মাঠের লড়াইয়ের আগে যা বললেন ১১ অধিনায়ক

ট্রফি উন্মোচনের আগে একে একে এগিয়ে এলেন সব অধিনায়ক। কেউ এই মঞ্চে নিয়মিত, কারো নতুন অভিজ্ঞতা। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে কেউ কেউ শোনালেন শিরোপা জয়ের গান, কারো কণ্ঠে পেছনের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলার আশাবাদ। লক্ষ্য যাই হোক না কেন, বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দলের জন্য সবাই নিজেদের নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2022, 03:01 PM
Updated : 14 March 2022, 03:03 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার দুপুরে হয় ২০২১-২২ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি উন্মোচন। পরে অধিনায়করা জানান তাদের দল ও লক্ষ্য নিয়ে।  

মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই। প্রথমদিনে মাঠে গড়াবে তিনটি ম্যাচ।

নাঈম ইসলাম, লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

“এবারের প্রিমিয়ার লিগে আমাদের লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ভালো দল হয়েছে। খুব ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। প্রতিটা দলেরই প্রত্যাশা থাকে শিরোপা জয়, আমাদেরও ভিন্ন কোনো চাওয়া নেই। আমরাও শিরোপা জিততে চাই। তবে আমরা ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ যেতে চাই।  প্রতিটা ম্যাচ ভালোভাবে খেলে, প্রতিটা ম্যাচ জিতে, ভালো ক্রিকেট খেলে আমরা এক ধাপ করে এগোতে চাই।” 

“মাশরাফি (বিন মুর্তজা) ভাইয়ের মতো খেলোয়াড় যখন কোনো দলে থাকেন, সেটা সেই দলের জন্য অনেক বড় ‘প্লাস পয়েন্ট।’ উনি কি ধরনের পারফরমার আপনারা সবাই জানেন, নতুন করে বলার কিছু নেই। উনি দলে থাকা যে কোনো দলের জন্যই বড় প্লাস পয়েন্ট।”

অলক কাপালী, প্রাইম ব্যাঙ্ক

“আমাদের দলে প্রায় ২৭ জন খেলোয়াড় রয়েছে। আমাদের যে কম্বিনেশন আছে, কয়েক দিনের অনুশীলনে চেষ্টা করছি ঘাটতির জায়গাগুলো পূরণ করার।”

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বাংলাদেশ স্কোয়াডে এই ক্লাব থেকে আছেন ছয় ক্রিকেটার। সঙ্গে স্কোয়াডে না থাকলেও এই দলেরই আরও দুজনকে (অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ও তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজা) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আগের দিন হতাশা প্রকাশ করেন প্রাইম ব্যাঙ্কের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। অধিনায়কের কণ্ঠেও শোনা গেল একই আক্ষেপ।

“যেহেতু জাতীয় দলের জন্য খেলতে গেছে, কিছু করার নাই। আমরা যেভাবে অনুশীলন করেছি, আশা করি, ম্যাচে আমরা ভালো করব, কোনো সমস্যা হবে না।”

মোহাম্মদ আশরাফুল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন

দলটা ভালোই হয়েছে আশা করি। আর ব্রাদার্স ইউনিয়ন শেষ ১২-১৩ বছর হলো সুপার লিগে খেলে না। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও দলের লক্ষ্য, এবার সুপার লিগে খেলতে চাই। অবশ্যই সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। আমাদের প্রথম লক্ষ্য, সেরা ছয় দলের একটা হতে চাই। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব মিলিয়ে আমি বলব আমাদের ভারাসাম্যপূর্ণ একটা দল হয়েছে। অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়ে একটা ভালো দলই হয়েছে।”

“সবার জন্যই লিগ গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেহেতু এখনও খেলছি এবং স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ দলে খেলব। সেদিক থেকে এই লিগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য। যদি আরও দুই-তিন বছর আমার ক্যারিয়ার ক্যারি করতে চাই, আমার মনে হয় এই লিগে আমার ভালো কিছু করা উচিত।”

“স্বপ্ন তো দেখি সব সংস্করণেই খেলার। কিন্তু এখন যেহেতু সামনে ঢাকা লিগ, ঢাকা লিগ নিয়েই আমি থাকতে চাই। এই জায়গায় ভালো খেলতে চাই, ব্রাদার্সের হয়ে ভালো খেলতে চাই। কিছু ভালো ইনিংস খেলতে চাই, ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে চাই।”

“যখন আমি দেখেছি যে, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আমাদের দলে এসেছে (আমি খুশি হয়েছি)। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করব, যতটুকু সমর্থন ওকে দিতে পারি, দেওয়ার। অবশ্যই ওর পারফরম্যান্সটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।  ওকে শুরুতে সমর্থন দেব, ও যদি পারফরম করতে পারে জিনিসটা সহজ হয়ে যাবে। আমার চেষ্টা থাকবে এবং আমাদের ম্যানেজমেন্টেরও চেষ্টা থাকবে, তাকে পুরো সমর্থন দেওয়ার।”

