৯২, ৯৫, ৯১, আক্ষেপের তিন পর্ব পেরিয়ে অবশেষে নাঈমের সেঞ্চুরি

এত কাছে, তবু কত দূরে, এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এটিই হয়ে দাঁড়িয়েছিল নাঈম ইসলামের গল্প। টানা তিন ইনিংসে নব্বই ছুঁয়েও শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা সঙ্গী হয় তার। এবার আফসোসের সেই বৃত্ত ভেঙে শতরানের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার তিন অঙ্ক ছোঁয়ার দিনে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে আবাহনী লিমিটেডকে হারাল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2022, 01:10 PM
Updated : 24 March 2022, 01:26 PM

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্টের সফলতম দল আবাহনীর বিপক্ষে ১৪ রানে জিতেছে রূপগঞ্জ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২৪ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলেন নাঈম। ১০৯ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৪ ছক্কা ও ১৪ চারে। সঙ্গে ভারতের চিরাগ জানির ৪৯ রান ও বাকিদের টুকটাক অবদানে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে রূপগঞ্জ।

রান তাড়ায় তৌহিদ হৃদয় ও মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে জিইয়ে থাকে আবাহনীর জয়ের আশা। দুইজনেই করেন ফিফটি, গড়েন ১১৮ রানের জুটি।

তাদের বিদায়ের পর নিভে যাওয়া আশার বাতি শেষ দিকে আবার জ্বালান মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২৯ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। আবাহনী থামে ৮ উইকেটে ২৮৩ রানে।

রূপগঞ্জের জয়ে বল হাতে অবদান আছে মাশরাফি বিন মুর্তজার। দলের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন অভিজ্ঞ পেসার। থিতু হওয়া মোসাদ্দেক ও হৃদয়ের উইকেট দুটি তারই শিকার।

ব্যাটিং উইকেটে প্রথমে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রূপগঞ্জের। দ্বিতীয় ওভারেই আব্বাস মুসা আলভীকে হারায় তারা। আরাফাত সানির বল স্টাম্পে টেনে এনে দ্রুত ফিরে যান তানজিদ হাসানও।

২৬ রানে দুই উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন চিরাগ ও নাঈম। তাদের ব্যাটে একশ পার করে রূপগঞ্জ। এই দুইজনের ৮৯ রানের প্রতিরোধ ভাঙে চিরাগের বিদায়ে। তার ৬ চারের ইনিংসটি থামে বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।

রকিবুল হাসানকে নিয়ে আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়েন নাঈম। ৭১ বলে ফিফটি করার পর নাঈম ঝড় বইয়ে দেন আবাহনীর বোলারদের ওপর। পরের পঞ্চাশ রান করতে খেলেন ২৮ বল। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের একাদশ সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ৯৯ বলে।

রকিবুলের বিদায়ের পর নাঈমকে সঙ্গ দেন সাব্বির রহমান। দুইজনেই দলকে এনে দেন দ্রুত রান। তাদের জুটিতে ৪৩ বলে ৮২ রান পায় রূপগঞ্জ।

বিধ্বংসী জুটি থামে নাঈমের বিদায়ে। সাইফ উদ্দিনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল হাঁটু গেড়ে স্লগ সুইপ করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি।

পরের ওভারেই মোসাদ্দেকের ফুলটস স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন ২ ছক্কা ও এক চারে ২১ বলে ৩০ রান করা সাব্বির। শেষ দিকে মাশরাফি এক ছক্কা ও ২ চারে ১২ বলে ২৩ রান করে থাকেন অপরাজিত।

লক্ষ্য তাড়ায় আগ্রাসী শুরু করা মুনিম শাহরিয়ার (১৯ বলে ২৬) টিকতে পারেননি লম্বা সময়। ভারতীয় টেস্ট ব্যাটসম্যান হনুমা বিহারিকে (২৭ বলে ১৮) এলবিডব্লিউ করে দ্রুত ফেরত পাঠান নাঈম। মোহাম্মদ নাঈম শেখও ভালো শুরুর পর টানতে পারেননি দলকে (৪৩ বলে ৩৫)।

এরপরই হৃদয় ও মোসাদ্দেকের সেই জুটি। দুইজনে দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন লক্ষ্যের দিকে। ৬০ বলে ফিফটি করেন হৃদয়, মোসাদ্দেকের পঞ্চাশ আসে ৬৪ বলে।

রূপগঞ্জের মাথা ব্যথার হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তার লেংথ বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় আকাশে তুলে দেন হৃদয়। সহজ ক্যাচ গ্লাভসে জমিয়ে ৬ চারে ৭৪ রান করা যুব বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠান কিপার আলভী।

নিজের পরের ওভারে থিতু মোসাদ্দেককেও ফিরিয়ে আবাহনীর জয়ের আশা ভেঙে দেন মাশরাফি। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৬৬ রান করেন আবাহনীর অধিনায়ক। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শামীম হোসেন করতে পারেননি তেমন কিছু।

