম কন্ডিশনে খেললাম। প্রচণ্ড শীত ছিল আর তীব্র বাতাস। বাংলাদেশেও আমরা ঠাণ্ডা অনুভব করি, তবে এতটা নয়। পেশাদার দল হিসেবে আমাদের খেলতেই হবে। তবে প্রথম ইনিংসে বাতাসের জন্য ব্যাটারদের উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন ছিল।”

তবে এই ম্যাচেই শুধু নয়, টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যাটিং ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। ব্যাটাররা আরেকটু ভালো করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় ধরা দিত, অন্য ম্যাচগুলিও হতে পারত আরও লড়াইয়ের। নিগার সেটি মেনে নিলেন অকপটেই।

“যারা পারফর্ম করছে, তারা ধারাবাহিক হতে পারছে না। পিংকি (ফারজানা হক) প্রথম দিকে ভালো করেছে, কিন্তু সবশেষ দুই ম্যাচে অবদান রাখতে পারেনি। আমি করতে পারছি না, শুরু করলেও তা ধরে রাখতে পারছি না। ধারাবাহিকতার অভাব এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সামনে হয়তো সুযেগি পাব কাজ করার।”

“টপ অর্ডাররা যদি আরেকটু ভালো করতে পারত, তাহলে ম্যাচগুলিতে যতটা কাছাকাছি আমরা গিয়েছি, আরেকটু কাছে যেতে পারতাম। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে ভাবনার বিষয় যে কেন করতে পারছি না।”

নিগারের মতে, ব্যাটিংয়ে নিয়মিত ভালো করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ।

“আমাদের আসলে বেশি বেশি ম্যাচ খেলা উচিত। অনুশীলন আমরা যথেষ্ট করেছি, নিজেদের মধ্যে অনেক খেলেছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ এখন বেশি খেলতে হবে। যত বেশি খেলব, ব্যাটাররা তত বেশি শিখবে। এসব কন্ডিশনে, এসব পরিস্থিতিতে কিভাবে ব্যাট করতে হয়, খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, শট খেলতে হয় আরও, যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব, তত শিখব।”

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচে ব্যক্তিগত দুটি মাইলফলকের প্রাপ্তি মিলেছে বাংলাদেশের। দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার ওয়ানডে রান স্পর্শ করেন ফারজানা হক, প্রথম বোলার হিসেবে রুমানা আহমেদ পূরণ করেন ৫০ উইকেট। নিগারের চাওয়া, এই দুজন যেন রান আর উইকেট সংখ্যা সামনে করতে পারেন দ্বিগুন।

“ওদেরকে দলে পেয়ে আমরা গর্বিত। দীর্ঘদিন ধরে ওরা বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। এখনও অনেক দূর যাওয়ার বাকি ওদের। ফারজানা হককে নিয়ে আমি সবসময়ই গর্বিত, বিশেষ করে এবারের টুর্নামেন্টে যেভাবে ব্যাট করেছে সে এবং দলের জন্য যেভাবে পারফর্ম করেছে। রুমানা আহমেদ দারুণ একজন অলরাউন্ডার।”

“আশা করি সামনে এই ধরনের মাইলফলকের সুযোগ আমরা আরও বেশি পাব। আমার তো আশা, ফারজানা আরও ১ হাজার রান করবে এবং রুমানা আরও ৫০ উইকেট নেবে।”