লঙ্কানদের সামনে ভারতের পাহাড়সম লক্ষ্য

প্রথম ইনিংসেই মিলল দেড়শর কাছাকাছি লিড। পরে রিশাভ পান্তের রেকর্ড গড়া ফিফটি ও শ্রেয়াস আইয়ারের কার্যকর ইনিংসে বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল ভারত। প্রতিপক্ষের পাহাড়সম রান তাড়ার শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2022, 05:36 PM
Updated : 13 March 2022, 05:36 PM

বেঙ্গালুরুতে দিবা-রাত্রির টেস্টের দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কাকে ১০৯ রানে থামিয়ে দিয়ে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে লিড নেয় ভারত।  পরে ৯ উইকেটে ৩০৩ রানে ঘোষণা করে দ্বিতীয় ইনিংস। সফরকারীদের সামনে ছুঁড়ে দেয় ৪৪৭ রানের বিশাল লক্ষ্য।

রান তাড়ায় লাহিরু থিরিমান্নেকে হারিয়ে ২৮ রান নিয়ে রোববারের খেলা শেষ করেছে লঙ্কানরা। জয়ের জন্য এখনও তাদের দরকার ৪১৯ রান। ভারতের চাই আর ৯ উইকেট।

ভারতের বিপক্ষে দেড়শ রানও তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই শ্রীলঙ্কার। সব দল মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, সেটাও ১৯৭৭ সালে।

ছবি: বিসিসিআই

দ্বিতীয় দিনে উইকেট অনুমিতভাবেই ছিল স্পিনারদের জন্য সহায়ক। বলা যায়, ব্যাটিংয়ের জন্য সময়ের সঙ্গে হয়ে উঠেছে আরও ভয়ঙ্কর। দুই দল মিলে এদিন উইকেট পড়েছে ১৪টি। তাই প্রচুর সময় থাকলেও শ্রীলঙ্কার জয়ের বাস্তবিক সম্ভাবনা খুবই কম। প্রথম ম‍্যাচ তিন দিনেই হারা দলটি কতটা লড়াই করতে পারে, সেটাই দেখার। 
স্পিন স্বর্গে অবশ্য দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিয়েছেন পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। প্রথম ইনিংসে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারে অষ্টমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেও প্রথমবার ঘরের মাঠে এই অর্জন ধরা দিল তার হাতে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগরদের একজন পান্ত ৩১ বলে করেন ৫০ রান। গড়েন টেস্টে ভারতের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। শ্রেয়াসের ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রান।
দিনের প্রথম দুই বলেই বুমরাহকে চার মেরে ভালো শুরুর আভাস দেন নিরোশান ডিকভেলা। কিন্তু এরপর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ৬ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে খেলতে নামা লঙ্কানরা গুটিয়ে যায় স্রেফ ৩৫ বলে।
পরপর দুই ওভারে লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ও ডিকভেলাকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন বুমরাহ। তার বাউন্সারে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানই।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ক্যারম বলে বোল্ড হন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা সুরঙ্গা লাকমল। অফ স্পিনারের পরের ওভারে বিশ্ব ফার্নান্দো স্টাম্পড হলে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
বড় রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের শুরুটা খারাপ হয়নি। রোহিত শর্মা ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪২ রান। মাঝে ১৮ রানে একবার জীবন পান ভারত অধিনায়ক। এম্বুলদেনিয়ার বলে স্লিপে তার ক্যাচ নিতে পারেননি থিরিমান্নে।