শেষ দিকে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সাইফ উদ্দিন ম্যাচে উত্তেজনা ফেরালেও দলকে জেতাতে পারেননি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তানজিদ ১৫, আলভী ৫, চিরাগ ৪৯, নাঈম ১২৪, রকিবুল ২২, সাব্বির ৩০, তানবীর ২৩*, মাশরাফি ১৭*; সাইফ ১০-০-৫১-১, মোসাদ্দেক ১০-০-৫৮-২, সানি ৮-১-৫০-১, কামরুল ৭-১-৫৭-১, তানভীর ১০-০-৫১-১, বিহারি ৫-০-২৫-০)

আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৮৩/৮ (মুনিম ২৬, নাঈম ৩৫, বিহারি ১৮, হৃদয় ৭৪, মোসাদ্দেক ৬৬, শামীম ২, জাকের ৪, সাইফ ৪৩*, কামরুল ৬; মাশরাফি ৯-০-৬৩-৩, নাবিল ১০-০-৪৮-১, শফিউল ৮-০-৫১-১, নাঈম ৬-০-৩৩-১, সঞ্জিত ৮-০-৪১-১, চিরাগ ৯-০-৪২-১)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম ইসলাম

প্রাইম ব্যাংককে চমকে দিয়ে খেলাঘরের জয়

ব্যাটসম্যানদের মিলিত চেষ্টায় আড়াইশর কাছে গেল প্রাইম ব্যাংক। কিন্তু হতাশ করলেন তাদের বোলাররা। পিনাক ঘোষ, অমিত হাসান ও সালমানের তিন ফিফটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি।

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে ঢাকা লিগের ম্যাচে শিরোপা প্রত্যাশী প্রাইম ব্যাংককে ৭ উইকেটে হারায় খেলাঘর। ২৫০ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ১৪ বল বাকি থাকতে।

খেলাঘরের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন অমিত। কিন্তু দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরতে পারেননি তিনি। পায়ে টান লাগলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ইনিংস শুরু করতে নেমে ৬৮ রান করেন পিনাক ঘোষ। ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন সালমান।

বৃহস্পতিবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই হয় প্রাইম ব্যাংকের। এনামুল হক ও শাহাদাত হোসেন দিপুর উদ্বোধনী জুটিতে ৬১ রান তুলে ফেলে তারা।

নিহাদ উজ জামানের বলে এনামুল (৪১ বলে ৩৩) বোল্ড হলে ভাঙে জুটি। পরের ওভারেই ফিরে যান অনেকটা সময় উইকেটে কাটানো আরেক ওপেনার শাহাদাত।

এরপর ভারতের অভিমান্যু ঈশ্বরন ও নাসির হোসেনের ব্যাটে ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি পায় প্রাইম ব্যাংক। ৭৮ রানের এই জুটি ভাঙে ৪০ রান করা নাসিরের বিদায়ে। কয়েক ওভার পর ফিরে যান ৪৮ রান করা অভিমান্যুও। দুইজনেই টিপু সুলতানের শিকার।

প্রাইম ব্যাংকের শেষ ৭ ব্যাটসম্যানের কেউ পার করতে পারেননি ত্রিশ রান। তাতে আড়াইশর আগেই গুটিয়ে যায় তারা।

খেলাঘরের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নেন টিপু, মাসুম খান, মেহেদি হাসান ও নিহাদ।

জবাব দিতে নেমে ৫০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে খেলাঘর। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেন পিনাক ও অমিত।

দুইজনে গড়েন ৯৩ রানে জুটি। ৭৫ বলে ফিফটি করা পিনাককে ফিরিয়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন মেহেদি হাসান। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় কাভারে ক্যাচ দেন এক ছক্কা ও ৪ চারে ৬৮ রান করা পিনাক।

৬১ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন অমিত। একটা সময় মনে হচ্ছিল সালমানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে ফিরবেন তিনি। কিন্তু চোট বাধা হয়ে আসে। ৭ চারে ৮৫ রান করে তাকে ছাড়তে হয় মাঠ।

ততক্ষণে অবশ্য জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় খেলাঘর। মাসুমকে নিয়ে বাকি কাজ সহজে সারেন ৪৪ বলে ফিফটি করা সালমান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৪৯ (এনামুল ৩৩, শাহাদাত ১৯, অভিমান্যু ৪৮, নাসির ৪০, শামসুর ২৯, মেহেদি ১৮, কাপালী ১২, নাহিদুল ২৪, দেলোয়ার ২, রুবেল ০, রকিবুল ৭*; মাসুম ১০-০-৫২-২, টিপু ১০-০-৩৩-২, মেহেদি ৮.৪-০-৫১-২, নিহাদ  ৮-০-৪৯-২, রিশাদ ৪-০-২৫-০, সালমান ৯-০-৩২-০)

খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সিমিতি: ৪৭.৪ ওভারে ২৫৩/৩ (পিনাক ৬৮, হাসানউজ্জামান ২৬, প্রিতম ৭, আমিত ৮৫ আহত অবসর, সালমান ৫৩*, মাসুম৯০*; রুবেল ৭-০-৩৯-০, নাহিদুল ৮.৪-১-৪৫-০, মেহেদি ১০-০-৪৮-২, নাসির ৫-০-২৭-০, কাপালী ৬-০-৩৬-০, রকিবুল ১০-০-৪৮-০, দেলোয়ার ১-০-১০-০)

ফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অমিত হাসান