নাদিফ চৌধুরি, খেলাঘর সমাজ কল্যান সমিতি

“দলটা আমি বলব, তরুণ ও সিনিয়র ক্রিকটারদের সমন্বয়ে করা হয়েছে। কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে, যারা এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে ভালো করেছে। আমার মনে হয়, আমরা সব দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ দল। আমাদের চায়নাম্যান আছে, লেগ স্পিনার আছে, তরুণ কয়েকজন পেসার আছে। হয়তো তেমন বড় নাম নেই। আমরা কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেললাম, বা এক সঙ্গে অনুশীলন করলাম, আমার কাছে দলটাকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ মনে হচ্ছে। ক্রিকেট খেলা তো মাঠে পারফর্মের খেলা। যারা মাঠে ভালো খেলবে ফল তাদের দিকেই যাবে। তবে আমি মনে করি, আমাদের দল ভালো একটা কিছু করবে।”

“রুবেল নামে একজন বাঁহাতি লেগ স্পিনার আছে, ওকে খুব ইম্প্রেসিভ মনে হয়েছে আমার কাছে। যদি ওর সুযোগ আসে, মনে হয় ভালোই খেলবে। ও অনেক দিন ধরেই আসে, মুশফিকুর রহিমও ওকে চেনে। নেটে বল করে অনেক দিন ধরেই। নাফিস (ইকবাল) ভাই ওকে যুক্ত করেছেন দলে। হয়তো প্রথমে সযোগ নাও আসতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় সুযোগ এলে ও ভালোই করবে। ও কোনো পর্যায়ে এখনও খেলেনি। হয়তো প্রথমে সুযোগ আসবে না, ভবিষ্যতে আসতে পারে। অনুশীলনে দেখলাম, খুব ইম্প্রেসিভ মনে হলো আমার কাছে।”

“ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি সব সময়ই দেখেছি, লেগ স্পিনারদের খেলাই সবচেয়ে কঠিন, যদি ভালো জায়গায় বল করে। তো আমিও চেষ্টা করব আমার সাধ্যমত, যদি সুযোগ আসে খেলানোর। সবার আগে তো দল। দলের যে অপশন ভালো হবে, সেটাই বেছে নেব। আমার দিক থেকে আমি চেষ্টা করব খেলানোর জন্য।”

মোসাদ্দেক হোসেন, আবাহনী

“শেষ তিন বছর যখন আমরা চ্যাম্পিয়ন, তাই এবারও সেভাবেই ভাবছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাব। আমাদের প্রস্তুতি ও আলোচনা হয়েছে দলের মধ্যে, আমরা ইতিবাচক আছি। তো এখন পর্যন্ত সেভাবেই এগোচ্ছি।”

“যখন সেরা একাদশের তিন-চার জন থাকবে না ওই সময় অবশ্যই দল সাজানো একটু কঠিন। তারপরও আমাদের যারা খেলবে তারাও জাতীয় দলের ক্রিকেটার এবং তারাও বড় নাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। তো আমি আশা করছি, আমাদের সবাই ভালো খেলবে।”

“আমাদের প্রথম ম্যাচ রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে। একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে। ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। আমরাও ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি, ভালো একটা ম্যাচ হবে।”

“আপনি যদি জাতীয় দলের কথা চিন্তা করেন, আমাদের প্লাটফর্ম বিপিএল, ঢাকা লিগ, বিসিএল, জাতীয় ক্রিকেট লিগ। যেখানেই ভালো খেলবেন (কাজে লাগবে)। (দল নির্বাচন) নির্বাচকদের কাজ, ম্যানজেমেন্ট আছে। এটা তাদের কাজ। আমাদের হাতে আছে পারফরম্যান্স করা, তো আমরা পারফরম্যান্স করার দিকেই মনোযোগ দেব। আমি প্রিমিয়ার লিগটা তো অবশ্যই ভালো খেলতে চাই। ভালো খেলে আবারও দলে ফিরতে চাই।”

মার্শাল আইয়ুব, রূপগঞ্জ টাইগার্স

“আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করা। তবে প্রথম লক্ষ্য সুপার লিগ খেলা। আমাদের দলে বিদেশি হিসেবে খেলবে ভারতীয় ব্যাটসম্যান বাবা অপরাজিথ। সে চলে এসেছে।”