ছবি: বিসিসিআই

এম্বুলদেনিয়ার বাঁহাতি স্পিনেই শেষ পর্যন্ত ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মায়াঙ্ক (২২)। 
হনুমা বিহারিকে নিয়ে দলের রান বাড়ান রোহিত। দুইজনের জুটি পঞ্চাশ পেরুতেই ফিফটির দুয়ারে থাকা রোহিত ফেরেন সাজঘরে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন লং-অনে, করেন ৪ চারে ৪৬ রান।
প্রাভিন জয়াবিক্রমার পরপর দুই ওভারে আউট হন বিহারি ও বিরাট কোহলি। বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন বিহারি। প্রথম ইনিংসের মতো পিচে পড়ে নিচু হয়ে যাওয়া বলে এলবিডব্লিউ হন কোহলি।
নেমেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন পান্ত। জয়াবিক্রমাকে ছক্কায় উড়িয়ে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যান। পরে ধনাঞ্জয়াকে টানা মারেন একটি করে চার-ছক্কা।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পান্ত ফিফটিতে পৌঁছে যান ২৮ বলেই। রেকর্ড রাখা সম্ভব হয়েছে এমন সব ম্যাচের হিসেবে ভারতের হয়ে টেস্টে যা দ্রুততম। দেশটির হয়ে এতদিন সবচেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ডটি ছিল কপিল দেবের, ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেছিলেন এই অলরাউন্ডার।

দুই বল পর জয়াবিক্রমাকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন পান্ত। তার ২ ছক্কা ও ৭ চারের ঝড়ো ইনিংসটি সহজ ক্যাচে থামান বোলার নিজেই।

এরপর দলকে টানেন রবীন্দ্র জাদেজা ও শ্রেয়াস। তাদের ৬৩ রানের জুটিতে আড়াইশর কাছে পৌঁছে যায় ভারতের রান। ৬৯ বলে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি করেন শ্রেয়াস। প্রথম ইনিংসে ৯২ রানে আউট হন তিনি।

বিশ্ব ফার্নান্দোর ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে জাদেজা বোল্ড হলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। অশ্বিনকে টিকতে দেননি জয়াবিক্রমা। পরের ওভারেই ৯ চারে ৬৭ রান করা শ্রেয়াসকে এলবিডব্লিউ করে থামান এম্বুলদেনিয়া।  

আকসার প্যাটেল ফিরলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ভারত। প্রতিপক্ষের সামনে ছুঁড়ে দেয় সাড়ে চারশ রানের লক্ষ্য।

ছবি: বিসিসিআই

শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জয়াবিক্রমা। তিনটি প্রাপ্তি এম্বুলদেনিয়ার।
পাহাড়সম রান তাড়ায় তৃতীয় বলে থিরিমান্নেকে হারায় শ্রীলঙ্কা। বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শূন্য রানে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার। দিনের শেষ ৩৯ বল নিরাপদেই কাটিয়ে দেন দিমুথ করুনারত্নে ও কুসল মেন্ডিস। ১০ রানে খেলছেন অধিনায়ক করুনারত্নে, মেন্ডিস ১৬ রানে। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ২৫২ 
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৫.৫ ওভারে ১০৯ (আগের দিন ৮৬/৬) (ডিকভেলা ২১, এম্বুলদেনিয়া ১, লাকমল ৫, জয়াবিক্রমা ১*, বিশ্ব ৮; বুমরাহ ১০-৪-২৪-৫, অশ্বিন ৮.৫-১-৩০-২, শামি ৬-১-১৮-২, জাদেজা ৬-১-১৫-০, আকসার ৫-১-২১-১)
ভারত ২য় ইনিংস: ৬৮.৫ ওভারে ৩০৩/৯ ডিক্লে. (মায়াঙ্ক ২২, রোহিত ৪৬, বিহারি ৩৫, কোহলি ১৩, পান্ত ৫০, শ্রেয়াস ৬৭, জাদেজা ২২, অশ্বিন ১৩, আকসার ৯, শামি ১৬*; লাকমল ১০-২-৩৪-০, এম্বুলদেনিয়া ২০.৫-১-৮৭-৩, বিশ্ব ১০-২-৪৮-১, ধনাঞ্জয়া ৯-০-৪৭-১, জয়াবিক্রমা ১৯-২-৭৮-৪)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৪৭) ৭ ওভারে ২৮/১ (থিরিমান্নে ০, করুনারত্নে ১০*, মেন্ডিস ১৬*; বুমরাহ ৩-১-৯-১, শামি ৩-০-১৩-০, অশ্বিন ১-০-৪-০)