নাঈমকে ছাপিয়ে নায়ক জাকির-মিজানুর

লড়াই যেন হলো দুই দলের তিন ওপেনারের। সেখানে রূপগঞ্জ টাইগার্সের দুইজনের সঙ্গে পেরে উঠলেন না আবাহনীর মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তার সেঞ্চুরি ছাপিয়ে ব্যবধান গড়ে দিলেন জাকির হাসান ও মিজানুর রহমান। মাত্র ৭ রানের জন্য শতক না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মিজান ফিরলেও ক‍্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান জাকির।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2022, 11:36 AM
Updated : 15 March 2022, 01:28 PM

বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী দিনে ৭ উইকেটের চমক জাগানিয়া জয় পেয়েছে রূপগঞ্জ টাইগার্স। আবাহনীর ২৫৫ রান ৪৮ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেছে নবাগত দলটি।

মিরপুরে সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ম্যাচে আগে ব্যাটিং সহজ নয়। উইকেটে আর্দ্রতা থাকায় পেসাররা পান বাড়তি সুবিধা। সেটা খুব ভালোভাবেই কাজে লাগান রূপগঞ্জের দুই পেসার শফিকুল ইসলাম ও মুকিদুল ইসলাম। তাদের ছোবল এড়িয়ে ১৩২ বলে ১০ চার ২ ছক্কায় ১১৫ রানের ইনিংস খেলেন নাঈম। চলতি আসরে লিগে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি।

দ্বিতীয়ভাগে উইকেটে বোলারদের জন্য কোনো সহায়তাই ছিল না। আবাহনীর বোলাররাও লাইন, লেংথে ছিলেন না ধারাবাহিক। দেড়শ ছাড়ানো উদ্বোধনী জুটিতেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মিজানুর ও জাকির।

১৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দলকে টানেন জাকির। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭৬তম ম্যাচে এসে ক‍্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে এনে দেন অসাধারণ জয়।

জাকির ১১৬ বলে ১৫ চার ও দুই ছক্কায় করেন ১১৭ রান। ৮২ বলে ১২ চার ও তিন ছক্কায় ৯৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন মিজানুর।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে টানা তিনবারের চ‍্যাম্পিয়ন আবাহনী।

অফ স্পিনার মোহাম্মদ শরিফউল্লাহকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই স্টাম্পড হন মুনিম শাহরিয়ার। অফে সরে গিয়ে শফিকুলকে ফ্লিক করার চেষ্টায় চমৎকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান জাকের আলি।

মুকিদুলের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা মেরে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তৌহিদ হৃদয়। মুকিদুলকেই জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হয়ে যান আফগানিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজিবউল্লাহ জাদরান।

প্রথম সাত ওভারে শফিকুলকে তিন বাউন্ডারি মারা নাঈম ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেন নিজেকে। মন্থর এক জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মোসাদ্দেক ও নাঈম।

রানের গতি বাড়ানোর মুহূর্তে বাবা অপরাজিথকে তুলে মেরে বদলি ফিল্ডার আজমির আহমেদের দুর্দান্ত ক‍্যাচে বিদায় নেন মোসাদ্দেক। ভাঙে ৭৭ রানের জুটি। আবাহনী অধিনায়ক ৩ চারে ৫৮ বলে করেন ৩৭।

খুব বেশিক্ষণ টেকেননি শামীম হোসেন। চোট কাটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। তার সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়ার পথে ১১৩ বলে ক‍্যারিয়ারের পঞ্চম শতকে পৌঁছান জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত মুখ নাঈম।

সেঞ্চুরির আগে রানের গতি কিছুটা বাড়লেও তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর ধারাটা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যেতেও পারেননি বেশি দূর।

৫ চারে ৪৩ বলে ৪০ রান করেন সাইফ, দলের সংগ্রহ ছাড়ায় আড়াইশ।

দুপুরের রোদে আর্দ্রতার কোনো চিহ্নও ছিল না উইকেটে। আবাহনীর বোলাররাও বুঝতে পারছিলেন না কোন লাইন, লেংথে বোলিং করবেন। সুযোগটা দুই হাতে কাজে লাগান মিজানুর ও জাকির। দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে এগিয়ে যান দ্রুত। বারবার বোলার বদলেও কোনো লাভ হয়নি। কেউই খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেননি।

আগে আগে ছুটছিলেন মিজানুর। মনে হচ্ছিল তিনিই আগে পৌঁছাবেন তিন অঙ্কে। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান ৯৩ রানে।

আগের সেরা ৯২ ছাড়িয়ে ১০৭ বলে ক‍্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান জাকির। গত বিসিএলের চার ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি করা জাকির খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বিপিএলে। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চোখ ধাঁধানো সব শট খেলে পেলেন সেঞ্চুরি। তাকেও বোল্ড করে থামান কামরুল। মাঝে অপরাজিথকে দ্রুত বিদায় করেন তানজিম হাসান। তাতে অবশ্য জয় নিয়ে মোটেও ভাবতে হয়নি রুপগঞ্জ টাইগার্সকে।

ফজলে মাহমুদকে নিয়ে বাকিটা অনায়াসে সারেন অধিনায়ক মার্শাল আইয়ুব। ৫ চারে ১৫ বলে তিনি করেন ২৩।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৫৫/৯ (মুনিম ১, নাঈম ১১৫, জাকের ৪, হৃদয় ৭, নাজিবউল্লাহ ৩, মোসাদ্দেক ৩৭, শামীম ১৫, সাইফ ৪০*, তানজিম ৪, কামরুল ১, তানভির ০*; শফিকুল ৭-০-৫৫-১, শরিফউল্লাহ ১০-০-৪০-২, মুকিদুল ১০-১-৫১-৩, অপরাজিথ ১০-১-৩৮-১, ফরহাদ ৮-০-৪০-২, এনাম জুনিয়র ৫-০-২৩-০)

রূপগঞ্চ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪২ ওভারে ২৫৯/৩ (মিজানুর ৯৩, জাকির ১১৭, আপরাজিথ ১১, মার্শাল ২৩, মাহমুদ ১০; সাইফ ৫-০-২১-০, কামরুল ৬-০-৫০-২, মোসাদ্দেক ৯-০-৫৩-০, তানভির ১০-০৫২-০, তানজিম ৮-০-৫৭-১, শামীম ৪-০-২৬-০)

ফল: রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকির হাসান