জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের জয় ৭ উইকেটে।
দলটির বিপক্ষে পরপর দুই ওয়ানডেতে তিনশ ছাড়ানো পুঁজি গড়া বাংলাদেশ এবার থমকে যায় দুইশর আগে। ৯ উইকেটে করে ১৯৪ রান।
একটা পর্যায়ে তো একশ হওয়া নিয়েই জেগেছিল শঙ্কা। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে দুটি পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে দলকে দুইশর কাছাকাছি পুঁজি এনে দেন আফিফ।
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১০৭ বলে ৯ চারে খেলেন সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস। ৪৯ বলে ২ ছক্কা ও একটি চারে ৩৮ রান করেন মিরাজ।
উইকেটে মেলে বাড়তি বাউন্স। সেটিই দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের টপ আর মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন কাগিসো রাবাদা। শুরু আর শেষের দারুণ বোলিংয়ে ৩৯ রানে এই পেসারের প্রাপ্তি ৫ উইকেট।
সেঞ্চুরিয়নে ৩৮ রানে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণে প্রথম জয়ের অনির্বচনীয় স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেই মাঠেই আগামী বুধবার আরও একবার সিরিজ জয়ের হাতছানিতে শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে তামিম ইকবালের দল।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে তামিম বলেন, এখানে সবশেষ সাত ম্যাচের মতো আগে ব্যাটিং করে বড় সংগ্রহ গড়তে চান তারা। কিন্তু তার কথার প্রতিফলন পড়েনি তাদের ব্যাটিংয়ে।
ব্যাটিং ধসের শুরুটা হয় অধিনায়ককে দিয়ে। বাড়তি বাউন্সের জন্য লুঙ্গি এনগিডির ডেলিভারি ঠিকমতো খেলতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ধরা পড়েন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানের দারুণ ইনিংসে জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান এবার ৬ বল খেলে খুলতে পারেননি রানের খাতা। রাবাদার বাড়তি বাউন্সে বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় কাভারে।
পরে রাবাদার বাড়তি বাউন্সেই আপার কাট করার চেষ্টায় উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন লিটন দাস। শূন্য রানে জীবন পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ইয়াসির আলি চৌধুরি। তিনিও রাবাদার বাড়তি বাউন্সের বলি। ক্যাচ তুলে দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
রাবাদার বোলিং ফিগার তখন ৬-০-১৫-৩!
অনেক ম্যাচে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন যিনি, সেই মুশফিকুর রহিমও এদিন ব্যর্থ। একাদশে ফেরা পেসার ওয়েইন পার্নেলের বল ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এই পেসার একটু পর মাঠ ছাড়েন পায়ে টান লাগায়।
বাংলাদেশ তখন অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ গড়েন প্রতিরোধ। বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই জন। তাদের ষষ্ঠ উইকেট জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৭৪ বলে।
এরপর আর বেশি বড় হয়নি জুটি। ৬০ রানের জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। শুরু থেকে লেগ স্লিপ রেখে বল করছিলেন রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসি। শেষ পর্যন্ত সেই ফাঁদেই পা দেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। লেগে ঘোরানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন লেগ স্লিপে। ৪৪ বলে ৩ চারে করেন ২৫ রান।
এরপর দুই ব্যাটসম্যানই জীবন পান টেম্বা বাভুমার একই ওভারে। লং অনে মিরাজের ক্যাচ ফেলেন ইয়ানেমান মালান। ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি বোলার। যদিও খুব কঠিন ছিল সেটি।
আফিফ বেঁচে যান ৫৯ রানে, ২১ রানে মিরাজ।
রাবাদার শেষ ওভারে ফিরে যান দুই সেট ব্যাটসম্যানই। ইনিংস সেরা ৮৬ রানের জুটি ভাঙে আফিফের বিদায়ে। পুল করার চেষ্টায় ঠিকমতো খেলতে পারেননি তিনি। বল উঠে যায় আকাশে। স্লোয়ারে আগেই ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন মিরাজ। পূর্ণ হয়ে যায় রাবাদার পাঁচ উইকেট।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো এই কৃতিত্ব দেখালেন রাবাদা। প্রথমটিও বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৫ সালে মিরপুরে অভিষেকে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন স্রেফ ১৬ রান দিয়ে।
২০০৭ সালে শন পোলকের পর জোহানেসবার্গে পাঁচ উইকেট পেলেন কোনো বোলার।
শেষ ৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলতে পারে কেবল ১৪ রান।
রান তাড়ায় ডি ককের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাসকিনের চার বলের মধ্যে তিনি মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা। মিরাজকে পরপর চার-ছক্কা। শরিফুল ইসলামকে টানা তিনটি বাউন্ডারি।
মালানকে বোল্ড করে ৭৫ বলে ৮৫ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ডি কককে থামান সাকিব। ডিপ মিডউইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন আফিফ। ৪১ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় গড়া কিপার-ব্যাটসম্যানের ৬২ রানের ইনিংস।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন বাভুমা ও ভেরেইনা। বাভুমাকে (৩৭) ফিরিয়ে আফিফ ৮২ রানের জুটি ভাঙলেও দলের জয় নিয়ে ফেরেন ভেরেইনা। ৭৭ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (তামিম ১, লিটন ১৫, সাকিব ০, মুশফিক ১১, ইয়াসির ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯*, শরিফুল ২, মুস্তাফিজ ২*; এনগিডি ১০-০-০-০, রাবাদা ১০-০-৩৯-৫, পার্নেল ২.৫-০-৬-১, বাভুমা ৬.১-০-২২-০, শামসি ১০-২-২৬-১, মহারাজ ১০-০-৫৭-০, ফন ডার ডাসেন ১-০-৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭.২ ওভারে ১৯৫/৩ (মালান ২৬, ডি কক ৬২, ভেরেইনা ৫৮*, বাভুমা ৩৭, ফন ডার ডাসেন ৮*; শরিফুল ৪-০-২৯-০, তাসকিন ৪-০-৪১-০, মিরাজ ১০-০-৫৬-১, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, সাকিব ১০-২-৩৩-১, আফিফ ৫-০-১৫-১, মাহমুদউল্লাহ ১.২-০-৮-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি শেষে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা।