১৩৭ বছর পুরনো কীর্তি মনে করিয়ে শেষ জুটির বীরত্ব

১০ নম্বর ব্যাটসম্যান একজন, আরেকজন ১১ নম্বর। দুজনের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সেই দুজন, জ্যাক লিচ ও সাকিব মাহমুদ বিব্রত করে ছাড়লেন ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের। বীরোচিত ব্যাটিংয়ে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ডকে খানিকটা ভদ্রস্থ স্কোরে নিয়ে গেলেন লেজের দুই ব্যাটসম্যান। তাদের সৌজন্যে টেস্ট ক্রিকেট স্বাক্ষী হলো বিরল এক ঘটনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 04:16 AM
Updated : 25 March 2022, 04:16 AM

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে গ্রেনাডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ পেসারের আক্রমণে ২০৪ রানে অলআউট ইংল্যান্ড।

প্রথম ইনিংসে এই রান মোটেও ভালো কিছু নয়। তবে যে দলের রান এক সময় ছিল ৭ উইকেটে ৬৭, পরে ৯ উইকেটে ১১৪, তাদের জন্য দুইশ ছাড়ানো বিশাল কিছুই!

তা সম্ভব হয়েছে লিচ ও সাকিবের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ে। শেষ জুটিতে দুজন অবিশ্বাস্য লড়াইয়ে যোগ করেন ৯০ রান।

দশে নামা লিচ অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে, পেশাদার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে ১১ নম্বরে নামা সাকিব আউট হন ৪৯ রানে।

দলের সর্বোচ্চ রান ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের, এমনটি টেস্ট ক্রিকেট সবশেষ দেখেছিল সেই ১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেবার ভুক্তভোগি ছিল ইংল্যান্ড। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার টম গ্যারেট দশে নেমে করেছিলেন ৫১, শেষ ব্যাটসম্যান এডউইন ইভান্স ৩৩।

লিচ ও সাকিবের লড়াইয়ের আগে খেলায় ছিল স্রেফ ক্যারিবিয়ান পেসের দাপট। গ্রেনাডায় প্রায় ৭ বছর পর প্রথম টেস্ট এটি। মসলার দেশে উইকেটের সহায়তায় ক্যারিবিয়ান পেসাররা ঝাঁঝ ছড়ান যথেষ্টই।

ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে ছিল বেশ আর্দ্রতাও। টস জিতে বোলিং নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি অবশ্য শুরুর চ্যালেঞ্জিং সময়টুকু কাটিয়ে দেন অনেকটাই। ১২ ওভার নিরাপদে পার করেন জ্যাক ক্রলি ও অ্যালেক্স লিস। এরপরই তাদের উল্টো যাত্রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উইকেট এনে দেন কাইল মেয়ার্স।

ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়াতে স্পিনার ভিরাসামি পেরমলের বদলে একাদশে ফেরানো হয় মেয়ার্সকে। তবে ব্যাটিংয়ের আগে তিনি বড় ভূমিকা রাখেন তার জেন্টল মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে। আঁটসাঁট লাইন-লেংথে ধৈর্য হারিয়ে শর্ট কাভাবে ক্যাচ দেন ক্রলি (৩৬ বলে ৭)।

মেয়ার্স ইংল্যান্ডকে আরও বড় ধাক্কা দেন পরের ওভারে। আগের দুই টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান জো রুট এবার শূন্য রানেই ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে!

আরও একবার নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান তরুণ পেসার জেডেন সিলস। ছবি: রয়টার্স।

মেয়ার্সে প্রথম স্পেল ছিল ৫-৫-০-২!

এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন ক্যারিবিয়ানদের মূল পেসাররা। জেডেন সিলস, আলজারি জোসেফ ও কিমার রোচের ত্রিমুখি আক্রমণে একের পর এক উইকেট ধরা দিতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার অ্যালেক্স লিস ৯৭ বলে ৩১ করে আউট হন রোচের বলে। মিডল অর্ডারে দুঅঙ্ক ছুঁতে পারেননি কেউ।

আটে নামা ক্রিস ওকসের সৌজন্যে কোনোরকমে একশ ছাড়াতে পারে ইংল্যান্ড। সেই ওকসকেও ২৫ রানে বোল্ড করে দেন সিলস।

ইংল্যান্ডের নবম উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায়, তখনই লিচ ও সাকিবের সেই প্রতিরোধ। ক্যারিবিয়ানদের অপেক্ষা চলতে থাকে ৪৬ ওভার ধরে!

বুক চিতিয়ে ব্যাটিং করে শুধু উইকেট আগলে রাখাই নয়, আলগা বল কাজে লাগিয়ে রানও বাড়ান লিচ ও সাকিব। ক্যারিবিয়ানদের হতাশ করে দুজনের জুটি এগোতে থাকে ফিফটি পেরিয়ে শতরানের দিকে। কোনো সুযোগও দেননি তারা।

এক পর্যায়ে দিনের শেষ ওভারও প্রায় পার করে ফেলছিলেন তারা। সাকিব এগিয়ে যান ফিফটির দিকে। শেষ ওভারে অনিয়মিত বোলার জার্মেইন ব্ল্যাকউডের বলে বাউন্ডারিতে ফিফটির খুব কাছে পৌঁছে যান সাকিব। পরের বলটি শর্ট ডেলিভারি পেয়ে হাঁকাতে গিয়েই গড়বড় করে বসেন টাইমিংয়ে, ব্যাটে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে।

ফিফটি তার পাওয়া হয় না পেসার সাকিবের। তবে তার ও লিচের স্মরণীয় লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকে স্কোরকার্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৯.৪ ওভারে ২০৪ (লিস ৩১, ক্রলি ৭, রুট ০, লরেন্স ৮, স্টোকস ২, বেয়ারস্টো ০, ফোকস ৭, ওকস ২৫, ওভারটন ১৪, লিচ ৪১*, সাকিব ৪৯; রোচ ১৮-৪-৪১-২, সিলস ১৭-৪-৪০-৩, হোল্ডার ১৫-৬-৩৪-০, মেয়ার্স ১০-৭-১৩-২, জোসেফ ১৮-৬-৩৩-২, বনার ৫-১-১০-০, ব্ল্যাকউড ১.৪-১-৪-১, ব্র্যাথওয়েট ৫-২-৯-০)।