“আমাদের আসলে নাসুম (আহমেদ) ছাড়া সবাই আছে। আমরা মূলত স্থানীয় পারফর্মারদের নিয়ে দল করেছি। আমাদের দলে যেমন ফজলে রাব্বি আছে, শরিফুল্লাহ আছে, আরিফুল হক আছে, তারা সবাই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমার। কেবল নাসুম দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে। ওয়ানডে সিরিজের পর আশা করি, সে যোগ দেবে। সেদিক থেকে আমরা একটু সুবিধাজনক জায়গায় আছি। কারণ, আমাদের পুরো দলটাই পাচ্ছি। কয়েকটি বড় দল কিন্তু তাদের অনেক খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না শুরুতে। আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।”

আকবর আলি, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স

“আমরা প্রথম দুই ম্যাচের সূচি পেয়েছি। প্রথম দুই প্রতিপক্ষের নাম জানি। আমরা প্রথম ম্যাচের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। এটা লম্বা একটা টুর্নামেন্ট, আমরা ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ এগোতে চাই।”

“(শিরোপা লড়াইয়ে থাকা) আমরা এখনই এতোটা প্রত্যাশা করছি না।  প্রথম লক্ষ্য থাকবে যেন ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ এগোতে পারি এবং সুপার লিগে খেলতে পারি।”

“যে টুর্নামেন্টই খেলি কি না, চেষ্টা থাকে ভালো কিছু করার। এখানেও সেটাই থাকবে। নিজের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব। এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগের কোনো দলের নেতৃত্ব দিব। এটা আমার জন্য কোনো চাপ নয় বরং সুযোগ। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মতো একটা দলের নেতৃত্ব পাওয়া আমার জন্য বড় সুযোগ।”

শুভাগত হোম চৌধুরি, মোহামেডান

“একটা শক্তিশালী দল হয়েছে আমাদের। যারা আছে, অনেক দিন ধরেই খেলছে। অভিজ্ঞদের একটা দল। অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব একটা ভালো শুরু করে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে। প্রিমিয়ার লিগে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সমর্থকরা আছেন, চেষ্টা করব তাদের মনের আশা পূরণ করতে, এবার শিরোপা জিততে।”

“যারা জাতীয় দলে আছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তাদের মিস করব। হয়তো আমরা শেষের দিকে তাদের পাব। কিন্তু তাদের ছাড়াও এখন আমাদের যে দল আছে, সেটা ভালো, ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল। শুরু থেকে আমরা চেষ্টা করব, ভালো ফল করতে। ওরা এলে যেন, আরও বেটার পারফরম্যান্স করতে পারি।” 

মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব

“দল হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা তারুণ্যনির্ভর একটি দল। আমরা খুবই আশাবাদী যে এই টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করব। এখনই সুপার লিগের চিন্তা না করে আমরা যদি ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ খেলি তাহলে হয়তো আরও বেশি ভালো হবে।”

সৈকত আলি, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব 

“আমাদের দল অনেক ভালো হয়েছে। দলে তরুণ খেলোয়াড় আছে আবার অভিজ্ঞ ক্রিকটারও আছে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে একটা ভালো কম্বিনশেন আছে আমাদের। আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমাদের সব খেলোয়াড় সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। মাঠে গিয়ে যারা ভালো খেলতে পারবে, তারাই জিতবে। তবে লক্ষ্য অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া।”

জাওয়াদ মোহাম্মদ রুয়েন, সিটি ক্লাব

“১৩ বছর পর আবার প্রিমিয়ার লিগে খেলবে সিটি ক্লাব। দলটা আসলে তারুণ্য নির্ভর। পরিচিত মুখ কম, অপরিচিত মুখই বেশি। প্রথম বিভাগ ও প্রিমিয়ার লিগের কিছু তরুণ খেলোয়াড় নিয়ে এই দল গোছানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী, ভালো কিছু করব।” 

“সব খেলোয়াড়েরই ইচ্ছা থাকে, সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার। তাদের কাছ থেকে কিছু শেখার। তার অভিজ্ঞতাগুলো নেওয়ার। দলে যত খেলোয়াড় আছি, আমাদের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ যে, আমরা বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলব। তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারব। আমরাও চাইব, মাঠে আমাদের সেরা পারফরম্যান্সটা যেন দেখাতে পারি।”

“আমি ব্যাটিং অলরাউন্ডার। অবশ্যই চাইব, বড় বড় বোলারদের বল খেলতে। এক সময় টিভিতে দেখেছি খেলা, আর এখন তাদের মুখোমুখি হব, এ নিয়ে আমি খুব রোমাঞ্চিত। আমি যেহেতু মিডল অর্ডারে ব্যাট করি, বাংলাদেশের সেরা সেরা স্পিনাররা সে সময় বোলিং করবে। তো সবার বলই খেলতে হবে। আশা করি, আমার সেরা চেষ্টাটাই করব।”