খাওয়াজার আরেকটি সেঞ্চুরির পর শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষা

সাদা পোশাকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উসমান খাওয়াজার ব্যাট হাসল আরও একবার। নিজের জন্মভূমিতে তিনি উপহার দিলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। প্যাট কামিন্স নিলেন সাহসী সিদ্ধান্ত। সাড়ে তিনশর লিড নিয়ে প্রায় চার সেশন বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ দিলেন প্রতিপক্ষকে। ইমাম উল হক ও আবদুল্লাহ শফিকের উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের শুরুটা হলো দারুণ। শেষ দিনের রোমাঞ্চকর এক মোড়ে দাঁড়িয়ে লাহোর টেস্ট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2022, 02:40 PM
Updated : 24 March 2022, 03:05 PM

সিরিজের তৃতীয় টেস্টে জয়ের জন্য শেষ দিনে পাকিস্তানের দরকার ২৭৮ রান, আর অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ১০ উইকেট।

৩৫১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বৃহস্পতিবার পাকিস্তান দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৭৩ রান তুলে। ফিফটি থেকে ৮ রান দূরে আছেন ইমাম। দিনের শেষ ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়ে ২৭ রানে খেলছেন শফিক।

লাহোরের কিছুটা মন্থর উইকেটে বাউন্স হচ্ছে উঁচু-নিচু। পেসারদের রিভার্স সুইংয়ের সঙ্গে স্পিনারদের জন্য মিলছে খানিকটা টার্ন। তাই শেষ দিনে রান তাড়া করা পাকিস্তানের জন্য চালেঞ্জিং হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অতীত ইতিহাসও তাদের বিপক্ষে। লাহোরে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে, ১১০ ওভারের বেশি টিকতে পারেনি কোনো দল।

খাওয়াজার সেঞ্চুরির পর অস্ট্রেলিয়া এদিন দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৩ উইকেটে ২২৭ রানে।

সিরিজে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন খাওয়াজা। গত জানুয়ারিতে অ্যাশেজের মাঝপথে টেস্ট দলে ফেরার পর ৯ ইনিংসে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। এই সিরিজে সেঞ্চুরি হতে পারত আরও দুটি, প্রথম টেস্টে ৯৭ রানে আউট হওয়ার পর লাহোরে প্রথম ইনিংসে বিদায় নেন ৯১ করে।

সিরিজে ১৬৫.৩৩ গড়ে এই ওপেনারের রান ৪৯৬। ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার পাকিস্তানে আসা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সিরিজে তিনি ছাড়া সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কেউ।

বিনা উইকেটে ১১ রান নিয়ে দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দিনের দ্বিতীয় ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির চার বলের মধ্যে তিনটি চার মারেন ডেভিড ওয়ার্নার। খাওয়াজা একবার বোল্ড হয়েও বেঁচে যান নাসিম শাহর বলটা পায়ের ‘নো’ হওয়ায়। তখন ৩১ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি।

ওয়ার্নার ফিফটি তুলে নেন ৮৬ বলে। এরপরই লাঞ্চের একটু আগে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে ৯৬ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন আফ্রিদি। ৯১ বলে ৬ চার ও একটি ছক্কায় ওয়ার্নার করেন ৫১ রান।

৯৪ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যান খাওয়াজা। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা মার্নাস লাবুশেন সঙ্গে তিনি গড়েন আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি। স্পিনার নুমান আলিকে স্লগ সুইপ করে লাবুশেন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৩৬ রানে।

নাসিম শাহর বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে স্টিভেন স্মিথ করতে পারেন ১৭ রান। এই ইনিংসের পথেই কুমার সাঙ্গাকারাকে ছাড়িয়ে টেস্টে দ্রুততম আট হাজার রানের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। লঙ্কান গ্রেটের লেগেছিল ১৫২ ইনিংস, স্মিথের একটি কম।

খাওয়াজা ক্যারিয়ারের দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্মিথের বিদায়ের আগেই। ১৭৮ বলে ৮ চারে গড়া তার ১০৪ রানের ইনিংসটি। নুমানকে ট্রাভিস হেডের টানা ছক্কা-চারের পরপরই ইনিংস ঘোষণা করেন কামিন্স, তখনও ম্যাচের বাকি সম্ভাব্য ১২১ ওভার।

রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার পেস-স্পিন সামলে পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন ইমাম ও শফিক। ন্যাথান লায়নের বলে ১৩ রানে শফিককে কট বিহাইন্ডের আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। পাকিস্তান ওপেনার বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। আল্ট্রা এজে ব্যাটে বলের স্পর্শের প্রমাণ মেলেনি।

দিনের শেষ ওভারে তিনি বেঁচে যান আরেক দফা, এবার লাবুশেনের বলে স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার জন্য দিনটা শেষ হয় তাই হতাশায়।

আগের দিন কামিন্স-স্টার্কের তোপে প্রথম ইনিংসে ২০ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। শেষ দিনে তাই একটি শঙ্কা থাকছেই। আবার আগের টেস্টে শেষ দিনে অসাধারণ দৃঢ়তায় ম্যাচ বাঁচানো থেকেও স্বাগতিকরা নিতে পারে অনুপ্রেরণা। ফলে শেষ দিনে হতে পারে যেকোনো ফলই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৯১

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৬৮

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১১/০) ৬০ ওভারে ২২৭/৩ (খাওয়াজা ১০৪*, ওয়ার্নার ৫১, লাবুশেন ৩৬, স্মিথ ১৭, হেড ১১*; আফ্রিদি ১১-২-৪৫-১, নাসিম ১২-৩-২৩-১, হাসান ১১-৩-৩৭-০, সাজিদ ১৬-১-৬০-০, নুমান ১০-০-৫৫-১)

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৫১) ২৭ ওভারে ৭৩/০ (শফিক ২৭*, ইমাম ৪২*; স্টার্ক ৫-২-৯-০, কামিন্স ৪-২-৬-০, লায়ন ৯-২-২৩-০, সোয়েপসন ৫-০-২৩-০, গ্রিন ৩-১-৫-০, লাবুশেন ১-০-৪-০)